যুক্তরাজ্যে অস্পৃশ্য ট্রাম্প

যুক্তরাজ্য সফর করছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
যুক্তরাজ্য সফর করছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন দেশটির নির্বাচনে নাক না গলাতে অনুরোধ করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। কিন্তু লন্ডনে দুই দিনের সফরে পৌঁছাতে না পৌঁছাতেই তিনি নির্বাচনে নাক গলাতে শুরু করেছেন।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সখ্য কারও অজানা নয়। যুক্তরাজ্যের আরেক রাজনীতিক ব্রেক্সিট পার্টির নেতা নাইজেল ফারাজও ট্রাম্পের প্রিয়ভাজন। তবে ট্রাম্পের ‘চক্ষুশূল’ হলেন লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন ও লন্ডনের মেয়র সাদিক খান। বরিস ও নাইজেলের সঙ্গে সখ্য থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এখন যুক্তরাজ্যে অস্পৃশ্য হয়ে উঠেছেন। কারণ, দেশটির সাধারণ নির্বাচন। ১২ ডিসেম্বর এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে যুক্তরাজ্যের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে ট্রাম্পের যেকোনো বেফাঁস মন্তব্য নির্বাচনের ফলাফলে প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা সবার। সেই আশঙ্কা থেকেই গত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী বরিস মার্কিন প্রেসিডেন্টকে নির্বাচনে নাক না গলাতে অনুরোধ করেছিলেন।

ন্যাটো জোটের সম্মেলনে যোগ দিতে গত সোমবার দুই দিনের লন্ডন সফরে যান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এই সফরকালে তিনি কী করবেন, সেটা অনুমান করা কঠিন। তবে বিগত দুটি সফরের পর একটি ধাঁচ দাঁড়িয়ে গেছে। এর আগে যখন তিনি যুক্তরাজ্যে গেছেন, তখনই বিক্ষোভ হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মীরা এসব বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন। এবার দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার চিকিৎসক ও নার্সরা বিক্ষোভের পরিকল্পনা করছেন। ট্রাম্পের আরেকটি রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে, লন্ডনে নেমেই শহরের মেয়র সাদিক খানকে আক্রমণ করা। তবে এবার এমন কিছুর আশঙ্কা কম বলেই মনে করা হচ্ছে। আবার কেউ কেউ মনে করছেন, সাদিক খানকে এবারও হয়তো ছাড় দেবেন না ট্রাম্প।

এ ছাড়া এর আগে ট্রাম্প যখনই যুক্তরাজ্যে গেছেন, তখনই দৈনিক পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দিয়ে এক ধরনের বিস্ময় সৃষ্টি করেছেন। কারণ, প্রতিটি সাক্ষাৎকারে তিনি যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে নাক গলিয়েছেন। এরপর সংবাদ সম্মেলনে সেটা ব্যাখ্যা করে হালকা করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তা তো তিনি করতেই পারেননি, বরং ঘট পাকিয়েছেন। এবার সাক্ষাৎকার না দিয়েও ঘট পাকিয়েছেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার লন্ডনে সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, যুক্তরাজ্যের নির্বাচন নিয়ে কিছু বলতে চান না তিনি। তবে বরিস জনসন যোগ্য এবং তিনি ভালো করবেন। সঙ্গে এ-ও বলেছেন, লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন প্রধানমন্ত্রী হলে তাঁর সঙ্গেও কাজ করবেন। তবে গত অক্টোবরে তিনি বলেছিলেন, করবিন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খুবই খারাপ হবেন।

সব মিলিয়ে চলতি সফরে ট্রাম্পের যেকোনো হালকা কথাও যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় ধরনের জট পাকিয়ে ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বরিসও ওয়াকিবহাল। তিনি জানেন, ট্রাম্পের যেকোনো বেফাঁস মন্তব্যের কারণে নিরপেক্ষ ভোটারদের সমর্থন বিপরীত দিকে চলে যেতে পারে। ঠিক এই আশঙ্কা থেকেই তিনি ট্রাম্পের এই সফরে তাঁকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। চলতি সপ্তাহে ট্রাম্পের সঙ্গে কোনো বৈঠকের সময়সূচিও রাখেননি তিনি। তাঁর আশা, ট্রাম্প তাঁর বিষয়ে নীরব থাকবেন। কিন্তু ট্রাম্পকে ঠেকাবে কে? গতকালের সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেই দিয়েছেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী বরিসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।