খাসোগি হত্যার রায় উপহাস: জাতিসংঘের র্যাপোর্টিয়ার

সৌদি আরবের সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যার রায়ের প্রতিক্রিয়ায় জাতিসংঘের বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়ার অ্যাগনেজ ক্যাল্লামার্ড বলেছেন, এই বিচার ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। এই রায় একটি উপহাস। বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।

খাসোগি হত্যাকাণ্ডে পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন সৌদি আরবের একটি আদালত। তিনজনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। রিয়াদের একটি আদালত গতকাল সোমবার এই রায় ঘোষণা করেন।

রায়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ ক্যাল্লামার্ড। টুইটারে তিনি বলেন, হত্যায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন, তাঁদের মৃত্যুদণ্ড হয়েছে। কিন্তু হত্যার পরিকল্পনাকারীরা (মাস্টারমাইন্ড) শুধু রেহাই-ই পাননি, তাঁদের স্পর্শ পর্যন্ত করা হয়নি।

ক্যাল্লামার্ড তাঁর এক প্রতিবেদনে বলেছিলেন, খাসোগির মৃত্যু বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। এই হত্যাকাণ্ডের জন্য সৌদি সরকার দায়ী। আর এই হত্যাকাণ্ডে সৌদি সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ আছে।

খাসোগি হত্যার রায়কে স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে রায়ে হতাশ তুরস্ক।

সাংবাদিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা প্যারিসভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স বলেছে, এই রায়ে বিচারব্যবস্থা পদদলিত হয়েছে। পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার মধ্য দিয়ে স্থায়ীভাবে তাঁদের কণ্ঠ রোধ করা হলো, যাতে সত্য উদঘাটনে তাঁরা কিছু বলতে না পারেন।

খাসোগির প্রেমিকা হাটিজে জেংগিস তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, এই রায় অগ্রহণযোগ্য।

তবে সৌদি আরবে বসবাসরত খাসোগির ছেলে সালাহ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, তাঁরা ন্যায়বিচার পেয়েছেন।

সৌদি রাজপরিবার ও যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের কড়া সমালোচক ছিলেন মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’-এর কলাম লেখক ও সাংবাদিক খাসোগি। গত বছরের ২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটের ভেতরে খাসোগিকে হত্যা করা হয়।

আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সৌদি আরব স্বীকার করে, কনস্যুলেট ভবনের ভেতরে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে নিহত হন খাসোগি।

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইএ) বলে, যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নির্দেশে খাসোগিকে হত্যা করা হয়েছে।

তবে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান শুরু থেকেই দাবি করে আসছেন, এই হত্যার সঙ্গে তিনি জড়িত নন।

গতকাল সৌদির আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, খাসোগি হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত নয়।

খাসোগিকে হত্যার ঘটনায় সৌদি আরবে ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে ৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। আর ৩ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে মোট ২৪ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়। দণ্ড পাওয়া ব্যক্তিদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করেনি সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ।