ব্রেক্সিট গণভোটেও ছিল রাশিয়ার হস্তক্ষেপ

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ছবি: রয়টার্স
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ছবি: রয়টার্স

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের প্রসঙ্গ এখন পুরোনো। এখন এই একই ধরনের হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে যুক্তরাজ্যেও। বলা হচ্ছে, ২০১৬ সালে হওয়া ব্রেক্সিট গণভোটেও হস্তক্ষেপ করেছিল রাশিয়া। ব্রিটিশ রাজনীতিতে রুশ প্রভাব নিয়ে করা একটি পার্লামেন্টারি তদন্ত কমিটির নেওয়া সাক্ষ্যে অন্তত এমন তথ্যই উঠে এসেছে। ওই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ফাঁস হলে এ তথ্য বাইরে আসে।

আজ বুধবার এ সম্পর্কিত প্রতিবেদনে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন বলেছে, ব্রিটিশ প্রশাসনও রুশ প্রভাবের বাইরে নয়। ব্রিটিশ প্রশাসনের ওপর রাশিয়ার গভীর প্রভাবের বিষয়টি জানা সত্ত্বেও এর বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে দেশটির সরকার। ব্রিটিশ রাজনীতিতে রুশ অনুপ্রবেশ নিয়ে করা পার্লামেন্টারি তদন্ত কমিটির গৃহীত এক সাক্ষ্যে এমন কথা জানা গেছে।

একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে সিএনএন জানায়, বহুদলীয় প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা কমিটি তদন্ত চলাকালে জানতে পারে যে, কূটনীতিক, আইনজীবী, আইনপ্রণেতা থেকে শুরু করে ব্রিটিশ রাজনীতিতে প্রভাবক হিসেবে কাজ করে এমন ব্যক্তিদের সঙ্গে বন্ধুত্বের সুবাদে রাশিয়া তার জাল বিস্তার করেছে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন এখনো প্রকাশ করা হয়নি। এরই মধ্যে ওই প্রতিবেদনের যতটুকু তথ্য ফাঁস হয়েছে, তাতেই ব্রিটিশ রাজনীতি উত্তাল হয়ে উঠেছে।

অবশ্য ব্রিটিশ রাজনীতিতে রুশ হস্তক্ষেপের বিষয়টি এর আগেই প্রতিবেদন প্রকাশ করে যুক্তরাজ্যভিত্তিক পত্রিকা টাইম। ১৭ নভেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদনে টাইম জানায়, ব্রিটিশ রাজনীতিতে রুশ হস্তক্ষেপ সম্পর্কিত প্রতিবেদন প্রকাশ করতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। এই ব্যর্থতার দায় গিয়ে চেপেছে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের ঘাড়ে। আগামী মাসে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের আগে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করাটা জরুরি ছিল বলে মনে করছেন রাজনীতিকেরা। কারণ, রুশ হস্তক্ষেপের শঙ্কা ওই নির্বাচনেও থেকে যাচ্ছে।

অজ্ঞাত সূত্রের কথা উল্লেখ করে টাইমস অব লন্ডন জানিয়েছে, ব্রিটিশ পার্লামেন্টের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের উপসংহারে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বের হয়ে যাওয়া, না যাওয়া নিয়ে গৃহীত গণভোটে রুশ হস্তক্ষেপের প্রভাব পড়েছিল, যদিও তার মাত্রা ‘অপরিমাপযোগ্য’। সে সময় রুশ সাইটের মাধ্যমে বেশ কিছু তথ্য প্রচার করা হয়, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। গণভোটে এসব তথ্যের সম্ভাব্য প্রভাব নিরূপণ ও রুশ হস্তক্ষেপের ঝুঁকি মোকাবিলায় ব্রিটিশ গোয়েন্দা বাহিনী রীতিমতো ব্যর্থ হয়েছে।

এ বিষয়ে বিরোধী লেবার পার্টির পররাষ্ট্রবিষয়ক মুখপাত্র এমিলি থর্নবেরি বলেন, ফাঁস হওয়া তথ্য অনেক প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে, যার সুরাহা হওয়া উচিত। এই প্রতিবেদন ঘিরে যেসব সন্দেহ ও গুঞ্জনের জন্ম হচ্ছে, তা নিরসনে দ্রুততম সময়ে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা উচিত বরিস জনসনের। যদি তা না করা হয়, মানুষ প্রশ্ন করতেই থাকবে যে, ‘ব্রিটিশ মানুষের কাছ থেকে তিনি কী লুকাচ্ছেন এবং তা কেন?’
এদিকে ওই প্রতিবেদন সম্পর্কে বরিস সরকার বলছে, প্রতিবেদনটি প্রকাশের আগে তা আরও পর্যালোচনা করা জরুরি। এটি নির্বাচনের পর প্রকাশ করা হবে বলেও বলা হচ্ছে।

সমালোচকেরা বলছেন, ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি রাশিয়ার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের তহবিল পেয়েছে বলেই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হচ্ছে না। আসছে নির্বাচনে দলটি সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য লড়বে, যাতে তারা পার্লামেন্টের মাধ্যমে ব্রেক্সিট চুক্তি পাস করিয়ে নিতে পারে।
তবে নিরাপত্তামন্ত্রী ব্র্যান্ডন লুইস এ ধরনের সমালোচনা উড়িয়ে দিয়েছেন।