বরিস জনসনের বাজিমাত

বরিস জনসন
বরিস জনসন

যুক্তরাজ্যে ১২ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর নতুন পার্লামেন্টের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছে গত বৃহস্পতিবার রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের ভাষণের মধ্য দিয়ে। এর পরদিন গতকাল শুক্রবারই পার্লামেন্টে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ (ব্রেক্সিট) বিল পার্লামেন্টে উত্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। এ দিনই তিনি বাজিমাত করেছেন। ব্রেক্সিট বিলের ওপর ভোটাভুটিতে তাঁর প্রস্তাব ৩৫৮ ভোট পেয়ে প্রাথমিকভাবে পাস হয়েছে। বিপক্ষে ভোট পড়েছে ২৩৪টি। আগামী মাসের শুরুর দিকে বিতর্ক শেষে বরিসের বিচ্ছেদ শর্তগুলোর ওপর পার্লামেন্টে চূড়ান্ত ভোট হওয়ার কথা রয়েছে।

গতকাল পার্লামেন্টে বরিস জনসন বলেন, ‘ব্রেক্সিট নিয়ে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তা নিরসন এবং ব্রেক্সিট সম্পন্ন করার জন্য আমরা এখানে জড়ো হয়েছি। ব্রেক্সিট সম্পন্ন করার জন্য জনগণ ভোটের মধ্য দিয়ে যে রায় দিয়েছে, তা এক দলের বিরুদ্ধে আরেক দলের বিজয় নয়। ব্রেক্সিট হবে। সাড়ে তিন বছরের দুঃখজনক অধ্যায় এবার শেষ হবে। এখন সময় সামনে এগিয়ে যাওয়ার।’

নির্বাচনে বরিসের দল ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। ফলে চুক্তি পাস করতে বরিসকে আর বেগ পেতে হয়নি। তবে এই চুক্তির বিরোধিতা করার ঘোষণা আগে থেকেই দিয়ে রেখেছিলেন বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন। তিনি বলেছিলেন, তাঁর দল বরিসের ব্রেক্সিট চুক্তির বিরোধিতা করবে। যদিও লেবার পার্টির অনেক আইনপ্রণেতা ও ছায়া মন্ত্রী জানিয়েছিলেন, নির্বাচনের ফলাফলই বলে দিয়েছে তাদের এই চুক্তিতে সমর্থন দেওয়া উচিত।

এদিকে পার্লামেন্টে উত্থাপনের আগে ব্রেক্সিট চুক্তিতে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। পুরোনো চুক্তিতে পরিবর্তন এনে গত বৃহস্পতিবার রাতে সংশোধিত চুক্তিটি প্রকাশ করা হয়েছে। নতুন বিল অনুসারে, ইইউর বিভিন্ন দেশের শ্রমিকদের অধিকার সংরক্ষণের যে বিষয়টি পুরোনো বিলে অন্তর্ভুক্ত ছিল, সেটি বাতিল করা হয়েছে। অর্থাৎ ইইউর নীতি অনুসারে যুক্তরাজ্যে ইইউর শ্রমিকদের অধিকারের নিশ্চয়তা আর থাকছে না। তবে সরকারের পক্ষে থেকে বলা হয়েছে, এটি আলাদা বিল হিসেবে পার্লামেন্টে উত্থাপন করা হবে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এটি অন্যতম বড় একটি ঘটনা।

>

ব্রেক্সিট বিল
ব্রিটিশ পার্লামেন্টে প্রাথমিকভাবে ৩৫৮–২৩৪ ভোটে পাস হয়েছে বরিসের নতুন চুক্তিটি

ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এর আগে একটি আইন পাস করে বলা হয়েছিল, ইইউর সঙ্গে ব্রেক্সিট–পরবর্তী সম্পর্ক কেমন হবে, তা নির্ধারণ করবেন আইনপ্রণেতারা। নতুন চুক্তিতে সেই বাধ্যবাধকতা থাকছে না। এ ছাড়া ইউরোপের অন্যান্য দেশের শরণার্থী শিশুদের দায়িত্ব নেওয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল যুক্তরাজ্যে। নতুন বিলে সে বাধ্যবাধকতাও রাখা হয়নি। তবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘যেসব শিশু রাজনৈতিক আশ্রয় চাইবে কিংবা সুরক্ষা চাইবে, তাদের ব্যাপারে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। শিশুদের ব্যাপারে সরকারের কোনো নীতির পরিবর্তন হয়নি। ইইউর বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাজ্যে আসা পরিবারগুলোর সঙ্গে তাদের শিশুদের থাকতে দেওয়ার ব্যাপারে আমাদের যা করার সুযোগ রয়েছে, তা–ই করব।’

তবে সরকারের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন বিরোধী নেতারা। লেবার পার্টির ব্রেক্সিট–বিষয়ক ছায়া মন্ত্রী কেইর স্টারমার বলেন, নতুন যে পরিবর্তন আনা হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, শরণার্থী শিশুদের সুরক্ষা দিতে চায় না কনজারভেটিভ পার্টি।

এদিকে বিলের অন্যতম আরেকটি পরিবর্তন হলো, ব্রেক্সিটের অন্তর্বর্তী সময়ের মেয়াদ কমিয়ে আনা। আগের বিলে ২০২০ সালের শেষ পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সময় রাখা হয়েছিল। এর মেয়াদ বাড়াতে চাইলে ৩০ জুন নাগাদ ইইউর কাছে আবেদন করতে হবে। কিন্তু নতুন বিলে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সময় শেষ হবে ২০২০ সালের শেষেই। এরপর আর মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ নেই।