'সোলাইমানিকে কয়েক বছর আগেই হত্যা করা উচিত ছিল'

কুদস্ ফোর্সের কমান্ডার সোলাইমানিকে হত্যার যৌক্তিকতা প্রমাণের চেষ্টা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
কুদস্ ফোর্সের কমান্ডার সোলাইমানিকে হত্যার যৌক্তিকতা প্রমাণের চেষ্টা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

ইরানের জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে আরও কয়েক বছর আগে হত্যা করা উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের অভিজাত কুদস্ ফোর্সের কমান্ডার সোলাইমানি শুক্রবার বাগদাদে মার্কিন হামলায় নিহত হন।

আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোলাইমানির মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর বেশ কয়েকটি টুইট করেন ট্রাম্প। প্রথম টুইটে কেবল যুক্তরাষ্ট্রের পতাকার ছবিই দিয়েছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় টুইটটিতে বেশ কিছু কথা লিখেছেন তিনি। দ্বিতীয় সেই টুইটে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘দীর্ঘ সময় ধরে সোলাইমানি বহু মার্কিন নাগরিককে হত্যা বা আহত করেছে। আরও অনেকের প্রাণ নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাঁর। কিন্তু তার আগেই সে ধরা পড়ে গেল! লাখ লাখ মানুষের মৃত্যুর জন্য প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে দায়ী ছিল সে।’

এর পরপরই আরেকটি টুইট করে ট্রাম্প। সেখানে ট্রাম্প লেখেন, ‘ইরান এটা কখনোই ঠিকভাবে স্বীকার করবে না যে, সোলাইমানিকে ইরানের লোকেরাই তীব্রভাবে ঘৃণা করত ও ভয় পেত। সোলাইমানির মৃত্যুতে ইরানি নেতারা যতটা শোক দেখাচ্ছেন, তাঁরা আসলে অতটা শোকগ্রস্ত নন। সোলাইমানিকে আরও অনেক বছর আগেই হত্যা করা উচিত ছিল।’

ট্রাম্পের পাশাপাশি সোলাইমানিকে হত্যার সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা তুলে ধরেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। ইরান অনেক মার্কিন নাগরিককে হত্যার পরিকল্পনা করছিল, এমন অভিযোগ তুলে পম্পেও বলেছেন, ট্রাম্পের নির্দেশে সোলাইমানিকে হত্যার সিদ্ধান্ত যথার্থ। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পম্পেও বলেন, ‘সশস্ত্র হামলা করার একটা বড়সড় পরিকল্পনা করছিল সোলাইমানি। এতে অনেক মার্কিন নাগরিকের প্রাণ সংশয়ে পড়ত। আমরা তাঁর হামলার পরিকল্পনার কথা জানতে পেরেছিলাম। গোয়েন্দা বাহিনীর এমন তথ্যই আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে প্রভাবিত করেছে।’

সোলাইমানিকে হত্যার পর ট্রাম্পের টুইট। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত
সোলাইমানিকে হত্যার পর ট্রাম্পের টুইট। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত

এদিকে সোলাইমানি হত্যাকাণ্ডের পর ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে বলেছেন, এই ঘটনার কঠোর প্রতিশোধ নেবে ইরান। পম্পেও জানিয়ে দিয়েছেন, ইরানের যেকোনো পদক্ষেপ মোকাবিলায় তাঁরা প্রস্তুত। ফক্স নিউজকে পম্পেও বলেছেন, ‘ইরান প্রতিক্রিয়া দেখাবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তারা যদি সে পথে না যায়, যদি অন্য কোনোভাবে প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করে, আমি নিশ্চিত, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও গোটা যুক্তরাষ্ট্র সেটা তাৎক্ষণিকভাবে মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত।’

এ ছাড়া বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতাদের কাছে সোলাইমানিকে হত্যার যৌক্তিকতা প্রমাণের চেষ্টা করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন পম্পেও। যুক্তরাজ্য ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং চীনের স্টেট কাউন্সিলের সঙ্গে পম্পেও নিজে যোগাযোগ করে এই সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা বোঝানোর চেষ্টা করেছেন বলে জানিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

সোলাইমানিকে হত্যার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের পতাকা পুড়িয়েছেন ইরানি বিক্ষোভকারীরা। ছবি: রয়টার্স
সোলাইমানিকে হত্যার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের পতাকা পুড়িয়েছেন ইরানি বিক্ষোভকারীরা। ছবি: রয়টার্স

ট্রাম্পের নির্দেশে শুক্রবার ভোরে ইরাকের রাজধানী বাগদাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জেনারেল সোলাইমানির গাড়িবহর লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। এই হামলায় সোলাইমানিসহ বেশ কয়েকজন নিহত হন। পেন্টাগনের ভাষ্য, ভবিষ্যতে ইরানের হামলার পরিকল্পনা নস্যাৎ করতেই জেনারেল সোলাইমানিকে হত্যা করা হয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে ‘মারাত্মক বিপজ্জনক’ ও ‘বোকামি’ বলে বর্ণনা করেছেন।

মার্কিন নাগরিকদের ইরাক ছাড়ার নির্দেশ:

এদিকে সোলাইমানিকে হত্যার পর ইরাকে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকদের জরুরি ভিত্তিতে ইরাক ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএস নিউজের প্রতিবেদনে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘মার্কিন নাগরিকদের যত দ্রুত সম্ভব আকাশপথে ইরাক ত্যাগ করতে বলা হচ্ছে। আকাশপথে সম্ভব না হলে অন্য যেকোনোভাবে হলেও ইরাক ছাড়তে হবে। ইরাকে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসের সামনে হামলার কারণে পরবর্তী বিজ্ঞপ্তি না দেওয়া পর্যন্ত দূতাবাসের সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। তাই মার্কিন নাগরিকদের দূতাবাসে যোগাযোগ না করার জন্য বলা হচ্ছে।’