নাগরিকত্ব বিল নিয়ে উত্তাল আসাম, কারফিউ

নাগরিকত্ব বিলের প্রতিবাদে আসামে বিক্ষোভ। এএফপি ফাইল ছবি।
নাগরিকত্ব বিলের প্রতিবাদে আসামে বিক্ষোভ। এএফপি ফাইল ছবি।

ভারতের রাজ্যসভায় বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল অনুমোদনের প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে আসাম। পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজ্যের গুয়াহাটিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা হয়েছে। আসামের ১০ জেলায় মোবাইলে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কারফিউয়ের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে দিবরাগড় জেলায়।

আজ বৃহস্পতিবার এনডিটিভি অনলাইনের খবরে এ তথ্য জানানো হয়।

নাগরিকত্ব বিল পাসের প্রতিবাদে বিক্ষোভের কারণে গুয়াহাটি বিমানবন্দরে আটকা পড়েন আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল। মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তাবাহিনী পরে তাঁকে তাঁর বাসভবনে নিয়ে যায়।

এএনআইয়ের খবর বলছে, পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেড় শতাধিক সেনাসদস্যকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।

বিল পাসের প্রতিবাদে বিক্ষোভের সময় বিক্ষোভকারীদের গতকাল বুধবার লাঠিপেটা করে পুলিশ। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে বেশির ভাগই শিক্ষার্থী। আসামের গুয়াহাটির বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ফাঁকা গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে এবং লাঠিপেটা করে।

পিটিআইয়ের খবর বলছে, বেসামরিক ও পুলিশ কর্মকর্তাদের অনুমতি ছাড়া বাইরের কারও সঙ্গে যোগাযোগ না করতে বলা হয়েছে। বিভিন্ন সূত্র বলছে, গুয়াহাটি, দিবরাগড় ও জরহাট থেকে শতাধিক বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে।

গুয়াহাটির সচিবালয় চত্বরে বিপুল শিক্ষার্থী জি এস সড়ক অবরোধ করেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সিনজো আবের আগামী রোববারের প্রস্তাবিত বৈঠক সামনে রেখে রাস্তায় তৈরি করা মঞ্চ ভেঙে দেয় বিক্ষোভকারীরা।

বিক্ষোভকারী এক শিক্ষার্থী পিটিআইকে বলেন, সর্বানন্দ সনোয়ালের নেতৃত্বে সরকার বর্বরোচিত আচরণ করছে।

বিক্ষোভকারী কলেজ শিক্ষার্থী গীতিমণি দত্ত রয়টার্সকে জানান, ‘এই বিলে কয়েক লাখ বাংলাদেশি নাগরিকত্ব পাবেন। নাগরিকত্ব বিল আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতির অধিকার কেড়ে নেবে।’

আসাম ও ত্রিপুরার পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ করে তুলে গতকাল বুধবার রাজ্যসভায় ১২৫-৯৯ ভোটে পাস হয়েছে বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধন বিল। গত সোমবার বিলটি পাস হয়েছিল লোকসভায়, বুধবার পাস হলো রাজ্যসভায়। এনডিএর শরিক শিবসেনা লোকসভায় বিলের পক্ষে ভোট দিলেও রাজ্যসভায় তারা ওয়াকআউট করে। ১৯৫৫ সালের ভারতীয় নাগরিকত্ব আইনে এই সংশোধনের ফলে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত হয়ে চলে আসা হিন্দু, শিখ, খ্রিষ্টান, জৈন, পারসি ও বৌদ্ধধর্মাবলম্বীরা ভারতের নাগরিকত্ব পাবেন।

এই বিলকে কেন্দ্র করে আসাম ও ত্রিপুরা—দুই রাজ্যেই সহিংস বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে ১৫-১৬ তারিখে গুয়াহাটিতে ভারত ও জাপানের দুই প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবিত বৈঠক। সরকারি সূত্রগুলো বলছে, গুয়াহাটি থেকে বৈঠক অন্যত্র সরানো হবে কি না, তা অবস্থার বিচারে ঠিক করা হবে।