জাপান-দক্ষিণ কোরিয়া সম্পর্কে বরফ গলার আভাস

বিদ্যমান সংকটের সমাধান খুঁজে পেতে কাজ শুরু করেছে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া। ছবি: রয়টার্স
বিদ্যমান সংকটের সমাধান খুঁজে পেতে কাজ শুরু করেছে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া। ছবি: রয়টার্স

দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে জাপানের সম্পর্কের টানাপোড়েন নতুন কিছু নয়। তবে চলতি বছরের মাঝামাঝি থেকে হঠাৎ করেই এই সম্পর্ক অনেকটা যেন তলানিতে গিয়ে ঠেকে।

সম্পর্ক তলানিতে যাওয়ার মূলে ছিল দক্ষিণ কোরিয়ার উচ্চ আদালতের দেওয়া একটি রায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কোরিয়ার লোকজনকে নামমাত্র পারিশ্রমিকের বিনিময়ে বাধ্যতামূলকভাবে কাজে নিয়োগ করা হয়। এ জন্য জাপানের কয়েকটি কোম্পানিকে ক্ষতিগ্রস্ত সেই সব লোকজনকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের নির্দেশ দেন দক্ষিণ কোরিয়ার উচ্চ আদালত।

এ ছাড়া কোরীয় উপদ্বীপ জাপানের উপনিবেশ থাকাকালে জাপানি সেনাদের সেবার জন্য কোরীয় নারীদের বাধ্য করা নিয়ে চলমান বিতর্ক দুই দেশের সম্পর্কের অবনতির আরেকটি কারণ।

জাপান বলে আসছে, উভয় সমস্যা দুই দেশের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে অনেক আগেই নিষ্পত্তি হয়ে গেছে।

তবে জাপানের এই দাবিকে গ্রহণযোগ্য মনে করছে না দক্ষিণ কোরিয়া।

দক্ষিণ কোরিয়ার আদালতের রায়ের পর জাপান গত জুলাই মাসে একটি পদক্ষেপ নেয়। দক্ষিণ কোরিয়ায় রপ্তানি হওয়া জাপানের উচ্চ প্রযুক্তির কিছু পণ্যের ওপর রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ কঠোর করা হয়। জাপানের পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়া একটি সামরিক চুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়। এতে পরিস্থিতি হঠাৎ করে অনেকটা জটিল হয়ে ওঠে।

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় সামরিক গোয়েন্দা তথ্য চুক্তিতে সংকটের সাময়িক নিষ্পত্তি হয়। কিন্তু অমীমাংসিত অন্য বিষয়গুলো এখনো সমাধানের অপেক্ষায় আছে। আর দুই পক্ষ একে অন্যকে অভিযুক্ত করে যাচ্ছে।

ফল হিসেবে জাপানে দক্ষিণ কোরিয়ার পর্যটকের আগমন সর্বনিম্নে এসে ঠেকেছে। দুই দেশের মধ্যে নাগরিক পর্যায়ের আদান-প্রদানও ব্যাহত হচ্ছে।

সামরিক গোয়েন্দা তথ্য চুক্তি নিয়ে দেখা দেওয়া জটিলতা দূর হওয়ার সময় ধারণা করা হয়েছিল, রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয়ে জাপান হয়তো কঠোর অবস্থান থেকে সরে আসার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখবে। তবে জাপানের পক্ষ থেকে এ-সংক্রান্ত খবরের সত্যতা অস্বীকার করা হয়।

পরবর্তী ঘটনা প্রবাহ বলছে, সংকটের একটি সমাধান খুঁজে পাওয়ার ব্যাপারে উভয় পক্ষ এগোতে শুরু করেছে।

গত জুলাই মাসে জাপানের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ কার্যকর হয়। এরপর গতকাল প্রথমবারের মতো দুই দেশের উচ্চপর্যায়ের বাণিজ্য কর্মকর্তারা টোকিওতে বৈঠকে মিলিত হন। তাঁরা আলোচনা অব্যাহত রাখতে সম্মত হয়েছেন। তাঁদের ওই বৈঠক পূর্বনির্ধারিত সময়ের চেয়ে তিন ঘণ্টা বেশি চলে। উভয় দেশের কর্মকর্তারা বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তাঁরা অভিন্ন একটি অবস্থান খুঁজে পাওয়ার ইঙ্গিত দেন।

জাপানের বাণিজ্যমন্ত্রী হিরোশি কাজিইয়ামা পরে সাংবাদিকদের বলেন, আলোচনায় অগ্রগতি সূচিত হয়েছে। দুই দেশের কর্মকর্তারা অচিরেই ফের সংলাপে বসবেন।

টোকিওতে অনুষ্ঠিত ১০ ঘণ্টার আলোচনাকে বিশ্লেষকেরা দুই দেশের মধ্যে বরফ গলার ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন। অনেকেই আশার আলো দেখছেন। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে আগামী সপ্তাহে জাপান, চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যকার ত্রিপক্ষীয় শীর্ষ বৈঠক উপলক্ষে বেইজিং সফরে যাবেন। সফরকালে তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইনের সঙ্গে একান্ত আলোচনায় মিলিত হবেন। এই বৈঠকে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কের ইতিবাচক অগ্রগতি হয়তো আরও স্পষ্ট হবে।