কাবুলে নারী চালাচ্ছেন বাস

মাইক্রোবাসের স্টিয়ারিং হাতে আফগান নারী পারিসা হায়দারি।  ছবি: এএফপি
মাইক্রোবাসের স্টিয়ারিং হাতে আফগান নারী পারিসা হায়দারি। ছবি: এএফপি

হাই হিলকে বিদায় দিয়েছেন। পা চাপিয়েছেন গাড়ির একসেলারেটরে। এভাবেই ১০ সিটের মিনি বাস ‘পিংক শাটল’ নিয়ে এগিয়ে চলেছেন আফগান নারী পারিসা হায়দারি যানজটের শহর কাবুলে। তাঁর বাসের যাত্রীরাও সব নারী।

আফগানিস্তান একটি রক্ষণশীল দেশ। সমাজব্যবস্থা এখনো অতিপুরুষতান্ত্রিক। দেশটির পরিবহনগুলোতে চালকের আসনে প্রায় সবাই পুরুষ। তাই পারিসাকে বাস চালাতে চোখে না দেখলে লোকে হয়তো বিশ্বাসই করতে চাইত না।

পারিসা জানালেন, তাঁকে লোকেরা বিস্ময়ের চোখে দেখে, বিশেষ করে পুরুষ চালকেরা তো হতবাক। তিনি বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া পাই। কোনো কোনো চালক আমাদের পথ আটকে দেন। কেউ হর্ন বাজান। আবার কেউ পাল্লা দিয়ে গাড়ি চালান, তা–ও সড়কে গাড়ির চাপ না থাকা সত্ত্বেও।’

পারিসা আরও বলেন, তিনি গাড়ি চালানো উপভোগ করেন। এ কাজ তাঁর ভালো লাগে। নারীদের প্রধান উদ্বেগ হলো নিরাপত্তা নিয়ে। তাই এ নিয়ে কাজ করতে পেরে তিনি স্বস্তি পান। ৩৬ বছর বয়সী সাবেক বিউটিশিয়ান এবং একসময়ে টেলিভিশনে কাজ করে আসা পারিসা জানান, তাঁর সহকর্মীরা ১০০ প্রার্থী থেকে নির্বাচিত হয়েছেন।

পিংক শাটল হলো একটি পাইলট বাস প্রোগ্রাম। এর অধীনে রাজধানী কাবুলে নারী যাত্রী ও তাঁদের সন্তানদের জন্য বিশেষ বাস চালু করা হয়েছে। বাসগুলোর চালকেরাও নারী। আফগানিস্তানে পরিবহনসংকটের কারণে সড়কে বের হওয়া নারীরা প্রায়ই হয়রানির শিকার হয়ে থাকেন। এ ছাড়া ১৯৯৬ সালে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর নারীরা ঘরে থাকতে বাধ্য হয়েছিলেন। শিক্ষা ও কাজের অধিকারের সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হয়েছিলেন। এরপর ২০০১ সালে মার্কিন মদদপুষ্ট সরকার দেশটির ক্ষমতায় আসার পর লৈঙ্গিক সমতার বিষয়টি আফগানিস্তানের সংবিধানে সন্নিবেশিত হয়। যদিও নারী-পুরুষের বৈষম্য এখনো বেশ প্রকটভাবে দেখা যায় সেখানে।

কাবুলের ট্রাফিক বিভাগের পুলিশ প্রধান মোহামাদ শিনওয়ারে বলেন, কাবুলে আফগান নারীরা গাড়ি চালাচ্ছেন। এটি অবশ্যই ইতিবাচক পরিবর্তন। চালক হতে নারীদের কোনো বাধা নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

পিংক শাটল প্রকল্পের সমন্বয়কারী ওবায়দুল্লাহ আমিরি বলেন, ‘নারীদের জন্য পরিবহনের সমস্যা আমাদের রয়েছে। বিশেষ করে, কাবুলে নারীদের জন্য গণপরিবহন নেই বললেই চলে।’

আমিরি জানালেন, পাইলট প্রকল্পটি গত মে মাসে চালু হয়েছে। ইতালির এনজিও নাভ ওনাস এটি পরিচালনা করছে। আগে থেকেই অনুমোদন পাওয়া সীমিত কয়েকজন যাত্রীকে বিনা মূল্যে পরিবহনসেবাটি দেওয়া হচ্ছে। প্রকল্পটি আরও বড় করতে ইউএসএআইডি সহায়তা করছে।