লাহোরের হাসপাতালে সহিংসতায় ইমরান খানের ভাতিজার নাম

লাহোরে চিকিৎসকদের সঙ্গে বিরোধের জের ধরে হাসপাতালে হামলা চালান আইনজীবীরা। ছবি: এএফপি
লাহোরে চিকিৎসকদের সঙ্গে বিরোধের জের ধরে হাসপাতালে হামলা চালান আইনজীবীরা। ছবি: এএফপি

পাকিস্তানের লাহোরের একটি হাসপাতালে সহিংসতার ঘটনায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ভাতিজা হাসান নিয়াজির জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। আইনজীবীদের ব্যঙ্গ করে একজন চিকিৎসকের ভিডিও পোস্ট করাকে কেন্দ্র করে গত বুধবার হাসপাতালে তাণ্ডব চালান আইনজীবীরা।

বিভিন্ন ফুটেজে ওই সহিংসতায় হাসান নিয়াজির জড়িত থাকার প্রমাণ মিললেও পুলিশ তাঁকে আটকের পর ছেড়ে দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। কঠোর সমালোচনার মুখে তাঁকে এখন গ্রেপ্তারের জন্য খুঁজছে পুলিশ। ওই সহিংসতার ঘটনায় হাসপাতালের তিনজন রোগী মারা গেছে।

বিবিসি অনলাইন ও পাকিস্তানের ইংরেজি দৈনিক ডনের খবরে বলা হয়, লাহোর পুলিশ জানিয়েছে, তারা হাসান নিয়াজির বাসায় অভিযান চালিয়েছে, তবে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন।

পাঞ্জাব ইনস্টিটিউট অব কার্ডিওলজি নামের সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে বিরোধের জের ধরে যে কয়েক শ আইনজীবী সেখানে হামলা চালান, এর মধ্যে নিয়াজিও ছিলেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

বিভিন্ন ছবিতে দেখা গেছে, স্যুট–টাই পরা আইনজীবীরা হাসপাতালের কর্মীদের মারধর ও ভাঙচুর করছেন। আইনজীবীদের সেসব তাণ্ডবের ছবি দেখে দেশটিতে নিন্দার ঝড় ওঠে। হাসান নিয়াজির এমন কিছু ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আইনজীবীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়।

হামলার বিভিন্ন ফুটেজে ইমরান খানের ভাতিজাকে বেশ সক্রিয় দেখা গেছে। মারধরে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি তাঁকে পুলিশ ভ্যানে আগুন দেওয়ার ঘটনায় জড়িত থাকতে দেখা গেছে। ঘটনার পরপরই পুলিশকে আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মীদের আটক করতে দেখা গেছে। তবে বিস্ময়করভাবে সহিংসতার ঘটনায় আটক আইনজীবীদের তালিকায় হাসান নিয়াজির নাম নেই। তাঁকে আটকের পর কী হলো, সে ব্যাপারে কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি কর্তৃপক্ষ।

হামলার ঘটনায় ২৫০ জন আইনজীবীর বিরুদ্ধে পুলিশ সরকারি হাসপাতালে হামলা, সম্পদের ক্ষতি এবং সরকারি কর্মচারীদের মারধরের অভিযোগ এনে মামলা করেছে।

লাহোর পুলিশপ্রধানের মুখপাত্র ওয়াসিম বাট বলেন, ভিডিও ফুটেজ দেখে নিয়াজিকে শনাক্ত করা হয়েছে। এখন তাঁকে খোঁজা হচ্ছে। তিনি বলেন, তাঁকে গ্রেপ্তারের জন্য গত বুধবার রাতে তাঁর বাড়িতে এবং পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। তবে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তিনি সম্ভবত আত্মগোপনে রয়েছেন।

ঘটনায় আটকের পর নিয়াজিকে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বলা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বিরোধী দলগুলো নিয়াজির গ্রেপ্তার দাবি করেছে।

হাসপাতালে হামলার ঘটনায় ৮০ জনেরও বেশি আইনজীবীকে আটক করা হয়েছে এবং ৪৬ জনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ আইনজীবীরা দেশব্যাপী গতকাল শুক্রবার ধর্মঘট ডাকেন।

গত মঙ্গলবার রাতে আইনজীবীদের ব্যঙ্গ করে একজন চিকিৎসকের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করাকে কেন্দ্র করে এ হামলার ঘটনা ঘটে। হামলার ভিডিওতে দেখা গেছে, আইনজীবীরা হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড লন্ডভন্ড করছেন, কর্মীদের মারধর করছেন, মেডিকেল যন্ত্রপাতি ভাঙচুর করছেন। আতঙ্কিত চিকিৎসক ও প্যারামেডিকেরা রোগী ফেলে লুকিয়ে পড়েছেন। অনেক রোগী খুব সংকটাপন্ন অবস্থায় ছিল।

হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, মারা যাওয়া তিন রোগীর মধ্যে একজন নারী ও দুজন পুরুষ। সহিংসতার কারণে চিকিৎসকেরা তাঁদের ফেলে চলে যান।