ঝাড়খন্ডে বিজেপির হারে উজ্জীবিত মমতা

ঝাড়খন্ড নির্বাচনে জয়ের পর জেএমএম-কংগ্রেস জোটের উল্লাস। ছবি: এএফপি
ঝাড়খন্ড নির্বাচনে জয়ের পর জেএমএম-কংগ্রেস জোটের উল্লাস। ছবি: এএফপি

ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন বিজেপি হারার পর উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে বিজেপি-বিরোধীরা। বিজেপির এই পরাজয়ের পর বিজেপি-বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ হতে নতুন করে ডাক দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বিজেপি-বিরোধী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও বিভিন্ন বিরোধী দলের শীর্ষ নেতাদের চিঠি দিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মমতা।

গতকাল সোমবার ঝাড়খন্ড নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এতে বিজেপি বিপুল ভোটের ব্যবধানে হেরেছে ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম)-কংগ্রেস জোটের কাছে।

এ ছাড়া গত ১২ মাসে বিজেপি মহারাষ্ট্র, ছত্তিশগড়, রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশের রাজ্য নির্বাচনে হেরেছে বিজেপি।

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ। ছবি: এএফপি
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ। ছবি: এএফপি

বিজেপির হারের পর বৃহত্তর ঐক্যের ডাক দিয়ে মমতা গতকাল বিজেপি-বিরোধী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও বিভিন্ন বিরোধী দলের শীর্ষ নেতাদের চিঠি দেন। মমতা চিঠি লিখেছেন কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী, এনসিপি নেতা শারদ পাওয়ার, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, ডিএমকে নেতা এম কে স্তালিন, সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নিতীশ কুমার, ওডিশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক, তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী জগমোহন রেড্ডিসহ অন্যান্য দলের নেতা ও মুখ্যমন্ত্রীদের কাছে।

চিঠিতে মমতা বলেন, ‘এবার সময় এসেছে মোদির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার। তাই আমরা আজ এক হই। গণতন্ত্রকে রক্ষা করি। মোদির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের পথ প্রশস্ত করি।’

প্রথমবার ক্ষমতায় আসীন হয়ে বিজেপি কংগ্রেসমুক্ত ভারত গড়ার ডাক দিয়েছিল। সেই ডাকে প্রথম দিকে সাড়া মিললেও এখন দিনে দিনে ক্ষয়ে যাচ্ছে বিজেপির জনপ্রিয়তা।

সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে দেশের ৭১ শতাংশ এলাকায় বিজেপির শাসন ছিল। এখন তা কমে ৩৫ শতাংশে নেমে এসেছে। দুই বছর আগেও ভারতের জনসংখ্যার ৬৮ শতাংশ মানুষ বিজেপিশাসিত রাজ্যে বাস করত। এখন তা ৪৩ শতাংশে নেমে এসেছে।

বিজেপি-বিরোধীরা তাই মনে করছে, শুরু হয়ে গেছে বিজেপির ধস। মানুষ বুঝে নিয়েছে, সামনে আসছে বিজেপির দুর্দিন। তাই এই সময়ে বিজেপি-বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির ঐক্য প্রয়োজন।

মমতা চিঠিতে আরও লিখেছেন, ‘জ্যেষ্ঠ নেতা, নেত্রী ও সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের কাছে সনির্বন্ধ অনুরোধ, বিজেপির বিরুদ্ধে একসুরে একজোট হোন। সিএএ ও এনআরসির বিরুদ্ধে গর্জে উঠুন।’

মমতা শুরু থেকেই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) ও নাগরিক নিবন্ধন তালিকার (এনআরসি) বিরোধিতা করছেন। পরে তাঁর সঙ্গে যোগ দেন কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। গতকাল মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথ, রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট, ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী টিএস সিংদেও ও মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁদের রাজ্যে কার্যকর করা হবে না সিএএ-এনআরসি। এর আগে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নিতীশ কুমারও একই ঘোষণা দেন।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: এএফপি
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: এএফপি

লুঙ্গি পরে মিছিল
সিএএ-এনআরসি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঝাড়খণ্ডে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে লুঙ্গির প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছিলেন, ‘সিএএ বিরোধিতায় তাণ্ডবকারীদের পোশাক দেখলেই চেনা যায়।’ মোদির ওই মন্তব্যের প্রতিবাদে গতকাল কোচবিহার জেলার দিনহাটা মহকুমা শহরে লুঙ্গি পরে প্রতিবাদ মিছিল করে তৃণমূল কংগ্রেস। এই মিছিলের নেতৃত্ব দেন স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক উদয়ন গুহ।

উদয়ন গুহ বলেন, ‘পোশাক নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রতিবাদে আমরা লুঙ্গি পরে মিছিল করেছি। আমরা কে কোন সম্প্রদায়ের, এবার প্রধানমন্ত্রী তা চিহ্নিত করে দেখান। বলুন, আমোদের মধ্যে কে হিন্দু, কে মুসলমান, বলুন। তাই বলছি, পোশাক কখনো কোনো সম্প্রদায়ের পরিচয় হতে পারে না। বিজেপি এসব বলে মানুষে মানুষে বিভেদ তৈরি করতে চাইছে।’

সিএএর বিরুদ্ধে সরকারি প্রচার বন্ধের নির্দেশ
কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিবি রাধাকৃষ্ণনের সমন্বয়ে গঠিত একটি ডিভিশন বেঞ্চ গতকাল সরকারি অর্থে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সিএএ-এনআরসির বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রচারণা চালানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। আদালত বলেছেন, সরকারি অর্থে এই প্রচারণা চালানো যাবে না। অবিলম্বে এই প্রচারণা বন্ধ করতে হবে।

এ নিয়ে কয়েকটি জনস্বার্থ মামলা দায়েরের পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতা হাইকোর্ট এই নির্দেশ দিয়েছেন। এই মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ৯ জানুয়ারি।

অন্য আরেকটি মামলায় সিএএ-এনআরসি নিয়ে আন্দোলনে রেলের যে বিপুল পরিমাণ সম্পদের ক্ষতি হয়েছে, তার বিবরণসহ ক্ষয়ক্ষতির তালিকা হাইকোর্টে পেশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পূর্ব রেল ও দক্ষিণ-পূর্ব রেলকে।