দাবানলের ভাইরাল হওয়া ছবি ভুয়া

ভয়াবহ দাবানলে পুড়ছে অস্ট্রেলিয়া। এখন পর্যন্ত নিউ সাউথ ওয়েলস এবং ভিক্টোরিয়াজুড়ে ১ হাজার ২০০ ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। নিখোঁজ রয়েছে অন্তত ১৭ জন। প্রতিদিন সংবাদমাধ্যমে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দাবানলের ক্ষয়ক্ষতির ভয়াবহ সব ছবি উঠে আসছে। নানা ধরনের পশুপাখির দগ্ধ ছবি। সম্প্রতি এমনই অনেক ছবি দেখে হৃদয় নাড়া দেয় পশুপ্রেমীদের। দাবানলে পুড়ে মারা যাওয়া একটি বাঘ, কোয়েলা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ছোট মেয়ের ছবিসহ নানা ধরনের ছবি কাঁদাচ্ছে বিশ্ব। তবে এসব ছবির মধ্যে অনেক ছবিই ভুয়া। বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে এমনটাই উঠে এসেছে।

পুড়ে যাওয়া বাঘের ছবিটির বাঘটি একটি মূর্তি। ছবি: এএফপি
পুড়ে যাওয়া বাঘের ছবিটির বাঘটি একটি মূর্তি। ছবি: এএফপি


পুড়ে যাওয়া বাঘের ছবি

সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবানলে পুড়ে যাওয়া বাঘের একটি ছবি খুব ঘুরে বেড়াচ্ছে। ইউনিভার্সিটি অব সিডনির সোর্স দিয়ে ৫ জানুয়ারি ছবিটি পোস্ট করার পরপরই প্রায় ৮৪ হাজার বার শেয়ার হয়। টুইটারেও ব্যাপকভাবে পোস্ট করা হয় ছবিটি। ছবির ক্যাপশনে লেখা হয়, ‘অস্ট্রেলিয়ায় ভয়াবহ দাবানলে ৪৮ কোটির বেশি প্রাণীর মৃত্যু হয়েছে। শতাধিক বিরল কোয়েলা পুড়ে মারা গেছে। একটি যুগের সমাপ্তি। অস্ট্রেলিয়ার জন্য প্রার্থনা করি।’

তবে ঘটনা হচ্ছে এটি একটি ভুয়া ছবি। ২০১২ সালে ইন্দোনেশিয়ার একটি ছবি এটি। ওই সময় কর্তৃপক্ষ কিছু বাঘের মূর্তি আগুন দিয়ে ধ্বংস করে। আসল ছবিটি আন্তর্জাতিক ফটো এজেন্সি শাটারস্টক সম্পাদকীয়র তোলা একটি ছবি, যা ২০১২ সালের ১২ নভেম্বর প্রকাশিত হয়। সেই ছবি অস্ট্রেলিয়ার দাবানলের বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়।

দাবানল থেকে একটি কোয়েলা বাঁচাল ছোট্ট মেয়ে—এটি একটি প্রতীকী ছবি: ছবি: এএফপি
দাবানল থেকে একটি কোয়েলা বাঁচাল ছোট্ট মেয়ে—এটি একটি প্রতীকী ছবি: ছবি: এএফপি


দাবানল থেকে একটি কোয়েলা বাঁচাল ছোট্ট মেয়ে

৭ জানুয়ারি টুইটারে পোস্ট করা হয় অগ্নিশিখা ও ধোঁয়ার বিশাল এক প্রাচীরের সামনে কোয়েলা ধরে দাঁড়িয়ে থাকা একটি শিশুর ছবি। ইনস্টাগ্রাম এবং ফেসবুকে ছবিটি হাজার হাজার বার শেয়ার করা হয়। দাবি করা হয়, এটি অস্ট্রেলিয়ার দাবানলের বাস্তব ছবি। তবে এটি আসলে থুইয়ি নামের এক শিল্পীর তোলা ছবি। এটি তাঁর মনের কল্পনা। শিল্পী নিজেই জানান, এটি দাবানলের প্রেক্ষাপট বোঝাতে প্রতীকী ছবি।

উদ্ধারের পর কৃতজ্ঞতায় নারীকে জড়িয়ে ধরেছে ক্যাঙারু—এটিও ভুয়া। ছবি: এএফপি
উদ্ধারের পর কৃতজ্ঞতায় নারীকে জড়িয়ে ধরেছে ক্যাঙারু—এটিও ভুয়া। ছবি: এএফপি


উদ্ধারের পর কৃতজ্ঞতায় নারীকে জড়িয়ে ধরেছে ক্যাঙারু

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুটি ভিডিও ভাইরাল হয়। দুটি ভিডিওই একই ধরনের। দাবানল থেকে একটি ক্যাঙারু উদ্ধার করেছেন এক নারী। ক্যাঙারুটি কৃতজ্ঞতায় ওই নারীকে জড়িয়ে ধরেছে। এই ভিডিও দুটি লাখের বেশি বার শেয়ার করা হয়েছে। তবে দুটিই ভুয়া ভিডিও। এটি দাবানলের নয়। অস্ট্রেলিয়ার উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত একটি ক্যাঙারু অভয়ারণ্যে করা হয় এই ভিডিও। ওই অভয়ারণ্য কর্তৃপক্ষই বিষয়টি বার্তা সংস্থা এএফপিকে নিশ্চিত করে। ভিডিওগুলো ২০০৬ সালের।

উদ্ধারের পর কৃতজ্ঞতায় নারীকে জড়িয়ে ধরেছে ক্যাঙারু—এটিও ভুয়া। ছবি: এএফপি
উদ্ধারের পর কৃতজ্ঞতায় নারীকে জড়িয়ে ধরেছে ক্যাঙারু—এটিও ভুয়া। ছবি: এএফপি
দাবানলের মাঝে বৃষ্টি হওয়ায় এক ফায়ার সার্ভিস কর্মীর আনন্দ—এটি সাম্প্রতিক ছবি নয়। ছবি: এএফপি
দাবানলের মাঝে বৃষ্টি হওয়ায় এক ফায়ার সার্ভিস কর্মীর আনন্দ—এটি সাম্প্রতিক ছবি নয়। ছবি: এএফপি


বৃষ্টিতে এক ফায়ার সার্ভিস কর্মীর আনন্দ

৬ জানুয়ারি ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য সান একটি ছবি শেয়ার করে। কয়েক দিন আগে বৃষ্টি হয়েছে দাবানলের জায়গায়। যে ভিডিওতে দেখা যায়, বৃষ্টি হওয়ায় আনন্দ করছেন এক ফায়ার সার্ভিস কর্মী। অনেক ভাষায় ছবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করা হয়। তবে এই ভিডিওটি এখনকার নয়। এটি গত নভেম্বরে তোলা।

আগুন থেকে বাঁচতে পানিতে দাঁড়িয়ে থাকা একটি পরিবারের হৃদয়বিদারক ছবিটি ২০১৩ সালের। ছবি: এএফপি
আগুন থেকে বাঁচতে পানিতে দাঁড়িয়ে থাকা একটি পরিবারের হৃদয়বিদারক ছবিটি ২০১৩ সালের। ছবি: এএফপি


একটি পরিবারের হৃদয়বিদারক ছবি

চারদিকে ধোঁয়া, দাবানলের প্রভাবে লাল হয়ে আছে চারপাশ। একটি জেটির পাশে পানিতে নেমে জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করছেন এক নারী। সঙ্গে রয়েছে তাঁর পাঁচ সন্তান। এই নাটকীয় ছবিটি ফেসবুক, টুইটার ও ইনস্টাগ্রামে বারবার শেয়ার করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, এবারের দাবানলের ছবি এটি। তবে ছবিটি আসলে ২০১৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার তাসমানিয়ায় ঘটা দাবানলের সময় তোলা হয়েছিল।