কংগ্রেস-এনসিপির সমর্থনে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন শিবসেনার উদ্ধব

উদ্ধব ঠাকরে। রয়টার্স ফাইল ছবি
উদ্ধব ঠাকরে। রয়টার্স ফাইল ছবি

শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরেই হতে চলেছেন মহারাষ্ট্রের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী। এবং সম্ভবত তা পুরো পাঁচ বছরের জন্য ও সর্বসম্মতভাবে। আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় মুম্বাইয়ে তিন দলের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে তা জানানো হবে। বিভিন্ন দলীয় সূত্রে এই কথা জানা গেছে।

সরকার গঠনের এই তৎপরতার জন্য রাজ্যপাল শনিবার দিল্লি সফর বাতিল করেছেন। মুম্বাই ছেড়ে রাজ্যের অন্যত্র যাওয়া স্থগিত রেখেছেন এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ারও। বৈঠক থেকে বেরিয়ে পাওয়ার বলেন, সরকার গঠনের দাবি কবে করা হবে তা শনিবার ঠিক হবে। কাল শনিবারই তিন দলের পক্ষে সংবাদ সম্মেলন করা হবে।

শুক্রবারের বৈঠকেই সব প্রশ্নের সমাধান হবে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু তা হয়নি। এর অর্থ, কিছু কিছু বিষয় নিশ্চিতই অমীমাংসিত রয়ে গেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে শরদ পাওয়ার দিল্লি থেকে মুম্বাই ফেরার পর তাঁর সঙ্গে দেখা করেন শিবসেনা সভাপতি উদ্ধব ঠাকরে। সঙ্গে ছিলেন তাঁর বিধায়ক পুত্র আদিত্য। সরকার গঠনের ক্ষেত্রে কংগ্রেসের যাবতীয় আড়ষ্টতা কেটে যাওয়ার খবর পাওয়ার পর সেটাই ছিল তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ। সেই বৈঠকে উদ্ধব ঠাকরেকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ গ্রহণ করতে অনুরোধ করেন শরদ পাওয়ারই। তাঁর যুক্তি, উদ্ধব মুখ্যমন্ত্রী হলে কোনো অসন্তোষ জন্ম নেবে না। তাঁর পুত্র আদিত্যও মন্ত্রী হবেন ঠিক হয়েছে। ভবিষ্যতে দলের হাল ধরার জন্য এটাই হবে আদিত্যর হাতেখড়ির বছর।

শিবসেনার প্রতিষ্ঠাতা বাল ঠাকরে কোনো দিন নির্বাচনে দাঁড়াননি। উদ্ধবও নন। কিন্তু পারিবারিক প্রথা ভেঙে আদিত্য এবার ভোটে দাঁড়িয়ে জিতেছেন। মুখ্যমন্ত্রী হলে উদ্ধবকে হয় উপনির্বাচনে দাঁড়িয়ে জিততে হবে, নতুবা বিধান পরিষদের (রাজ্যে বিধানসভার উচ্চ কক্ষ) সদস্য হতে হবে।

আজ সকালে দলীয় বিধায়কদের নিজের বাসভবন ‘মাতোশ্রী’তে আসতে বলেন উদ্ধব। রাজনৈতিক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করার পর বিধায়কদের বলা হয়, কেউ যেন আগামী কয়েক দিন মুম্বাইয়ের বাইরে না যান। বিধায়কদের সবাই বলেন, তাঁরা দলের শীর্ষনেতা উদ্ধবকেই মুখ্যমন্ত্রী পদে দেখতে চান। বৈঠকের পর দলের মুখপাত্র সঞ্জয় রাউত সাংবাদিকদের বলেন, মুখ্যমন্ত্রী তাঁদেরই। প্রায় একই সময় কংগ্রেস নেতা মানিকরাও ঠাকরে জানিয়ে দেন, এনসিপি কখনো মুখ্যমন্ত্রিত্বের দাবি জানায়নি।

বেলা দুইটা নাগাদ এনসিপি–কংগ্রেস নেতারা মিলিত হন জোটের ছোট শরিকদের সঙ্গে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে কেন একজোট হয়ে বিজেপিকে রোখা প্রয়োজন বিভিন্ন নেতা তা ব্যাখ্যা করেন। সন্ধ্যায় তিন দলের নেতারা মিলিত হন নেহরু সায়েন্স সেন্টারে। সেই বৈঠকে যাওয়ার আগে কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খাগড়ে জানান, আলোচনার পর তাঁরা সাংবাদিকদের সঙ্গে মিলিত হবেন। ততক্ষণে জানাজানি হয়ে যায়, সম্ভব হলে শুক্রবার রাতেই তিন দলের নেতারা রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে সরকার গঠনের দাবি জানাবেন।

মহারাষ্ট্র হাতছাড়া হওয়ায় বিজেপি অবশ্যই হতাশ। সেই হতাশা ঝরেও পড়েছে রাজ্যের শীর্ষ নেতা এবং সাবেক সর্বভারতীয় সভাপতি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গড়কড়ির কথায়। শুক্রবার ঝাড়খন্ডে তিনি বলেন, হিন্দুত্বই বিজেপি ও শিবসেনাকে কাছাকাছি এনেছিল। এখনো দুই দল সেই অদর্শচ্যুত হয়নি। তিনি বলেন, তিন দলের এই জোট স্রেফ বিজেপিকে ক্ষমতায় আসতে না দেওয়ার জন্য তৈরি। চরম সুবিধাবাদী জোট এটা। এই জোট ভেঙে যাওয়া দেশ তো বটেই, মহারাষ্ট্রের পক্ষে খুবই খারাপ। হতাশ নিতিন বলেন, এই জোট বড়জোর ছয়–আট মাস টিকবে।

নতুন এই জোটের নাম ঠিক হয়েছে ‘মহারাষ্ট্র বিকাশ আগাধি’, যার অর্থ মহারাষ্ট্র বিকাশ মঞ্চ। যৌথ ন্যূনতম কর্মসূচি মোটামুটি যা ঠিক হয়েছে তার মূল লক্ষ্য কৃষি, শিল্পসহ রাজ্যের সার্বিক বিকাশ এবং আঞ্চলিক গরিমা অক্ষুণ্ন রাখা। ধর্মনিরপেক্ষতা সম্পর্কে সহমত হওয়ার যে বিষয়টা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারত, তা সন্তর্পণে এড়ানো হয়েছে ‘দেশের সংবিধানের প্রতি আনুগত্য’ থাকার অঙ্গীকারের মাধ্যমে। কিন্তু এত কিছু সত্ত্বেও আজ রাত পর্যন্ত সব জটিলতা কাটেনি। যবনিকা উত্তোলনের জন্য আরও এক দিন অপেক্ষা করতে হবে।