বিরোধিতা সত্ত্বেও লোকসভায় উঠল নাগরিকত্ব বিল

ছবি: রয়টার্স
ছবি: রয়টার্স

তীব্র প্রতিরোধের মুখে বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধন বিল আজ সোমবার লোকসভায় পেশ হলো। বিরোধীদের প্রতিরোধ ও প্রতিবাদের পাল্টা হিসেবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিল পেশ করে বলেন, ইতিহাস বলছে, কংগ্রেসই ধর্মের ভিত্তিতে দেশ ভাগ করেছিল। তবে এই বিল কণামাত্র এ দেশের সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে নয়।

নাগরিকত্ব বিলে সংশোধন এনে দক্ষিণপন্থী বিজেপি চাইছে, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেশী বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে সে দেশের যেসব সংখ্যালঘু ভারতে আশ্রয় পেয়েছেন, তাঁদের নাগরিকত্বের অধিকার দিতে। কোন কোন ধর্মের মানুষ এই বিলের আওতায় পড়বে, তাও নির্দিষ্ট করা হয়েছে। হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, পার্সি, জৈন ও খ্রিষ্টান। এই ছয় ধর্মাবলম্বীদের যাঁরা অত্যাচারিত হয়ে চলে এসে নাগরিকত্ব দাবি করছেন, তাঁরাই এই সুযোগ পাবেন। ১২ বছর এ দেশে বসবাসের সময়সীমা কমিয়ে প্রস্তাবিত বিলে ৬ বছর করা হয়েছে। সরকারি বিলে ‘ধর্মীয় অত্যাচারের’ কথা বলা থাকলেও বিজেপির নেতারা বলছেন, আসামের জাতীয় নাগরিক নিবন্ধনে যেসব হিন্দুর নাম ওঠেনি, তাঁদের প্রত্যেককেই এই সংশোধনীর পর নাগরিকত্বের অধিকার দেওয়া হবে।

আজ বিলটি পেশ করার আগে থেকেই সংসদ ভবন চত্বর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বিলটিকে সংবিধানবিরোধী আখ্যা দিয়ে বিভিন্ন বিরোধী দল সংসদ ভবন চত্বরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। বিক্ষোভ চলছে গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চলে। অমিত শাহকে বিল পেশে বাধা দেন বিরোধী দলের নেতারা। তৃণমূল কংগ্রেসের সৌগত রায় এই বিলকে ‘সংবিধানবিরোধী’ ও ‘বিভেদ সৃষ্টিকারী’ বলে বর্ণনা করেন। কংগ্রেসের নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেন, এই বিলের মূল লক্ষ্য এ দেশের সংখ্যালঘু সমাজ। সংবিধানের মূল উদ্দেশ্য ও ‘স্পিরিট’ নষ্ট করে এই বিল আনা হচ্ছে। যে অনুচ্ছেদ ১৪-তে সব মানুষের সমানাধিকারের কথা বলা হয়েছে, তা লঙ্ঘন করে ধর্মীয় বৈষম্য সৃষ্টি করতে চাইছে।

বিজেপির নির্বাচনী ইশতেহারে যেসব অঙ্গীকারের কথা বলা হয়েছে, সেগুলোর অন্যতম এই নাগরিকত্ব সংশোধন বিল। এর মূল বিষয় ওই তিন প্রতিবেশী রাষ্ট্র থেকে চলে আসা ছয় সংখ্যালঘু নাগরিকদের ভারতের নাগরিক করে তোলা। এর বাইরে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপ যেমন ছিল, তেমনই ছিল অযোধ্যার বিতর্কিত জমিতে রামমন্দির তৈরি। আর ছিল সব ভারতীয়র জন্য অভিন্ন দেওয়ানি বিধির প্রণয়ন। এই অঙ্গীকারগুলোর মধ্যে ৩৭০ অনুচ্ছেদের বিলোপ ঘটানো হয়ে গেছে। সুপ্রিম কোর্টও নির্দেশ দিয়েছেন, অযোধ্যাতেই রামমন্দির তৈরি হবে। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি এখনো তৈরি হয়নি। কিন্তু তিন তালাক নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে বিজেপি ওই লক্ষ্যে একধাপ এগিয়ে গেছে। এখন প্রতিবেশী তিন দেশ থেকে ‘বিতাড়িত’ সংখ্যালঘুদের ভারতীয় করে তোলার প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে বিজেপি সরকার ভারতকে পৃথিবীর একমাত্র ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ করে তুলতে চাইছে।

তবে এই বিলকে কেন্দ্র করে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে। সেই বিক্ষোভ প্রশমনে বলা হয়েছে, এই এলাকার বিভিন্ন রাজ্যের যে বিশেষ অধিকার রয়েছে, সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলে যে এলাকাগুলো চিহ্নিত এবং যে রাজ্যগুলোতে ভারতীয়দের জন্য ‘ইনার লাইন পারমিট’ জারি রয়েছে, সেসব এলাকায় এই বিল কার্যকর হবে না। সরকার ও বিরোধীদের তীব্র বাদানুবাদের মধ্যে আজ দুপুরে বিলটি পেশ করার জন্য ভোটাভুটি করা হয়। তাতে বিল পেশের পক্ষে ভোট পড়ে ২৯৩, বিপক্ষে ৮২।

আজ বিকেল পাঁচটা থেকে শুরু হয় বিলটি নিয়ে আলোচনা। অমিত শাহ আলোচনা শুরু করে বলেন, প্রতিটি দেশের অধিকার আছে কারা উদ্বাস্তু তা ঠিক করার। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নিজস্বতা রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাই মণিপুরকেও ‘ইনার লাইন পারমিটের’ আওতায় আনা হয়েছে।

অমিত শাহের যুক্তির জবাবে কংগ্রেসের মনীশ তিওয়ারি বলেন, এই বিল আদ্যন্ত সংবিধানবিরোধী। প্রতিবেশী তিনটি দেশকে মাত্র বেছে নেওয়া হয়েছে বিজেপির রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে। অথচ নেপাল, ভুটানের ক্ষেত্রে আলাদা আইন। শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রেও আলাদা। মালদ্বীপের জন্যও পৃথক আইন। অমিত শাহের উদ্দেশে তিনি বলেন, কংগ্রেসকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো খুবই সহজ। কিন্তু ভুলে যাবেন না, ১৯৩৫ সালে হিন্দু মহাসভার নেতা সাভারকরই প্রথম দ্বিজাতি তত্ত্ব অনুযায়ী দেশ ভাগের কথা বলেছিলেন; কংগ্রেস নয়।