ভাইরাল ছবির আসল গল্পটা যেমন

খাবারের বাটি হাতে দিব্যার এভাবে দাঁড়িয়ে থাকার ছবিটি ভাইরাল হয়। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
খাবারের বাটি হাতে দিব্যার এভাবে দাঁড়িয়ে থাকার ছবিটি ভাইরাল হয়। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের হায়দরাবাদ এলাকার একটি স্কুলে পাঁচ বছরের এক শিশুর ছবি ভাইরাল হয়েছে। খাবারের বাটি হাতে লাজুক ভঙ্গিতে দিব্যা নামের ওই শিশুকে স্থানীয় সরকারি স্কুলের শ্রেণিকক্ষে উঁকি দিতে দেখা গেছে।

তেলেগু পত্রিকায় ৭ নভেম্বর দিব্যার হৃদয়স্পর্শী ছবিটি প্রকাশিত হয়। ছবির ক্যাপশন ছিল ‘ক্ষুধার্তের চাহনি’ (তেলেগু থেকে ভাষান্তরিত)।

শিশু অধিকারকর্মীরা ছবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শেয়ার করেন। দুঃখ প্রকাশ করে বলা হয়, এভাবে শিশুরা খাবার ও শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

ভাইরাল ছবিটি এতটাই আলোড়ন তোলে যে পরের দিন স্কুলটি দিব্যাকে তাদের তালিকাভুক্ত করে।

তবে মেয়ের এই ভাইরাল ছবিতে বিব্রত বোধ করেছেন তার বাবা এম লক্ষ্মণ ও মা যশোদা। তাঁরা পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করেন।

এম লক্ষ্মণ বিবিসিকে বলেন, ‘ছবিটি দেখার পর আমি খুব দুঃখিত হয়েছি। দিব্যার মা-বাবা রয়েছে। আমরা তার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য কঠোর পরিশ্রম করছি। কিন্তু ছবিতে তাকে ক্ষুধার্ত ও অনাথ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।’

লক্ষ্মণ আরও বলেন, দিব্যার ছয় বছর বয়স হওয়া পর্যন্ত তিনি অপেক্ষা করছিলেন। ছয় বছর হলে তিনি দিব্যাকে সরকারি হোস্টেলে ভর্তি করাবেন। সেখানে থেকে তাঁর আরও দুই মেয়ে পড়াশোনা করে। লক্ষ্মণ ও যশোদা দম্পতির আরও এক ছেলে রয়েছে। সে স্কুলের লেখাপড়া শেষ করে কলেজে ভর্তির জন্য আবেদন করেছে।

হায়দরাবাদ শহরের কেন্দ্রস্থলে এক কক্ষের একটি বাড়িতে দিব্যা ও তার মা-বাবা বসবাস করেন। সরকারি স্কুল থেকে দিব্যাদের বস্তিটি ১০০ মিটার দূরে। ওই বস্তিতে যারা বাস করত, বেশির ভাগ ছিল দিনমজুর। বস্তিবাসীর সন্তানেরা কাছের স্কুলটিতে পড়াশোনা করত।

লক্ষ্মণ বলেন, তাঁর উপার্জন মাসে ১০ হাজার রুপি। এই অর্থ দিয়ে নিজেদের খাবার ও কাপড় কেনেন। শিশুদের জন্য বিনা মূল্যে শিক্ষার ব্যবস্থা করেছে সরকার। এ কারণেই ছেলেমেয়েরা সরকারি স্কুলে লেখাপড়া করে।

লক্ষ্মণ আরও বলেন, ‘আমি কখনো চাই না আমার ছেলেমেয়ের জীবন আমার মতো হোক। এ কারণে আমি সবার স্কুলে যাওয়া নিশ্চিত করেছি।’ লক্ষ্মণ বলেন, দিব্যার ওই ভাইরাল ছবি দেখে তিনি কষ্ট পেয়েছেন। কারণ, তিনি তাঁর ভাইয়ের পাঁচ সন্তানেরও দেখাশোনা করেন।

দিব্যা কেন সরকারি ওই স্কুলের বাইরে বাটি হাতে দাঁড়িয়ে ছিল, তা জানতে চাইলে লক্ষ্মণ বলেন, বস্তির ছোট শিশুরা দুপুরের খাবার সময় ওই স্কুলে যায়। কারণ, সেখানে বিনা মূল্যে দুপুরের খাবার (মিড ডে মিল কর্মসূচি হিসেবে প্রচলিত) দেওয়া হয়। স্কুলপড়ুয়া বড় ভাইবোন সেখানে পড়ে। তাদের কাছ থেকে শুনে দিব্যা বাটি হাতে সেখানে খাবারের জন্য গিয়েছিল। দিব্যা প্রতিদিন সেখানে যায় না। তবে সে ওই দিন সেখানে গিয়েছিল। এ সময় কেউ তার ছবি তুলেছিল।

স্কুলের শিক্ষকেরা জানান, কয়েকজন শিশু বাড়ি থেকে দুপুরের খাবার নিয়ে আসে। তাই স্কুলের মিড ডে মিলের বেঁচে যাওয়া খাবার অন্য ছোট শিশুদের দেওয়া হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, শিশু তো শিশুই। এখানে শিশুদের জন্য কোনো দিবাযত্ন কেন্দ্র নেই। তাই তারা স্কুলের আশপাশেই বেশি ঘোরাফেরা করে।

বস্তিতে লক্ষ্মণ ও অন্য বাসিন্দাদের বড় সমস্যা হলো দিবাযত্ন কেন্দ্র না থাকা। দিবাযত্ন কেন্দ্রের অভাবে অনেকেই শিশুদের নিরাপদে কোথাও রেখে কাজে যেতে পারেন না।

শিক্ষকেরা বলছেন, দিব্যার এই ছবি প্রকাশের পর স্কুলের অবস্থার উন্নতি হবে।