সাংবাদিক ফাটকে পোরায় তুরস্ককে টপকে গেল চীন

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাংবাদিকদের কারাগারে পাঠানোর ক্ষেত্রে রেকর্ড গড়েছে চীন। তুরস্কের রেকর্ড ভেঙে শীর্ষে উঠে এসেছে এশিয়ার দেশটি। ২০১৯ সালে ৪৮ জন সাংবাদিককে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়ে জেলে পাঠিয়ে তালিকার শীর্ষে উঠে এসেছে কমিউনিস্টশাসিত চীন। ২৫০ জন সাংবাদিককে জেলে পাঠিয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্য কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টের (সিপিজে) বার্ষিক এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। আজ বুধবার মার্কিন গণমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমস এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

বার্ষিক প্রতিবেদনে সিপিজে বলেছে, এ বছর সারা বিশ্বে ২৫০ জনের বেশি সাংবাদিককে বিভিন্ন ঘটনায় কারাগারে পাঠিয়েছে কয়েকটি দেশ। সরকারের রোষানলে পড়ে পরপর চার বছর ২৫০ জন সাংবাদিক কারাগারে থাকার ঘটনা ঘটল। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিভিন্ন একনায়ক সরকারের সমালোচনা করায় এসব সাংবাদিককে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে (উইঘুরদের নির্যাতন) সাংবাদিকদের মতপ্রকাশের বিষয়টি কঠোরভাবে দমন করার ঘটনা সামনে আসার পরই তালিকার শীর্ষস্থানে গেল চীন। স্বাধীন সাংবাদিকতাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পর থেকেই সাংবাদিকদের চাকরি হারানো এবং নিপীড়নের ঘটনা নিয়ে তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে তুরস্ক।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সাংবাদিকদের কলম নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বিশ্বের অন্য এলাকার চেয়ে সবচেয়ে এগিয়ে আছে মধ্যপ্রাচ্য। সাংবাদিক জেলে পোরার ক্ষেত্রে তালিকায় তৃতীয় স্থানে সৌদি আরব ও মিসর।

সিপিজে জানিয়েছে, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং, তুরস্কের রিসেপ তাইয়েব এরদোয়ান, সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মাদ বিন সালমান ও মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি গণমাধ্যমে নিজেদের সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না। এর মধ্যে চিন পিং সবচেয়ে কঠোর হাতে মুক্ত মত দমন করছেন বলে সিপিজের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এ বছর তুরস্কে এরদোয়ান সরকার ৪৭ জন সাংবাদিককে জেলে পাঠিয়েছে। গত বছর, অর্থাৎ ২০১৮ সালে দেশটিতে ৬৮ জন সাংবাদিককে জেলে পাঠানো হয়েছে। তবে সিপিজে বলেছে, সাংবাদিক কম জেলে পাঠানো মানেই তুরস্কে অবস্থার উন্নতি হয়েছে—এ কথা মনে করার বিষয়টি ভুল হবে।

বার্ষিক প্রতিবেদনে সিপিজে বলেছে, এরদোয়ান প্রায় ১০০টি গণমাধ্যম বন্ধ করেছেন। তবে এরই মধ্যে অনেক সাংবাদিক জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন।

এ বছর ৪৮ জন গণমাধ্যমকর্মীকে কারাগারে পাঠিয়েছে চিন পিং সরকার। ২০১৮ সালের চেয়ে সাংবাদিকদের জেলে যাওয়ার সংখ্যা একজন বেশি। সিপিজে বলছে, সি চিন পিং ‘গণমাধ্যমে টুঁটি চেপে ধরাকে শিল্পের’ পর্যায়ে নিয়েছেন। উইঘুরদের সংবাদ প্রকাশের কারণে চীনে সাংবাদিক গ্রেপ্তারের ঘটনা বেশি ঘটেছে।

সৌদি আরব ও মিসর এ বছর ২৬ জন সাংবাদিককে জেলে পুরেছে। তালিকার তৃতীয় স্থানে আছে দেশ দুটি। ইরিত্রিয়া ১৬ সাংবাদিককে জেলে পাঠিয়েছে। গত দুই দশকে এই দেশের নাম সাংবাদিকদের কারাগারের পাঠানোর তালিকায় ছিল না। এ ছাড়া ২০১৯ সালে ভিয়েতনামে ১২, ইরানে ১১, রাশিয়া ও ক্যামেরুনে ৭, বাহরাইন ও আজারবাইজানে ৬, সিরিয়ায় ৫ এবং বুরুন্ডি, রুয়ান্ডা ও মরক্কোয় ৪ জন করে সাংবাদিককে জেলে পাঠানো হয়েছে।

২০১৮ সালে ২৫১ জন সাংবাদিককে একনায়ক সরকারেরা জেলা পুরেছিল। এ বছর এই সংখ্যা চারজন বেড়েছে। এর মধ্যে কেউ কেউ যেমন ছাড়া পেয়েছেন, আবার এই সময়ের মধ্যে অনেক সাংবাদিককেই কারাগারে যেতে হয়েছে।

১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে বিশ্বব্যাপী সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের অধিকার নিয়ে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর সিপিজে। এ বছরের ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সিপিজে। এরপর যেসব সাংবাদিককে জেলে পাঠানো হয়েছে, তাঁদের হিসাব পরবর্তী বার্ষিক প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হবে বলে সিপিজে বলেছে।