ইসরায়েলি হামলায় রক্তাক্ত গাজা

ইসরায়েলি বিমান হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া একটি বাড়ি। গতকাল গাজা উপত্যকার খান ইউনিস এলাকায়।  ছবি: এএফপি
ইসরায়েলি বিমান হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া একটি বাড়ি। গতকাল গাজা উপত্যকার খান ইউনিস এলাকায়। ছবি: এএফপি

ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলায় রক্তাক্ত হলো ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা। গত মঙ্গলবার থেকে গতকাল বুধবার দফায় দফায় হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে অন্তত ২৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর জবাবে ফিলিস্তিন থেকে ইসলায়েলে রকেট হামলা চালানো হয়। এসব হামলায় ইসরায়েলে কোনো হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কি না, তা জানা যায়নি। সম্প্রাতিক সময়ে ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা এটি। 

 নতুন করে ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের সংঘর্ষ শুরু হয় মঙ্গলবার সকালে। ওই দিন গাজা উপত্যকার একটি বাড়িতে ইসরায়েলের বিমান হামলায় নিহত হন ফিলিস্তিনের ইসলামপন্থী সংগঠন ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদির (পিআইজে) সশস্ত্র শাখা আল কুদস ব্রিগেডসের কমান্ডার বাহা আল-আতা ও তাঁর স্ত্রী। ওই হামলায় ওই দম্পতির তিন সন্তান ও কয়েকজন প্রতিবেশী আহত হন। এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতে গাজা থেকে বেশ কিছু রকেট ছোড়া হয় ইসরায়েলে। 

গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেছেন, ফিলিস্তিনের দিক থেকে রকেট হামলার জবাব দিতে গাজায় বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে ডজনের পর ডজন বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। মঙ্গলবার ও বুধবার দফায় দফায় চালানো এসব হামলায় সব মিলিয়ে ২৪ জনের মতো মানুষ নিহত হয়েছেন। তবে ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফি আল-কিদরা বলেছেন, সংঘাত শুরুর পর থেকে ২২ জন নিহত এবং ৬৯ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে গতকাল অন্তত ১২ জন প্রাণ হারান ইসরায়েলের হামলায়। বাকিরা নিহত হন আগের দিনের হামলায়। তবে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

>

অন্তত ২৪ জন নিহত। আরও বড় হামলার হুমকি ইসরায়েলের। লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা ইসলামিক জিহাদের

ইসরায়েলের সেনা কর্মকর্তারা বলেছেন, মঙ্গলবার রাতভর ইসরায়েলে রকেট হামলা হয়। ফিলিস্তিন থেকে এসব রকেট ছোড়া হয়। গতকাল খুব সকালেও সেই ধারা অব্যাহত থাকে। গাজার জিহাদিদের ছোড়া সেসব রকেট ইসরায়েলের আয়রন ডোম ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে আকাশে ধ্বংস করা হয়। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলেছে, গতকাল দুপুরে ৫০টি রকেট নিক্ষেপ করা হয়। এ নিয়ে মঙ্গলবার সকাল থেকে ২৫০টির বেশি রকেট ছোড়া হয় ইসরায়েলে।

গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেছেন, গাজা সিটিতে নিহত ছয়জনের লাশ গতকাল খুব সকালে শিফা হাসপাতালে নেওয়া হয় ট্যাক্সি ও অ্যাম্বুলেন্সে করে। এ সময় আত্মীয়স্বজনের আহাজারিতে হাসপাতালের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। নিহত সবাই বেসামরিক নাগরিক। হাসপাতালে উপস্থিত পরিবারের সদস্যরা জানান, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে বাবা-ছেলেও রয়েছেন। নিহত ওই বাবার আরেক ছেলে গুরুতর আহত হয়েছেন। এ সময় একজন স্বজন চিৎকার করে বলেন, ‘তারা (ইসরায়েল) এটা শুরু করেছে। আমরা যুদ্ধ চাই না।’

গাজার বিদ্যালয় ও বেশির ভাগ সরকারি দপ্তর গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো বন্ধ রয়েছে। ইসরায়েলি হামলার কারণে গাজার জনপদে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র গতকাল বলেন, তাঁরা ইসলামি জিহাদের স্থাপনা লক্ষ্য করে আবারও হামলা শুরু করেছেন। রকেট ছোড়া হয় এমন অন্তত তিনটি স্থানে বিমান হামলা চালিয়েছেন তাঁরা।

ইসরায়েলে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘আমরা সংঘাত চাই না। কিন্তু আমাদের ওপর প্রতিটি ভয়াবহ হামলার জবাব দিচ্ছি আমরা।’ তিনি আরও বলেন, ইসলামি জিহাদের রকেট হামলা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। তা না হলে আরও বড় ধরনের হামলা চালানো হবে গাজায়।

ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত এক ফিলিস্তিনির স্বজনের আহাজারি। গতকাল গাজা উপত্যকার শিফা হাসপাতালে।  ছবি: রয়টার্স
ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত এক ফিলিস্তিনির স্বজনের আহাজারি। গতকাল গাজা উপত্যকার শিফা হাসপাতালে। ছবি: রয়টার্স

ইসরায়েল গাজা উপত্যকা দখলে নেয় ১৯৬৭ সালে। কিন্তু এক চুক্তির মাধ্যমে ২০০৫ সালে সেনা প্রত্যাহার করে নেয় দেশটি। ২০০৭ সাল থেকে গাজার নিয়ন্ত্রণ হামাসের হাতে।

একটি কূটনৈতিক সূত্র বলেছে, ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যে নতুন করে শুরু হওয়া লড়াই থামাতে আলোচনার জন্য গতকাল রাতে মিসরের রাজধানী কায়রোয় পৌঁছানোর কথা ছিল জাতিসংঘের বিশেষ দূত নিকোলাই ম্লাদনভের। ওই আলোচনায় সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র সতর্ক করে বলেছে, ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সংঘাত ইতিমধ্যে খারাপ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এটা এখনই মিটিয়ে না ফেললে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

তবে ইসরায়লের সঙ্গে কোনো রকম শান্তিচুক্তিতে যেতে রাজি নয় ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদি। সংগঠনটির মুখপাত্র মুসাব আল-বাড়ায়েম বলেন, ইসরায়েলের সঙ্গে সবকিছু মিটিয়ে ফেলতে তাঁরা আগ্রহী নন। তাঁদের কমান্ডারকে হত্যার জবাব তাঁরা ইসরায়েলকে হামলার মাধ্যমে দেবেন।

ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের এক মুখপাত্র গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। এ ধরনের হামলা অবিলম্বে বন্ধ করতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।