নাগরিকত্ব আইনের পক্ষে-বিপক্ষে মিছিল, উত্তাল পশ্চিমবঙ্গ

সিএএ, এনআরসি, এনপিআরের বিরুদ্ধে কলকাতায় বাম দল ও কংগ্রেসের যৌথ প্রতিবাদ মিছিল। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
সিএএ, এনআরসি, এনপিআরের বিরুদ্ধে কলকাতায় বাম দল ও কংগ্রেসের যৌথ প্রতিবাদ মিছিল। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ), জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) এবং জাতীয় জনসংখ্যা নিবন্ধন (এনপিআর) বাতিলের দাবিতে আজ শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গ উত্তাল হয়ে ওঠে। রাজ্যজুড়ে পক্ষে-বিপক্ষে মিছিল হয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দাবি ওঠে, অবিলম্বে বাতিল করতে হবে সিএএ, এনআরসি এবং এনপিআর। বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে বিজেপিবিরোধীরা। অন্যদিকে আইনের সমর্থনে অভিনন্দন মিছিল করেছে বিজেপি।

আজ দুপুরে সিএএ, এনআরসি এবং এনপিআর বাতিলের দাবিতে কলকাতায় বাম দল ও কংগ্রেস যৌথভাবে মিছিল এবং প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে। কলকাতার সুবোধ মল্লিক স্কয়ার থেকে মিছিল শুরু হয়। শেষ হয় মহাজাতি সদনে। মিছিলে ছিলেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র, বাম পরিষদীয় দলের নেতা সুজন চক্রবর্তী, রাজ্য কংগ্রেসের সভাপতি সোমেন মিত্র, সাবেক সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য প্রমুখ।

প্রতিবাদ সমাবেশে বাম ও কংগ্রেস নেতারা ঘোষণা দেন, এ রাজ্যে কখনো কার্যকর করতে দেওয়া হবে না সিএএ, এনআরসি এবং এনপিআর। এ রাজ্যের নাগরিকদের মধ্যে যুগ যুগ ধরে থাকা সাম্প্রদায়িক বন্ধনকে ভাঙতে দেওয়া হবে না। এ রাজ্যে কোনো ধর্মীয় বিভাজন করতে দেওয়া হবে না। ধর্মনিরপেক্ষ বাম দল এবং জাতীয় কংগ্রেস বিজেপির ধর্মীয় বিভাজনকে মেনে নেবে না।
নেতারা আরও বলেন, জীবন দিয়ে লড়াই করে এই রাজ্যের অসাম্প্রদায়িক নীতিকে জাগ্রত রাখা হবে। জাতিতে জাতিতে, ধর্মে ধর্মে বিভাজনকে বন্ধ করা হবে।

কংগ্রেস রাজ্য সভাপতি সোমেন মিত্র বলেছেন, বাম ও কংগ্রেস ছাড়া এ আন্দোলন জারি রাখতে আর কোনো বিকল্প নেই। তাঁরাই সমুন্নত রাখবেন এই বাংলার অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে।

প্রতিবাদ সমাবেশে আগামী ৮ জানুয়ারি ১৭ বাম দল আহূত সাধারণ ধর্মঘট সফল করার জন্য আহ্বান জানানো হয়। এ ধর্মঘটকে সমর্থন দিয়েছে জাতীয় কংগ্রেসও।

বিজেপির এই ষড়যন্ত্রের জবাব দেব: মমতা
আজ উত্তর চব্বিশ পরগনার নৈহাটিতে সিএএ, এনআরসি এবং এনআরপি–বিরোধী সমাবেশে যোগ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘এ রাজ্যের সবাই এ দেশের নাগরিক। কেন আবার তাদের নতুন করে নাগরিকত্ব নিতে হবে? আমরা বিজেপির এই ষড়যন্ত্রের জবাব দেব। আমরা সিএএ, এনআরসি এবং এনআরপি মানছি না। এ রাজ্যে তা কার্যকর করতেও দেব না।’ তিনি আরও বলেন, ‘জীবন দিয়ে হলেও আমরা আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করব। কাউকে এই বাংলা ছাড়তে হবে না। কাউকে আমরা বাংলা ছাড়তেও দেব না। সবাই আমরা ভারতের নাগরিক। নতুন করে আর নাগরিকত্বের প্রয়োজন নেই।’

অন্যদিকে আজ পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথিতে সিএএ, এনআরসি এবং এনপিআরের পক্ষে অভিনন্দন মিছিল বের করে বিজেপি। এই মিছিলের নেতৃত্ব দেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাস হয়েছে। এবার এই রাজ্যে নিগৃহীত হয়ে আসা বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তানের উদ্বাস্তু ও শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য আনা হয়েছে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন।

এ ছাড়া সিএএ,এনআরসি এবং এনপিআর বাতিলের দাবিতে হুগলির সিঙ্গুরে তৃণমূলের কৃষক সংগঠনের উদ্যোগে প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে। কলকাতার সল্টলেকে তৃণমূল নেত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের নেতৃত্বেও প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে।