২০১৯ সালে ভারতে ইন্টারনেট বন্ধে 'সেঞ্চুরি' পার

নাগরিক সংশোধনী আইনের প্রতিবাদ ঠেকাতে ভারতে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনা ঘটছে। ছবি: রয়টার্স
নাগরিক সংশোধনী আইনের প্রতিবাদ ঠেকাতে ভারতে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনা ঘটছে। ছবি: রয়টার্স

ভারতের সরকার ২০১২ সাল থেকে দেশটির বিভিন্ন অংশে ৩৭৪ বার ইন্টারনেট বন্ধ করেছে। এর মধ্যে ২০১৯ সালেই ইন্টারনেট বন্ধের ঘটনা ঘটেছে শতাধিকবার। ইন্টারনেট বন্ধের দিক থেকে বিশ্বে বড় ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে ভারত। দেশটির সংবাদমাধ্যম স্ক্রল ডট ইনের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।

গত বৃহস্পতিবার উত্তর প্রদেশে সবশেষ ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। কাশ্মীরে গত ৫ আগস্ট থেকে মোবাইল ইন্টারনেট সেবা পুরোপুরি বন্ধ রাখা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন রাজ্যের এক বা একাধিক জেলায় ইন্টারনেট বন্ধ করার ঘটনা বেড়েছে। ২০১২ সালে শুধু জম্মু-কাশ্মীর দিয়ে যা শুরু, তা ২০১৯ সালে ১৪টি রাজ্যে পৌঁছেছে।

১৯ ডিসেম্বর ভারতের নাগরিক সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীদের ঠেকাতে দিল্লির কিছু অংশে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয় সরকার।

ভারতে ‘টেম্পরারি সাসপেনশন অব টেলিকম সার্ভিসেস (পাবলিক ইমারজেন্সি অর পাবলিক সেফটি) আইন ২০১৭’ অনুযায়ী, ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই আইন অনুযায়ী, জননিরাপত্তা বা জরুরি প্রয়োজনে কমপক্ষে যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার কোনো কর্মকর্তা টেলিকম সেবা বন্ধের আদেশ দিতে পারেন।

অবশ্য এভাবে ইন্টারনেট বন্ধ রাখায় ক্ষতির মুখেও পড়তে হচ্ছে দেশটিকে। থিংকট্যাংক হিসেবে কাজ করা ব্রুকিং ইনস্টিটিউটের সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত ইন্টারনেট বন্ধের ঘটনায় ভারতের ৯৬ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার ক্ষতি হয়েছে।

আরেক গবেষণায় দিল্লিভিত্তিক থিংকট্যাংক কাউন্সিল ফর রিসার্চ অন ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক রিলেশনস জানিয়েছে, ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ইন্টারনেট বন্ধের ঘটনায় ভারতের ৩০০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি ক্ষতি হয়েছে।

ইন্টারনেট বন্ধের ফলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো সামনে আসে কম। ২০১৬ সালে জাতিসংঘ ইন্টারনেটে যুক্ত হওয়াকে মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে ঘোষণা দেয়। ভারতে একমাত্র কেরালা রাজ্য এটি মেনে চলে। কেরালার হাইকোর্ট ২০১৭ সালে এক আদেশে এটি মানতে বলেন।

মুক্ত ইন্টারনেট নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংস্থা অ্যাকসেস নাউ যুক্তি দিয়েছে, ইন্টারনেট বন্ধ করা একটি অসমর্থনযোগ্য প্রতিক্রিয়া। ইন্টারনেট বন্ধের ঘটনা দুর্বল মানুষকে তথ্য পাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে।