বিক্ষোভে উত্তাল ভারত, দিল্লিতে প্রণব মুখার্জির মেয়ে আটক

শর্মিষ্ঠা মুখার্জি
শর্মিষ্ঠা মুখার্জি

ভারতে নাগরিকত্ব আইন নিয়ে বিক্ষোভ চলছেই। চলছে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘাতও। ধরপাকড়ও চলছে। রাজধানী নয়াদিল্লিতে বিক্ষোভের সময় আজ শুক্রবার ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির মেয়ে শর্মিষ্ঠা মুখার্জিসহ ৫০ জনকে আটক করা হয়েছে। নয়াদিল্লির অন্যতম প্রাচীন একটি মসজিদের সামনে বিক্ষোভ করছেন হাজারো মানুষ। উত্তর প্রদেশের ১৩ জেলায় বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। সব মিলিয়ে পুরো দেশেই উত্তাপ ছড়াচ্ছে বিক্ষোভের আগুন। বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন শহরে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

দ্য ইকোনমিক টাইমসের খবরে বলা হয়, আজ নয়াদিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর বাসভবন এলাকায় বিক্ষোভের সময় সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণবের মেয়ে শর্মিষ্ঠাকে আটক করে পুলিশ। শর্মিষ্ঠা নারী কংগ্রেসের দিল্লি শাখার প্রধান। এ সময় শর্মিষ্ঠার সঙ্গে অন্তত ৫০ জন নারী নেতা-কর্মীকেও আটক করা হয়। আটক হওয়ার পর শর্মিষ্ঠা বার্তা সংস্থা পিটিআইকে বলেন, তাঁদের আটক করে মন্দির মার্গ পুলিশ স্টেশনে নেওয়া হয়েছে।

বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, পুরোনো দিল্লির জামা মসজিদের সামনে এক বিক্ষোভের সময় দলিত নেতা চন্দ্রশেখর আজাদকে পুলিশ আটক করেছিল। পরে পুলিশ হেফাজত থেকে পালিয়ে যান চন্দ্রশেখর। দিল্লিতে পুলিশ জামা মসজিদের সামনের রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। কিছু মেট্রো স্টেশনও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুরো ভারতের বিভিন্ন শহরে মোবাইল ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, মুজাফফরনগর, বুলন্দশর, গোরক্ষপুর, ফিরোজাবাদ, আলীগড়, মিরাট, বারাণসীসহ বিভিন্ন শহর থেকে সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে।

পিটিআইয়ের খবরে বলা হয়েছে, দিনটা শুক্রবার বলে দেশের সর্বত্র গুরুত্বপূর্ণ মসজিদগুলোর ওপরে বিশেষ নজর রাখার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সবাইকে নির্দেশ দিয়েছিল। পুরোনো দিল্লির জামা মসজিদ ছিল তার মধ্যে অন্যতম। গোটা এলাকায় জারি করা হয়েছিল ১৪৪ ধারা। মোতায়েন করা হয়েছিল কয়েক শ পুলিশ। বাইরের লোকজন যাতে জামা মসজিদে ঢুকতে না পারেন সে জন্য প্রধান ফটকের কাছে তৈরি হয়েছিল ব্যারিকেড। এত সাবধানতার একটা কারণ জুমার নামাজের পর জনতা যাতে হিংসাত্মক হয়ে না ওঠে। অন্য কারণ ছিল তরুণ দলিত নেতা চন্দ্রশেখর আজাদ ও তাঁর সংগঠন ভীম সেনার বিক্ষোভ দেখানোয় বাধা দেওয়া। কিন্তু দুই দায়িত্ব পালনেই দিল্লি পুলিশ ব্যর্থ হয়েছে।

রাজধানী দিল্লিতে শুক্রবারও জায়গায় জায়গায় বিক্ষোভ প্রদর্শন চলে। জামিয়া মিলিয়ার প্রধান ফটকের সামনে অবিরাম বিক্ষোভ চলছে গত চার দিন ধরে। শুক্রবার সেখানে জমায়েত ছিল কয়েক হাজার। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাই নজর রাখেন যাতে বাইরের কেউ আন্দোলনকে হিংসাত্মক করে না তোলে। বস্তুত, বিভিন্ন সংগঠনের নেতা দুদিন ধরে এই প্রচারই চালাচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, এই লড়াইয়ে জিততে গেলে আন্দোলনকে অহিংস রাখতে হবে। কোনো প্ররোচনায় পা দেওয়া চলবে না।

নাগরিকত্ব আইন নিয়ে ভারতে বিক্ষোভ চলছেই। চালু আছে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘাত। ধরপাকড়ও চলছে বেশ। শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় এভাবেই প্ল্যাকার্ড-ফেস্টুন নিয়ে রাস্তায় নামে বিক্ষোভকারীরা। ভারত, ২০ ডিসেম্বর। ছবি: এএফপি
নাগরিকত্ব আইন নিয়ে ভারতে বিক্ষোভ চলছেই। চালু আছে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘাত। ধরপাকড়ও চলছে বেশ। শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় এভাবেই প্ল্যাকার্ড-ফেস্টুন নিয়ে রাস্তায় নামে বিক্ষোভকারীরা। ভারত, ২০ ডিসেম্বর। ছবি: এএফপি

নাগরিকত্ব আইনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী জন বিক্ষোভের মুখে পিছু হটবার কোনো ইঙ্গিত কেন্দ্রীয় সরকার এখনো দেয়নি। তবে দেশব্যাপী এনআরসি করার বিষয়ে সরকার ধীরে চলার নীতি নিয়েছে। সরকার যে বিজ্ঞাপন দিতে শুরু করেছে তাতে বলা হচ্ছে, দেশে এনআরসির ঘোষণা এখনো হয়নি। যখন হবে তখন তা এমনভাবে করা হবে যাতে কোনো ভারতীয় নাগরিক অসুবিধার মধ্যে না পড়েন। সরকার যতই বলুক এনআরসি ও ‘সিএএ’ সম্পর্কযুক্ত নয়, বিরোধীরা তা মানতে প্রস্তুত নয়। বরং বিরোধী নেতারা স্পষ্ট করেই বলছেন,‘সিএএ’ চালু করে সরকার আগে তিন দেশের সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করতে চাইছে, তারপর এনআরসি করে মুসলমানদের নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করবে।

এদিকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জি কিষেণ রেডিড জানিয়েছেন, এনআরসি নিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকও এখনো হয়নি। কোনো নীতিমালাও তৈরি হয়নি। কবে তা হবে এখনো অজানা। ফলে ধারণা করা হচ্ছে, দেশ জোড়া প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের মুখে সরকার এখনই এনআরসি নিয়ে এগোতে চাইছে না। তা ছাড়া সরকার ‘সিএএ’ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ও দেখে নিতে চাইছে।

ভারতের নতুন নাগরিকত্ব আইনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে যেসব অমুসলিম মানুষ ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন, তাঁরা এবার ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এই আইন বাতিলের দাবিতে রাজধানী দিল্লিসহ ভারতের বিভিন্ন এলাকায় কয়েক দিন ধরে চলছে বিক্ষোভ। আইনটি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে নোটিশ দিয়েছেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। ওই আইনের বৈধতা খতিয়ে দেখতে এ নোটিশ দেওয়া হয়। আলোচিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রয়োগ স্থগিতের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।