ভারতের শত্রুরা যা করতে পারেনি, মোদি সরকার তা করতে চাইছে: রাহুল

নয়াদিল্লির রাজঘাটে ভারতীয় সংবিধানের মুখবন্ধ পড়ে শোনান কংগ্রেস প্রধান সোনিয়া গান্ধী ও রাহুল গান্ধী। ছবি: এএফপি
নয়াদিল্লির রাজঘাটে ভারতীয় সংবিধানের মুখবন্ধ পড়ে শোনান কংগ্রেস প্রধান সোনিয়া গান্ধী ও রাহুল গান্ধী। ছবি: এএফপি

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন, ভারতের শত্রু দেশগুলো যা করতে পারেনি, মোদি সরকার সেটিই করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। নতুন নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে সোমবার নয়াদিল্লির রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধী মেমরিয়ালের সামনে অনুষ্ঠিত এক বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নিয়ে রাহুল এই কথা বলেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজঘাটের ওই বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দিয়ে ভারতীয় সংবিধানের মুখবন্ধ পড়ে শোনান সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। সংবিধানে উল্লিখিত নাগরিকদের মৌলিক অধিকার রক্ষার আহ্বানও জানান তাঁরা। বিক্ষোভ মিছিলে আরও অংশ নেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কমলনাথ, রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলতসহ আরও অনেকে।

নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদকে সমর্থন জানিয়েছে কংগ্রেস। আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার যুক্তি দেখিয়ে সাধারণ নাগরিকদের ওপর যেভাবে নির্যাতন চালানো হচ্ছে, সেটির নিন্দাও জানিয়েছে দলটি।

এর আগে তরুণ সমাজকে সোমবারের প্রতিবাদ মিছিলে যোগ দেওয়ার ও সংবিধানের মুখবন্ধ পড়ার আহ্বান জানিয়ে টুইট করেন রাহুল। টুইট বার্তায় তিনি বলেন, ‘ভারতের সব শিক্ষার্থী ও তরুণদের উদ্দেশ্যে বলছি, ভারতকে কেবল অন্তরে ধারণ করাই যথেষ্ট নয়। এ রকম সংকটময় পরিস্থিতিতে এটি প্রমাণ করতে হবে, তোমরা ভারতকে ঘৃণার কারণে ধ্বংস হতে দেবে না। মোদি-অমিত শাহ জুটি ভারতে যে সহিংসতা চালাচ্ছে, সোমবার বিকেল ৩টায় রাজঘাটে একত্রিত হয়ে তোমরা সেটির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাও।’

মা-ভাইয়ের সঙ্গে যোগ দেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধীও। ছবি: এএফপি
মা-ভাইয়ের সঙ্গে যোগ দেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধীও। ছবি: এএফপি

তরুণদের উদ্দেশ্যে টুইট করেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধীও। হিন্দিতে করা এক টুইটে তিনি বলেন, ‘আমাদের সংবিধান আমাদের শক্তি। দেশকে দ্বিখণ্ডিত করার এই নীতি থেকে আমাদের দেশকে রক্ষা করতে হবে। এসো, সংবিধান পড়ার এই কর্মসূচিতে আমাদের সঙ্গে সবাই যোগ দাও।’

চেন্নাই-বেঙ্গালুরুতে প্রতিবাদ মিছিল, এলাহাবাদে ইন্টারনেট সেবা চালু

নতুন নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) ও জাতীয় নাগরিক নিবন্ধনের (এনআরসি) বিরুদ্ধে এবার প্রতিবাদের ঢেউ লেগেছে দক্ষিণ ভারতেও। সোমবার চেন্নাইয়ের রাজপথে বিশাল মিছিল করেছেন বিরোধীরা। ডিএমকের ডাকা প্রতিবাদ মিছিলে শামিল হয়েছেন কংগ্রেস-সিপিএমসহ অধিকাংশ বিরোধী দলের নেতারা। প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে বেঙ্গালুরুতেও। তবে উত্তর প্রদেশের বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলন কিছুটা স্তিমিত হয়েছে। চার দিন বন্ধ থাকার পর এলাহাবাদে ফের চালু হয়েছে ইন্টারনেট সেবা।

নতুন নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে চেন্নাইয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ডিএমকে। ছবি: এএফপি
নতুন নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে চেন্নাইয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ডিএমকে। ছবি: এএফপি

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিএএ-এনআরসির প্রতিবাদে প্রতিবাদ মিছিল বের করার ঘোষণা আগেই দিয়েছিল ডিএমকে। সোমবার সেই মিছিল শুরু হতেই রাস্তায় জনসাধারণের ঢল নামে। ডিএমকে সভাপতি এম কে স্টালিন ছাড়াও মিছিলে যোগ দেন কংগ্রেস নেতা পি চিদাম্বরম, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক কে বালাকৃষ্ণন, বিদুথালাই চিরুথাইগল কাটচি (ভিসিকে) প্রধান থোল তুরিমাভালভনের মতো নেতারা। সোমবার সকাল থেকেই শহরের এগমোরে জমায়েত হন সব দলের সমর্থকেরা। সেখান থেকে মিছিল শুরু হয়ে শেষ হয় রাজারথিনাম স্টেডিয়ামে।

তবে পুলিশ প্রথমে মিছিলের অনুমতি দেয়নি। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তার দায় কে নেবে এই প্রশ্ন তুলে অনুমতি দিতে অস্বীকার করে চেন্নাই সিটি পুলিশ। পরে ডিএমকে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলে রোববার মিছিলের অনুমতি দেয় মাদ্রাজ হাইকোর্ট। তবে শর্ত ছিল, মিছিলের ভিডিও রেকর্ডিং করতে হবে। মিছিল ঘিরে অশান্তির আশঙ্কায় পুরো এলাকায় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয় পুলিশ। ড্রোন ক্যামেরা, দাঙ্গারোধী গাড়ির ব্যবস্থা রাখা হয়, মোতায়েন করা হয় সুইফট অ্যাকশন গ্রুপের জওয়ানদের।

মিছিলে অপ্রীতিকর ঘটনা রুখতে ড্রোন ক্যামেরা ব্যবহার করে চেন্নাই পুলিশ। ছবি: রয়টার্স
মিছিলে অপ্রীতিকর ঘটনা রুখতে ড্রোন ক্যামেরা ব্যবহার করে চেন্নাই পুলিশ। ছবি: রয়টার্স

এদিকে বেঙ্গালুরুতেও সিএএ-এনআরসি বিরোধী প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকেরা। সোমবার বেলা ১১টা নাগাদ শহরের হজরত খাজি মুহম্মদ আবদুল কুদ্দুস সাহিব ঈদগাহ ময়দান থেকে মিছিল শুরু হয়ে শহরের মিলার রোড, নন্দী দুর্গা রোড ঘুরে শেষ হয়।

তবে গত কয়েক দিন ধরে উত্তর প্রদেশের বিভিন্ন এলাকায় যে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল, সোমবার তা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এলাহাবাদে ১৯ ডিসেম্বর থেকে বন্ধ থাকা ইন্টারনেট সেবা চালু হয়েছে সোমবার। রাজ্যের অন্যান্য প্রান্তেও ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ শিথিল হচ্ছে। তবে রোববার বিক্ষোভে উত্তেজনা ছড়ানোয় মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুরে সোমবার নতুন করে কারফিউ জারি হয়েছে।

বেঙ্গালুরুতেও সিএএ-এনআরসি বিরোধী বিশাল বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। ছবি: রয়টার্স
বেঙ্গালুরুতেও সিএএ-এনআরসি বিরোধী বিশাল বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। ছবি: রয়টার্স

এদিকে নতুন নাগরিকত্ব আইনের সমর্থনে কলকাতায় ‘অভিনন্দন যাত্রা’ করেছে রাজ্য বিজেপি। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাস হওয়ার খুশিতে দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানাতে আজ সোমবার এই ‘অভিনন্দন যাত্রার’ আয়োজন করা হয়। এই যাত্রায় অংশ নেন বিজেপির সর্বভারতীয় কার্যকরী সভাপতি জে পি নাড্ডা। আরও যোগ দেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়, মুকুল রায়, রাহুল সিনহা, দিলীপ ঘোষ, দেবশ্রী চৌধুরী প্রমুখ।