নাগরিকত্ব বিলের প্রতিবাদে উত্তর-পূর্বের রাজ্য উত্তাল

নাগরিকত্ব সংশোধন বিলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ। ভারত, ৯ ডিসেম্বর। ছবি: রয়টার্স
নাগরিকত্ব সংশোধন বিলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ। ভারত, ৯ ডিসেম্বর। ছবি: রয়টার্স

বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধন বিল ২০১৯–এর প্রতিবাদে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় আসাম, মণিপুর ও ত্রিপুরা রাজ্যে বিক্ষোভ চলছে। বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী সংগঠনগুলোর ডাকা ধর্মঘটে এসব রাজ্যে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে।

আসাম রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী সংস্থাগুলো ১২ ঘণ্টার ধর্মঘট ডেকেছে। এতে সেখানকার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। ব্যবসাকেন্দ্র ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। তবে আসামের গুয়াহাটিতে ধর্মঘটের তেমন প্রভাব পড়েনি।

কর্মকর্তারা বলছেন, আসামের বাঙালি অধ্যুষিত বরাক ভ্যালি জেলার কাচর, করিমগঞ্জ, হাইলাকান্দি, পাহাড়ি এলাকা করবি আংলং, দিমা হাসাওতে বনধের কোনো প্রভাব পড়েনি।

বেশ কয়েকটি জায়গায় বিক্ষোভকারীরা টায়ার পুড়িয়ে জাতীয় মহাসড়কগুলোতে অবরোধ সৃষ্টি করেছে। পুলিশ সেগুলো সরিয়ে দিয়েছে। দিবরুগড় ও গুয়াহাটিতে যানবাহন চলাচল বন্ধ করার চেষ্টাকালে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। পুলিশ এ সময় লাঠিপেটা করে। কাজীরাঙা ন্যাশনাল পার্ক ও জরহাটে আসা পর্যটকেরা আটকা পড়েছেন। কারণ, এসব এলাকায় উড়োজাহাজ ও ট্রেন চলাচল বন্ধ।

উত্তর-পূর্বে মিজোরাম, নাগাল্যান্ড ও অরুণাচল প্রদেশের রাজ্যগুলোতে ইনার লাইন পারমিট (আইএলপি) রয়েছে। আসাম, ত্রিপুরা ও মেঘালয়ের সিক্সথ শিডিউল এলাকাগুলো নাগরিকত্ব সংশোধন বিলের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। নর্থ ইস্ট স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশনের ডাকা ১১ ঘণ্টার ধর্মঘটে আজ মঙ্গলবার উত্তর–পূর্বাঞ্চলে অচলাবস্থা চলছে।

মণিপুর পিপল অ্যাগেইনস্ট সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট বিলের ডাকা (এমএএনপিএসি) ধর্মঘটে রাজ্যে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। রাজ্যের প্রধান বাজার ইমা মার্কেটসহ বিভিন্ন বাজার বন্ধ রয়েছে। স্থানীয় যানবাহন চলাচল বন্ধ।

এমএএনপিএসির আহ্বায়ক ইয়ামনামচা দিলীপকুমার বলেন, আমরা চাই না মণিপুরে নাগরিকত্ব সংশোধন বিল কার্যকর হোক।

মণিপুর প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র কে এইচ দেবব্রত বলেন, পার্লামেন্টে বিল পাস হলে তাঁর দল আদালতে যাবে।

ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর রাজনৈতিক দলগুলোর বিক্ষোভে ত্রিপুরায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। রাজ্যে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির অংশীদার ইনডেজেনিয়াস পিপলস ফ্রন্ট অব ত্রিপুরা (আইপিএফটি) সিক্সথ শিডিউলের আওতাধীন ত্রিপুরা ট্রাইবাল এরিয়াস অটোনমাস ডিসট্রিক্ট কাউন্সিল (টিটিএএডিসি) এলাকায় ধর্মঘট ডেকেছে। আইপিএফটি ত্রিপুরায় তুইপ্রাল্যান্ড নামে আলাদা রাজ্য দাবি করেছে। আইপিএফটির সহকারী সাধারণ সম্পাদক মঙ্গল দেববর্মা বলেন, আমরা কেন্দ্রকে বলেছি আমাদের রাজ্যে নাগরিকত্ব সংশোধন বিল বাস্তবায়ন না করতে। বিলের বিরুদ্ধে এবং আলাদা রাজ্যের দাবিতে আমরা ১২ ঘণ্টার ধর্মঘট ডেকেছি।

নাগা নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর নীতিনির্ধারণী অংশ নাগা হোহোর সাধারণ সম্পাদক কে এলু এনডাং বলেন, নাগারা নাগরিকত্ব সংশোধন বিলের বিরুদ্ধে। সরকার যদি ইনার লাইন পরামিট বাস্তবায়ন করে তাহলে আমরা নিরাপদ। তবে নাগরিকত্ব সংশোধন বিল কেন প্রয়োজন?

মিজোরামের প্রভাবশালী সিভিল সোসাইটি গ্রুপ সেন্ট্রাল ইয়াং মিজো অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক লামাচচুয়ানাও একই ধরনের উদ্বেগ জানিয়েছেন।

অল অরুণাচল প্রদেশ স্টুডেন্টস ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট হাওয়া বাগ্যাং বলেন, ‘পুরো উত্তর–পূর্বাঞ্চলকে নাগরিকত্ব সংশোধন বিল থেকে অব্যাহতি দিতে হবে। আমরা ছোট রাজ্য। রাজ্যগুলোর ঐক্য গুরুত্বপূর্ণ।’

টানা ৭ ঘণ্টা বিতর্ক শেষে গতকাল সোমবার রাত ১২টার পর ভারতের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভায় নাগরিকত্ব সংশোধন বিল পাস হয়েছে। বিলের পক্ষে ভোট পড়ে ৩১১, বিপক্ষে ৮০। বিল পাসের জন্য দেওয়া ভাষণে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সংখ্যালঘুরা যাঁরা ধর্ম, প্রাণ ও সম্মান রক্ষার তাগিদে অত্যাচারিত হয়ে ভারতে চলে এসেছেন, তাঁদের সবাইকে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।

নাগরিকত্ব তাঁদেরই দেওয়া হবে, যাঁরা এই তিন দেশ থেকে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ভারতে চলে এসেছেন। আগের আইন অনুযায়ী ১২ বছর ভারতে থাকলে কেউ নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকারী হতেন। সংশোধিত আইন অনুযায়ী সেই সময়সীমা কমিয়ে ৬ বছর করা হয়েছে। তবে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর অধিকাংশকেই এই বিলের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলের আওতায় বিভিন্ন রাজ্যের যে যে অংশ রয়েছে এবং ‘ইনার লাইন পারমিট’ (আইএলপি) যে রাজ্যগুলোয় চালু রয়েছে, সেখানে এই আইন বলবৎ হবে না। আইএলপির আওতায় মণিপুর ছিল না। তাকেও অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে বলে অমিত শাহ জানান।