পুলিশ বলেই...

হংকংয়ের একটি পার্কে মে। সব ঠিকঠাক থাকলেও জানেন না তাঁর বিয়েটা সুখকর হবে কি না। ছবি: এএফপি
হংকংয়ের একটি পার্কে মে। সব ঠিকঠাক থাকলেও জানেন না তাঁর বিয়েটা সুখকর হবে কি না। ছবি: এএফপি

অনেক দিনের প্রেম। আট বছরের। এখন বিয়ের পালা। বিয়ের স্থানও ঠিক। কেনা হয়েছে বিয়ের আংটি। চলছে পোশাকের খোঁজ। বাকি শুধু বিয়ের পিঁড়িতে বসা। কিন্তু মে শেষ পর্যন্ত সেই পিঁড়িতে বসতে পারবেন কি না, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।

হংকংয়ের চলমান রাজনৈতিক আন্দোলন থমকে দিয়েছে মের (ছদ্মনাম) জীবনের সবচেয়ে আবেগঘন মুহূর্তটি। গণতান্ত্রিক এই আন্দোলন যেমন সেখানকার স্বজনে-স্বজনে, বন্ধুতে-বন্ধুতে, প্রেমিক-প্রেমিকার সম্পর্কের মধ্যে ফাটল ধরিয়েছে, তেমনি মের বিয়ের আয়োজনেও বাগড়া দিয়েছে।

কারণ, মের পাণিপ্রার্থী একজন পুলিশ সদস্য। হংকংয়ের গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমনে চীনা সরকারের লেলিয়ে দেওয়া পেটোয়া বাহিনীর হয়েই কাজ করছেন তিনি। এটাই বাদ সেঁধেছে বিয়েতে। মের ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, এই বিয়েতে তাঁরা থাকবেন না। দুঃখ করে মে (২৮) বলছিলেন, ‘আমি কখনোই ভাবিনি যে আমার বন্ধুদের হারাব। আমি খুব দুঃখ পেয়েছি। আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু জানিয়েছে, সে আমার বিয়েতে থাকবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমি এখন বুঝতে পারছি, চলমান সংকট হংকংয়ের পুলিশ ও বাসিন্দাদের সম্পর্কের মধ্যে কতটা ফাটল ধরিয়েছে।’

অথচ হংকংয়ের এই পুলিশই একসময় প্রশংসায় ভাসত। এশিয়ার অন্য বাহিনীর জন্য তারা ছিল দৃষ্টান্ত। কিন্তু ছয় মাস ধরে তারাই এখন ঘৃণার পাত্রে পরিণত হয়েছে। আন্দোলন দমনে সাধারণ মানুষের ওপর কাঁদানে গ্যাসের শেল, রাবার বুলেট ও পেপার স্প্রে ব্যবহার করছে তারা। এমনকি মাঝেমধ্যে তাজা বুলেটেরও ব্যবহার করেছে তারা। এসবে এখন পর্যন্ত কোনো প্রাণহানির ঘটনা না ঘটলেও জখম হয়েছেন কেউ কেউ। ফলে সাধারণ মানুষের সঙ্গে পুলিশের দূরত্ব বেড়েছে এবং দিন দিন তা তিক্ততার চূড়ান্ত রূপ নিচ্ছে।

রাজনীতির কঠিন বাস্তবতায় মের ব্যক্তিগত জীবন। ২৩ নভেম্বর হংকংয়ের একটি পার্কে। ছবি: এএফপি
রাজনীতির কঠিন বাস্তবতায় মের ব্যক্তিগত জীবন। ২৩ নভেম্বর হংকংয়ের একটি পার্কে। ছবি: এএফপি

চলমান আন্দোলনের আগ পর্যন্ত মের প্রেম ঠিকঠাক মতোই চলছিল। তাঁর প্রেমিকের পেশা কখনোই আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়নি। কিন্তু এখন তাঁর বন্ধুরা দূরে সরে গেছে। তাঁর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু এখনো পীড়াপীড়ি করছে এই বিয়ে না করার জন্য। সে মেকে বলেছে, তুই এখনো বিয়ে করিসনি। তাই বিষয়টা ভেবে দেখতে পারিস। বন্ধু এ–ও বলেছে, তোর প্রেমিক পুলিশের এই অন্যায় দেখার পরও যদি ভেবে থাকে তারা কোনো ভুল করেনি, তারপরও কি তুই ভিন্ন চিন্তার একজনকে বিয়ে করবি?

অন্যদের মতো শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে মেও নিয়মিত অংশ নিয়েছেন। দেখেছেন আন্দোলনকে সহিংস রূপ নিতে। কিন্তু তাঁর মনে হয় না, তাঁর হবু বর কাউকে আঘাত করবেন। মে বলেন, ‘তাঁর (প্রেমিক) আচরণে আমার আস্থা আছে। তিনি আন্দোলনকারীদের কারও মাথায় লাঠি মারবেন না বা কাউকে আহত করবেন না।’

তবে মে স্বীকার করছেন, তাঁর প্রেমিক অন্যদের থেকে আলাদা হওয়া সত্ত্বেও তাঁদের সম্পর্ক থেকে রাজনৈতিক সংকটকে দূরে রাখাটা কঠিন হবে। একদিকে শহরের উত্তেজনা, অন্যদিকে বন্ধুদের দূরত্ব মেকে ঠেলে দিয়েছে হতাশায়। তিনি বলছিলেন, ‘এসব দেশে আমার মনে হচ্ছে আমার বিয়েটা সুখকর না–ও হতে পারে। কারণ একটাই, আমার হবু বর পুলিশ।’ তিনি বলেন, ‘আমি আবেগতাড়িত হয়ে পড়ছি। আমার কান্না দেখে তিনি (প্রেমিক) আমাকে জড়িয়ে ধরে এটা নিয়ে খুব বেশি ভাবতে নিষেধ করেন।’

এত চাপের মধ্যে মে কয়েক সপ্তাহ আগে তাঁর প্রেমিককে জানিয়ে দেন, ‘হয় তুমি পুলিশের চাকরি ছেড়ে যাও, নতুবা আমি তোমাকে ছেড়ে যাব।’

তবে বাস্তবে প্রেমিকের চাকরি বদল করাটা কঠিন বলেই মনে করেন মে। তাই তিনিও তাঁর প্রেমিককে ছেড়ে যাননি। তবে তাঁদের বিয়েটা এখনো আটকে আছে। এত কিছুর পরও তাঁদের বিয়ে হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। মে বলছেন, ‘আমার বিশ্বাস আমাদের সম্পর্ক চলবে।’ একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তিনি বলেন, ‘আমি বিষয়টা নিয়ে নিশ্চিত না হলেও অনেকটা সংকল্পবদ্ধ। কারণ, আমরা এখনো একে অপরকে ভীষণ ভালোবাসি।’ তথ্যসূত্র: এএফপি