যুক্তরাজ্যের চরিত্র বদলে দেওয়ার অঙ্গীকার করবিনের

নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করছেন বামধারার রাজনীতিক জেরেমি করবিন। বার্মিংহাম, যুক্তরাজ্য, ২১ নভেম্বর। ছবি: এএফপি
নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করছেন বামধারার রাজনীতিক জেরেমি করবিন। বার্মিংহাম, যুক্তরাজ্য, ২১ নভেম্বর। ছবি: এএফপি

ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে লেবার পার্টির ইশতেহার ঘোষণা করেছেন বামধারার রাজনীতিক জেরেমি করবিন। নির্বাচনে বিজয়ী হলে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পরিবহন ও টেলিযোগাযোগ কোম্পানিকে (ব্রিটিশ টেলিকম) রাষ্ট্রীয় মালিকানায় ফিরিয়ে জনগণের দৈনন্দিন খরচ কমিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

আজ বৃহস্পতিবার বার্মিংহাম শহরে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ইশতেহার ঘোষণা করা হয়। লেবার দলের ইশতেহারকে যুগান্তকারী ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী আখ্যা দিয়ে মার্ক্সবাদী হিসেবে পরিচিত করবিন বলেন, সম্পদের ওপর ধনী ও বড় কোম্পানিগুলোর নিয়ন্ত্রণ কেড়ে নিয়ে তা সাধারণ জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে রাষ্ট্রের চরিত্র আমূল বদলে দিতে চান তিনি। তাঁর দলের এবার নির্বাচনী স্লোগান ‘ইটস টাইম ফর রিয়েল চেঞ্জ’ (প্রকৃত পরিবর্তনের এটাই সময়)।

ধনিক শ্রেণি, বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও তেল কোম্পানিগুলোর ওপর কর বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন এই লেবার নেতা। আর সেই করের অর্থ জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা, আবাসন এবং যুবকদের প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানে বিনিয়োগ করবেন বলে জানিয়েছেন। জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ঘণ্টাপ্রতি ৮ পাউন্ড ২১ পেন্স থেকে বাড়িয়ে ১০ পাউন্ডে (প্রায় ১১শ টাকা) উন্নীত করবেন। বিনা মূল্যে ঘরে ঘরে ইন্টারনেট সেবা দেবেন। কোম্পানির নীতি নির্ধারণে কর্মীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবেন। পরিচালকদের বেতন-বোনাস মিলিয়ে আয়ের সীমা সাধারণ কর্মীর ২০ গুন বা বছরে ৩ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ড নির্ধারণ করে দেবেন।

এ ছাড়া ইশতেহারে আরও বলা হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশকে কার্বন নিঃসরণমুক্ত করবে লেবার পার্টি। সে লক্ষ্যে বৈদ্যুতিক গাড়ি ক্রয়ের জন্য জনগণকে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার ঘোষণা আছে। আর এ কাজের জন্য ২৫০ বিলিয়ন পাউন্ডের সবুজায়ন তহবিল গঠন করা হবে। ধনীদের ওপর বাড়তি করারোপ এবং ঋণের অর্থে আগামী এক দশকে প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণ করবে লেবার পার্টি।

আর নির্বাচনের অন্যতম আলোচিত ইস্যু ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ (ব্রেক্সিট) বিষয়ে পুনরায় গণভোটের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন করবিন। দেশের মানুষের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আগামী তিন সপ্তাহের নির্বাচনী প্রচারে ধনী প্রভাবশালী গোষ্ঠী এবং তাদের সমর্থকেরা আপনাদের বলবে, এসব প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন অসম্ভব। আপনি যদি প্রকৃত পরিবর্তন না চান, তবে ধনীরা কেন চাইবে? বর্তমান নিয়ম তো তাদের জন্য ভালোই কাজ করছে।” বামপন্থী এই নেতা বলেন, “তাঁরা (ধনিক শ্রেণি) জানে আমরা যা বলছি তা বাস্তবায়ন করে ছাড়ব। এ জন্য তাঁরা আমাদের বিজয় ঠেকাতে উঠেপড়ে লেগেছে।”

কনজারভেটিভ দল করবিনের ইশতেহারের সমালোচনা করে বলেছে, ব্রেক্সিট নিয়ে সৃষ্ট অচলাবস্থা কাটাতে এই নির্বাচন। ব্রেক্সিট নিয়ে স্পষ্ট অবস্থান নিতে ব্যর্থ করবিন জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে সরানোর চেষ্টা করছেন।

লেবার পার্টি আশা করছে জনবান্ধব এই ইশতেহার ২০১০ সালের পর তাদের আবার ক্ষমতায় ফেরাতে সক্ষম হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিভিন্ন জরিপ আগামী ১২ ডিসেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে লেবার পার্টির পরাজয় ইঙ্গিত করছে।