ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়ছে ভারতজুড়ে

দিল্লিতে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ায় পুলিশি অত্যাচারের বিরুদ্ধে মহারাষ্ট্রের মুম্বাইয়ের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। ১৬ ডিসেম্বর, মুম্বাই। ছবি: রয়টার্স
দিল্লিতে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ায় পুলিশি অত্যাচারের বিরুদ্ধে মহারাষ্ট্রের মুম্বাইয়ের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। ১৬ ডিসেম্বর, মুম্বাই। ছবি: রয়টার্স

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে আন্দোলন ক্রমেই গোটা ভারতে ছড়িয়ে পড়ছে। দিল্লিতে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ায় পুলিশি অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী শিক্ষার্থীদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ছাত্রসমাজ। পাশে দাঁড়িয়েছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরাও। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে গতকাল রোববারের ঘটনাকে গভীর উদ্বেগজনক বলে টুইট করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, এই ঘটনা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। তিনি বলেছেন, বিভেদ সৃষ্টি করিয়ে গোলমাল পাকিয়ে স্বার্থান্বেষীদের সুযোগ করে দেওয়া ঠিক নয়।

নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের প্রতিবাদে গতকাল দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ও উত্তর প্রদেশের আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশি অত্যাচারের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের শরণাপন্ন হন প্রবীণ আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিং ও কলিন গনসালভেস। প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদে এই প্রসঙ্গে বলেন, কাল মঙ্গলবার এই মামলা তাঁরা শুনবেন। কিন্তু তার আগে অবিলম্বে হিংসা ও গোলমাল বন্ধ করতে হবে। আন্দোলনকারীরা ছাত্র বলে তাঁরা আইন হাতে তুলে সহিংস হতে পারেন না। আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীরা অবশ্য বলেছেন, তাঁরা কখনোই সহিংস হননি। শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। পুলিশই তাঁদের ওপর অযথা হামলা চালিয়েছে।

জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নাজমা আখতার আজ সোমবার ছাত্রছাত্রীদের পাশে দাঁড়িয়ে যাবতীয় তাণ্ডবের জন্য দিল্লি পুলিশকে অপরাধী ঠাওরেছেন। সংবাদ সম্মেলন ডেকে গতকালের ঘটনার উচ্চপর্যায়ের তদন্তের দাবি জানিয়ে তিনি বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ঢুকে পুলিশ লাইব্রেরি তছনছ করেছে। পড়ুয়াদের ওপর লাঠি চালিয়েছে। নাজমা আখতারের দাবি, পুলিশি তাণ্ডবে কেউ মারা না গেলেও অন্তত ২০০ জন আহত হয়েছেন। নষ্ট হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি। তিনি জানান, বিনা অনুমতিতে পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ঢুকে অপরাধ করেছে। রোববার গ্রেপ্তার করা ছাত্রছাত্রীদের সোমবার ভোররাতে পুলিশ ছেড়ে দিলেও দুজনের বিরুদ্ধে সহিংসতার অভিযোগ এনেছে।

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে আন্দোলন এবং জামিয়া মিলিয়ার ঘটনার প্রতিবাদে মুখর অন্য রাজ্যের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও। দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়, আইআইটি বম্বে, কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, পণ্ডিচেরি বিশ্ববিদ্যালয়, আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটি, বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়, হায়দরাবাদের মউলানা আজাদ জাতীয় উর্দু বিশ্ববিদ্যালয়, লক্ষ্ণৌয়ের নাদোয়া কলেজ, মুম্বাইয়ের টাটা ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্সেসের ছাত্রছাত্রীরা জামিয়া মিলিয়ার ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভে শামিল হন। জামিয়া মিলিয়া, নাদোয়া কলেজ ও আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছে বিরোধী দলও। দিল্লিতে বিরোধী নেতাদের ডাকা যৌথ সংবাদ সম্মেলনে পুলিশি অত্যাচারের নিন্দা করা হয়। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল রোববারের সহিংসতাকে শাসকদলীয় চক্রান্ত মনে করছেন। তাঁর দলের পক্ষ থেকে কিছু ছবি পেশ করে এটা প্রমাণের চেষ্টা হয় যে পুলিশের একাংশও সরকারি বাসে আগুন দিয়েছে। কেজরিওয়াল বলেন, এই ঘটনা নিয়ে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে দেখা করতে চান। আম আদমি পার্টি মনে করছে, দিল্লির নির্বাচনের আগে বিজেপির একাংশ আম আদমি পার্টির বদনাম করতে সচেষ্ট।

আজও সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। তবে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ মিছিল বের হয় কলকাতায়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর দলের নেতা-কর্মীরা বেলা একটায় রেড রোডে বাবাসাহেব আম্বেদকরের মূর্তির সামনে থেকে শুরু করেন পদযাত্রা। সাত কিলোমিটার দূরে জোড়াসাঁকোয় ঠাকুরবাড়ির আঙিনায় এক ঘণ্টা পর শেষ হয় সেই পদযাত্রা। সেখানে মমতা বলেন, ‘ক্ষমতায় এসে বিজেপি নিজেদের আকাশের চেয়েও বড় ভাবছে। নাগরিকত্ব আইন ও এনআরসির বিরুদ্ধে আমি রুখে দাঁড়িয়েছি। এই দুটি বিষয় চালু করতে হলে তা করতে হবে আমার মৃতদেহের ওপর দাঁড়িয়ে।’ পদযাত্রা শুরুর আগে মমতা সবাইকে শপথ গ্রহণ করান। শপথের মূল নির্যাস, এনআরসি ও নাগরিকত্ব আইন হতে দেব না। কাউকে বাংলা ছাড়তে দেব না। শান্তিতে থাকব। নিশ্চিন্তে থাকব। সর্ব ধর্ম সমন্বয় আমাদের আদর্শ।