যুক্তরাজ্যে ভোট শুরু, ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
যুক্তরাজ্যে সাধারণ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ আজ বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় শুরু হয়েছে। চলবে রাত ১০টা (বাংলাদেশ সময় ভোররাত ৪টায়) পর্যন্ত। এ নির্বাচনকে বিতর্কিত ব্রেক্সিট (ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছেদ) প্রশ্নে জনগণের মতামত পুনর্যাচাই হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সংসদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় এবং দলীয় আইনপ্রণেতাদের বিরোধিতার কারণে গত তিন বছরেও ব্রেক্সিট কার্যকর করতে পারেনি ক্ষমতাসীন কনজারভেটিবরা। তাই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফিরতে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এই নির্বাচনের ডাক দিয়েছেন। ক্ষমতায় ফিরলে ৩১ জানুয়ারি ব্রেক্সিট কার্যকর করবেন তিনি।
অন্যদিকে লেবার নেতা জেরেমি করবিন বলেছেন, এ নির্বাচন ১০ বছর ধরে কনজারভেটিভ সরকারের কৃচ্ছ্রসাধন নীতির অবসানের মাধ্যমে ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের জন্য প্রজন্মের একমাত্র সুযোগ। ক্ষমতায় গেলে করবিন ব্রেক্সিট প্রশ্নে পুনরায় গণভোটের আয়োজন করবেন।
তাই যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী পদে কে আসীন হচ্ছেন, তার ওপর নির্ভর করছে দেশের ভবিষ্যৎ গতিপথ। কনজারভেটিভ পার্টির নেতা বরিস জনসন এবং লেবার নেতা জেরেমি করবিন দুজনই এই নির্বাচনকে জনগণের সামনে কঠিন সিদ্ধান্ত হিসেবে অভিহিত করেছেন।
যুক্তরাজ্যে পাঁচ বছর পর পর সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা। কিন্তু গত পাঁচ বছরেরও কম সময়ে এটি দেশটিতে তৃতীয় সাধারণ নির্বাচনের ঘটনা। এ ছাড়া ১৯৭৪ সালের পর এবারই প্রথম শীতের মৌসুমে নির্বাচন হচ্ছে। আর প্রায় ১০০ বছর পর এটি ডিসেম্বরে নির্বাচন আয়োজনের দ্বিতীয় ঘটনা। এর আগে ১৯২৩ সালে দেশটিতে ডিসেম্বরে নির্বাচন হয়েছিল।
এবারের নির্বাচনের আরেকটি বিরল ঘটনা হলো প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন নিজেকে ভোট দেননি। তিনি বৃহত্তর লন্ডনের আক্সব্রিজ অ্যান্ড সাউথ রুইসলিপ আসনের প্রার্থী। মাত্র ৫ হাজার ৩৪ ভোটের ব্যবধানে আসন ধরে রাখা জনসনকে পরাজিত করতে এবং লেবারদলীয় প্রার্থী আলী মিলানিকে বিজয়ী করতে ব্রেক্সিটবিরোধীরা ওই আসনে ব্যাপক প্রচার চালিয়েছে। জনসন সকাল আটটায় তাঁর পোষা কুকুর নিয়ে ওয়েস্টমিনস্টারে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের কাছেই একটি ভোটকেন্দ্রে যান। এই আসনে কনজারভেটিভ পার্টির প্রার্থী নিকি এইকেন। জনসনের পূর্বসূরিরা—সাবেক প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে, ডেভিড ক্যামেরুন, গর্ডন ব্রাউন ও টনি ব্লেয়ার ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের বাসিন্দা হয়েও নিজ নিজ আসনে ভোট দিয়েছিলেন।
অন্যদিকে, লেবার নেতা জেরেমি করবিন সকাল সাড়ে নয়টায় স্ত্রী লরা আলভারেসকে নিয়ে নিজ নির্বাচনী আসন ইসলিংটন নর্থ এলাকায় ভোট দেন।
যুক্তরাজ্যে ভোটকেন্দ্রে অপেক্ষার ঘটনা বিরল। লন্ডনের বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে সকালে দীর্ঘ সারির ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। শীতের তীব্রতা উপেক্ষা করে অনেকে সকাল সাতটায় ছুটে গেছেন ভোটকেন্দ্রে। স্কটল্যান্ড, উত্তর আয়ারল্যান্ড এবং ওয়েলসের কিছু স্থানে তুষার মাড়িয়ে মানুষকে ভোট দিতে যেতে হয়।