ইরানে সরকার সমর্থকদের মিছিল

তেহরানে সোমবার সরকার-সমর্থকেরা মিছিল বের করে। ছবি: রয়টার্স
তেহরানে সোমবার সরকার-সমর্থকেরা মিছিল বের করে। ছবি: রয়টার্স

টানা কয়েক দিন সরকারবিরোধী বিক্ষোভের পর সোমবার তেহরানের রাস্তায় মিছিল করেছে সরকার সমর্থকেরা। গত কয়েক দিন ইরানে সরকারবিরোধী বিক্ষোভের পেছনে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে দাবি করা হয় মিছিল থেকে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে গত ১৫ নভেম্বর ইরানে বিক্ষোভ শুরু হয়। মূলত তরুণ ও শ্রমিক শ্রেণির মানুষেরাই বিক্ষোভে শামিল হন। যুক্তরাষ্ট্র আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কারণে জেরবার দেশটির জনগণ নতুন করে কোনো অর্থনৈতিক চাপ নিতে রাজি নয় বলে স্পষ্ট জানান দেওয়া হয় বিক্ষোভ থেকে। শুরুতে বিক্ষোভটি জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে হলেও ক্রমেই এর সঙ্গে দুর্নীতি দমন ও জবাবদিহি নিশ্চিতের দাবি যুক্ত হয়। সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। অন্তত ব্যাংকসহ প্রায় ১০০টি ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। বিক্ষোভকারীরা ২০০৯ সালের নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ তুললে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। বিক্ষোভ দমনে নিরাপত্তা বাহিনীর ছোড়া গুলিতে কয়েক ডজন বিক্ষোভকারী নিহত হয়।

এই বিক্ষোভের পেছনে ইরান যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও সৌদি আরবের ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে দাবি করেছে। ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের শীর্ষ কমান্ডার হোসেইন সালামি সরাসরি এ অভিযোগ তুলে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও সৌদি আরবকে সতর্ক করে দিয়েছেন।

আজ সোমবার তেহরানের রেভল্যুশনারি স্কয়ার থেকে সরকার-সমর্থকদের উদ্দেশ্যে দেওয়া বক্তব্যে সালামি বলেন, ‘আমরা ধৈর্য ধরে আছি। ইরানের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসাপরায়ণ যুক্তরাষ্ট্র, জায়নবাদী শাসকগোষ্ঠী (ইসরায়েল) ও সৌদি আরবের কর্মকাণ্ড সত্ত্বেও আমরা ধৈর্যের পরিচয় দিচ্ছি। কিন্তু সীমা লঙ্ঘন করলে, আমরা তাদের নিশ্চিহ্ন করে দেব।’

ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রদর্শিত ওই মিছিলের ফুটেজে সরকার সমর্থকদের যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়। গতকাল রোববার ইরানের সরকারবিরোধীদের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে বিবৃতি দেয় পশ্চিমা দেশগুলো। এরই প্রতিক্রিয়া হিসেবে আজ সরকার-সমর্থকদের এ মিছিল বের হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পশ্চিমা দেশগুলোর উদ্দেশে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আব্বাস মোসাভি বলেন, ‘বিদেশি শক্তিগুলোকে আমি আজকের মিছিলের দিকে তাকানোর পরামর্শ দিচ্ছি। তারা দেখুক যে, ইরানের সত্যিকারের জনগণ কারা এবং তারা কী বলছে।’

ইরান শুরু থেকেই সাম্প্রতিক এ বিক্ষোভকে পশ্চিমা ষড়যন্ত্র হিসেবে বিবেচনা করছে। দেশটির সরকার এ বিক্ষোভের পেছনে বিশেষত নির্বাসনে থাকা ব্যক্তিদের হাত রয়েছে বলে দাবি করছে। বিক্ষোভ অব্যাহত থাকলে সংশ্লিষ্টদের কঠোর সাজার আওতায় নিয়ে আসা হবে বলেও সতর্ক করে দিয়েছে দেশটির প্রশাসন।

গত ১৫ নভেম্বর বিক্ষোভ শুরুর পর ওয়াশিংটন সুস্পষ্টভাবে বিক্ষোভকারীদের পক্ষ নেয়। তবে ফ্রান্স ও জার্মানি ইরানে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে। এদিকে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে এখন পর্যন্ত শতাধিক বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে। আর নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন দ্য সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস ইন ইরান বলছে, এখন পর্যন্ত অনেকে নিহত হয়েছে। একই সঙ্গে ৪ হাজারের বেশি বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে প্রশাসন। যদিও এসব তথ্য অস্বীকার করেছে ইরান সরকার।

ইরান দাবি করছে, গত সপ্তাহের মাঝামাঝি থেকেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। তবে বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশের গাড়ি তুলে দেওয়ার কিছু ভিডিও গত দুই দিনে ছড়িয়ে পড়েছে। এই ভিডিওগুলো আগের কিনা, তা অবশ্য নিশ্চিত করতে পারেনি রয়টার্স।