ভারতজুড়ে সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৭

ভারতের আসাম রাজ্যে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ভন্ডুল করার চেষ্টা করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক সদস্য। ১২ ডিসেম্বর, ২০১৯। ছবি: এএফপি
ভারতের আসাম রাজ্যে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ভন্ডুল করার চেষ্টা করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক সদস্য। ১২ ডিসেম্বর, ২০১৯। ছবি: এএফপি

ভারতে নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) ও সারা দেশে নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) তৈরির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে বিক্ষোভে শুধু উত্তর প্রদেশেই গত দুইদিনে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ জনে। সব মিলিয়ে শনিবার বিকেল পর্যন্ত সারাদেশে বিক্ষোভে নিহতের মোট সংখ্যা ১৭। আহত হয়েছে অনেকে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, শনিবার কানপুরে পুলিশের একটি চেকপোস্টে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। রামপুরে ব্যারিকেড ভেঙে পুলিশের দিকে ছোড়া হয় পাথর। পুলিশ জবাবে ছুড়েছে কাঁদানে গ্যাস, করেছে লাঠিপেটা। ওদিকে রাজধানী নয়াদিল্লিতে টানা সাতদিন ধরে চলছে বিক্ষোভ। গতকাল শুক্রবার পুরোনো দিল্লিতে সংঘর্ষের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ। ওই সংঘাতে আহত হয়েছে ৩৫ জনেরও বেশি মানুষ।

এদিকে দেশের সবচেয়ে বড় রাজ্য উত্তর প্রদেশ চার দিন ধরে উত্তাল। পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে রাজ্যপাল আনন্দিবেন প্যাটেলের সঙ্গে দেখা করেন মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ। গোটা রাজ্যে বিক্ষোভ ঠেকাতে ১৪৪ ধারা জারি এবং মুখ্যমন্ত্রী কড়া হাতে মোকাবিলার কথা বললেও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে একটা পর একটা শহরে ছড়িয়ে পড়েছে বিক্ষোভের আঁচ। সংঘর্ষে মীরাটেই মারা যান চারজন। এ ছাড়া বিজনৌর, সম্ভল, কানপুর ও ফিরোজাবাদে মারা যান দুজন করে। রামপুর ও বারানসিতে নিহত হন একজন করে।

উত্তর প্রদেশে নিহত ব্যক্তিদের অধিকাংশের শরীরে গুলির চিহ্ন দেখা গেছে। যদিও গুলি ছোড়ার কথা সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন রাজ্য পুলিশের মহাপরিচালক ওমপ্রকাশ সিং। তিনি বলেছেন, একটি গুলিও রাজ্যের পুলিশ ছোড়েনি। তা হলে নিহত ব্যক্তিদের শরীরে গুলির চিহ্ন কী করে এল? এই প্রশ্নের জবাবে পুলিশ কর্তারা বলেছেন, জনতার গুলিতেই বিক্ষোভকারীদের মৃত্যু হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের পর তা বোঝা যাবে। এই দাবি অবশ্য নস্যাৎ হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে। তাতে দেখা যাচ্ছে, বহু জায়গায় কাঁদানে গ্যাসের পাশাপাশি পুলিশ গুলিও ছুড়ছে।

শনিবার বিহার ছাড়াও নতুনভাবে অশান্ত হয় তামিলনাড়ু ও উত্তরাখন্ডের নৈনিতাল জেলা। চেন্নাই থেকে পুলিশ ২০০ বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করে। শুক্রবার দিল্লি পুলিশের চোখে ধুলা দিয়ে পালিয়ে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন ভীম সেনার দলিত নেতা চন্দ্র শেখর আজাদ। শনিবার পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।

নাগরিকত্ব আইন পাস হলেও তার নীতিমালা এখনো তৈরি হয়নি। তার ওপর বিষয়টির সাংবিধানিক বৈধতা সুপ্রিম কোর্টের বিবেচনাধীন। এ অবস্থায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিত্যনতুন ব্যাখ্যা জটিলতা সৃষ্টি করছে। একইভাবে সন্দেহ গভীর হয়েছে নাগরিক নিবন্ধন তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েও। একেকজন মন্ত্রী একেক রকম ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। ধারণা করা হচ্ছে, দেশ-বিদেশে প্রতিরোধের মুখে পড়ে এনআরসি নিয়ে সরকার সম্ভবত আপাতত পিছু হটছে অথবা ধীরে চলো নীতি গ্রহণ করছে।

অবশ্য সিএএ নিয়ে সরকার পাল্টা প্রচার ও সমাবেশও শুরু করেছে। শুক্রবার নয়াদিল্লির কনট প্লেসে সিএএর সমর্থনে বিজেপি জমায়েত করে। কাল রোববার রামলীলা ময়দানে জনসভার আয়োজন করেছে দিল্লি বিজেপি। এর প্রধান আকর্ষণ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

ভারতের নতুন নাগরিকত্ব আইনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে যেসব অমুসলিম মানুষ ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন, তাঁরা এবার ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এই আইন বাতিলের দাবিতে রাজধানী দিল্লিসহ ভারতের বিভিন্ন এলাকায় কয়েক দিন ধরে চলছে বিক্ষোভ।