ক্রিসমাসে ওয়াশিংটনকে কী উপহার দিচ্ছে উ. কোরিয়া

আবার পারমাণবিক কর্মসূচি শুরু করতে যাচ্ছে উত্তর কোরিয়া। ছবি: রয়টার্স
আবার পারমাণবিক কর্মসূচি শুরু করতে যাচ্ছে উত্তর কোরিয়া। ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রকে আবারও নিজেদের বৈরী রূপটি উপহার দিতে পারে উত্তর কোরিয়া। আসন্ন ক্রিসমাসের উপহার হিসেবে এমনটিই পরিকল্পনা করছে বলে পিয়ংইয়ংয়ের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।

সিএনএনের খবরে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের স্মারক হিসেবে উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধের প্রক্রিয়ায় ছিল। কিন্তু প্রতিশ্রুত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে তেমন কোনো অগ্রগতি না দেখায় দেশটির নেতা কিম জং উনের মধ্যে এক ধরনের হতাশা তৈরি হয়েছে। উপরন্তু অভিশংসন প্রক্রিয়ায় থাকা ডোনাল্ড ট্রাম্পের কর্তৃত্ব নিয়েও এখন প্রশ্ন উঠে গেছে। ফলে দুই নেতার আলোচনার মধ্য দিয়ে যে আশার আলো দেখা দিয়েছিল, তা অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে মনে করছে উত্তর কোরিয়া। এ অবস্থায় পারমাণবিক শক্তি কর্মসূচি বন্ধের প্রক্রিয়া থেকে সরে আসার প্রাথমিক পরিকল্পনা করেছে দেশটি। আর এই নতুন নীতিকেই উত্তর কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘ক্রিসমাস উপহার’ বলতে চাইছে।

উত্তর কোরিয়ার এক উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে সিএনএন জানায়, নতুন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পরমাণু কর্মসূচি বন্ধের পথ থেকে সরে আসবে পিয়ংইয়ং। একই সঙ্গে ওয়াশিংটনের সঙ্গে এ সম্পর্কিত আলোচনায়ও আপাতত ইতি টেনে দেবে দেশটির প্রশাসন। পাশাপাশি স্বল্প বা দীর্ঘ কোনো মেয়াদেই আর অনুদানের ওপর নির্ভর না করে অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতার নীতি গ্রহণেরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালেই উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন ঘোষণা করেছিলেন যে, পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রকল্প সম্পন্ন হয়েছে। এখন তাঁর প্রশাসনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে উত্তর কোরিয়ার অর্থনীতি ও এর জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন।

এমন একটি গুরুতর সিদ্ধান্তের পেছনে মূলত যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে চলমান সংকট বড় ভূমিকা পালন করছে। উত্তর কোরিয়া মনে করছে, এই মুহূর্তে ওয়াশিংটনের সঙ্গে কোনো চুক্তিতে গেলে, তা রক্ষা হবে কিনা, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এমন মনে করার আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে ইরানের সঙ্গে হওয়া ছয় জাতি চুক্তির পরিণতি। ওবামা প্রশাসনের সময় করা ওই চুক্তি ট্রাম্প প্রশাসন বাতিল করে দিয়েছে। এতে করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে পিয়ংইয়ংয়ের। তারা মনে করছে, এখন কোনো চুক্তি করলেও, পরবর্তী মার্কিন প্রশাসন যে তা রক্ষা করবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।

বলার অপেক্ষা রাখে না যে, উত্তর কোরিয়া এখন তাদের আগের অবস্থানেই ফিরে যাচ্ছে। এর প্রতিক্রিয়া ওয়াশিংটন কীভাবে দেখাবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। ২০১৭ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর কিম জং উনের সঙ্গে বাগ্‌যুদ্ধে নেমেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সে সময় নিজের পারমাণবিক অস্ত্রের বোতামটি উনেরটির চেয়ে বড় বলে হুমকিও দিয়েছিলেন ট্রাম্প। ওই পরিস্থিতিতে যেকোনো সময় বড় কোনো অঘটন ঘটে যেতে পারে বলেও এক ধরনের আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল গোটা বিশ্বে। এখন উত্তর কোরিয়া যদি পূর্বাবস্থায় ফিরে যায়, তাহলে আগের মতোই উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে কিনা, তা নিয়ে শঙ্কা থেকে যাচ্ছে।