সু চির সমালোচনা ইউরোপের গণমাধ্যমেও

দ্য হেগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে অং সান সু চি। ছবি: এএফপি
দ্য হেগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে অং সান সু চি। ছবি: এএফপি

রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নেদারল্যান্ডসের হেগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) বিচার শুরু হওয়ার পর থেকেই ইউরোপজুড়ে গণমাধ্যমে খবরটি ব্যাপকভাবে প্রচারিত হচ্ছে। রাখাইনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মিয়ানমারকে কাঠগড়ায় তুলেছে আফ্রিকার ছোট দেশ গাম্বিয়া।

মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলের প্রধান নোবেলে শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অং সান সু চির সমালোচনা করে জার্মানির স্পিগেল পত্রিকাটি লিখেছে, ভাগ্যের কী পরিহাস, যিনি নিজ দেশে সামরিক বাহিনীর হাতে ১৫ বছর বন্দী ছিলেন এবং নিজ দেশে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে অহিংস প্রতিরোধের কথা বলতে গণতান্ত্রিক নেত্রী হিসেবে ইউরোপ এসেছিলেন, আর এখন তিনি ইউরোপে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) এসেছেন গণহত্যার অভিযোগ থেকে সেই একই সামরিক বাহিনীকে রক্ষা করতে। একসময় মানবাধিকারের জন্য লড়াই করা ৭৪ বছর বয়সী এই যোদ্ধা, এখন রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে গণহত্যার ঘটনার বৈধতার পক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করছেন। তিনি তাঁর দেশের সামরিক বাহিনীর অসদাচরণ এবং রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করে বিষয়টি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে আন্তর্জাতিক আদালতে সাফাই গেয়েছেন।

ইউরোপের অপর স্বনামধন্য পত্রিকা ডের যাইট লিখেছে, নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী সু চি তাঁর দেশের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ দ্য হেগে আন্তর্জাতিক আদালতে তাঁর দেশের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ যেভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন, তাতে তাঁর অজ্ঞতা ও সামরিক একনায়কতন্ত্রের প্রতি তাঁর সংহতি প্রকাশ পেয়েছে। অং সান সু চি তাঁর সাবেক প্রতিপক্ষকে যেভাবে সহযোগিতা করছেন, তাতে তাঁর ভাবমূর্তি ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে।

ফরাসি লা মদে পত্রিকা বলেছে, অতীতে সু চির নাম মহাত্মা গান্ধী ও নেলসন ম্যান্ডেলার মতো বড় বড় অহিংসবাদী নেতার পাশাপাশি উদ্ধৃত হতো। সেই অং সান সু চির নাম এখন কলঙ্কিত হয়ে পড়েছে। পত্রিকাটি আরও লিখেছে, আন্তর্জাতিক আদালতে গাম্বিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল ও বিচারমন্ত্রী আবুবকর মারি তামবাদু রোহিঙ্গা এক মায়ের কথা তুলে ধরে বলছিলেন, কীভাবে এক বছরের সন্তানকে মায়ের চোখের সামনে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বা আট মাসের একজন গর্ভবতী নারীকে কীভাবে মিয়ানমারের সৈন্যরা বারবার ধর্ষণ করেছে, তখন সু চি তা নীরবে শুনেছেন। কিন্তু এ নৃশংসতার কথা শুনেও তার চেহারায় কোনো অভিব্যক্তি দেখা যায়নি।

স্পেনের এল পায়েস পত্রিকাটি লিখেছে, মিয়ানমারের সরকারপ্রধান অং সান সু চি এখন বুঝতে পারছেন, তাঁর দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও নিজের ভাবমূর্তি ধরে রাখা কতটা কঠিন কাজ। আর গণহত্যার দায় নিয়ে তাঁকে এখন দ্য হেগে আন্তর্জাতিক আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হচ্ছে।

ইউরোপের প্রায় সব পত্রিকা, টেলিভিশন ও রেডিও দুদিন ধরে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার খবর গুরুত্বসহকারে প্রচার করছে।