পশ্চিমবঙ্গে ধর্মঘটে পুলিশই ভাঙল গাড়ি

কলকাতার যাদবপুরে সড়কে আগুন জ্বালিয়ে ধর্মঘটিদের পিকেটিং। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
কলকাতার যাদবপুরে সড়কে আগুন জ্বালিয়ে ধর্মঘটিদের পিকেটিং। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) ও জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) বাতিলসহ কেন্দ্রীয় সরকারের জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে বুধবার পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতজুড়ে ২৪ ঘণ্টার সাধারণ ধর্মঘট পালিত হয়েছে। পুলিশ-ধর্মঘটি মানুষের সংঘর্ষের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, উর্দিপরা পুলিশ গাড়ি ভাঙচুর করছে। এ নিয়ে তুমুল বিতর্ক চলছে।

ভারতের ১০টি কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনের ডাকে ১৪ দফা দাবিতে ২৪ ঘণ্টার এই ধর্মঘট পালিত হয়। এই ধর্মঘটে সমর্থন দেয় পশ্চিমবঙ্গের ১৭টি বাম দলসহ সারা দেশের ৬০টি বামপন্থী ছাত্রসংগঠন ও ১৭৫টি শ্রমিক সংগঠন। এ ছাড়া বাম দল, কংগ্রেস, ডিএমকে, শিবসেনাসহ দেশের বিভিন্ন রাজ্যের বহু আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ধর্মঘটে সমর্থন দেয়।

১৪ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, সিএএ-এনআরসি-এনপিআর বাতিল, বেকার সমস্যার দ্রুত সমাধান, দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি রোধ, অর্থনৈতিক মন্দা নিয়ন্ত্রণ, রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পকারখানা বেসরকারি না করা, শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি ইত্যাদি।

পশ্চিমবঙ্গে বাম দল ও কংগ্রেস এই ধর্মঘটের পক্ষে নামলেও বিরোধিতা করে তৃণমূল ও বিজেপি।

ধর্মঘট ঘিরে সবচেয়ে বেশি সংঘর্ষ হয় পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলার কালিয়াচকের সুজাপুরে। সুজাপুর কংগ্রেসের দুর্গ বলে পরিচিত। এদিন ধর্মঘটিরা সুজাপুরের ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। তখন সুজাপুর বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে ছিল প্রচুর বাস-ট্যাক্সি। একপর্যায়ে বাম ও কংগ্রেসের অবরোধ ভাঙতে পুলিশ নেমে পড়ে। তারা ধর্মঘটি লোকজনকে লাঠিপেটা করে। কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। এমনকি ফাঁকা গুলিও ছোড়ে। ধর্মঘটিরাও পাল্টা ইটপাথর ছোড়ে।

পুলিশ-ধর্মঘটিদের সংঘর্ষের পর সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। এতে টনক নড়ে রাজ্য প্রশাসনের।

ভিডিওতে দেখা যায়, উর্দিপরা পুলিশ গাড়ি ভাঙচুর করছে। বন্দুকের বাঁট ও ঢিল মেরে ভাঙা হচ্ছে গাড়ির কাচ।

ভিডিওটি প্রকাশ হওয়ার পর বাম দল ও কংগ্রেস দাবি করেছে, উত্তর প্রদেশের যোগী সরকারের কায়দায় চলছে বাংলার পুলিশ। ধর্মঘটিদের ওপর দোষ চাপাতে পুলিশই গাড়ি ভাঙচুর করছে।

স্থানীয় তৃণমূল নেতারা এই কথা মানতে না চাইলেও পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া স্বীকার করে বলেছেন, কয়েকজন পুলিশ কনস্টেবল ভাঙচুর করেছেন। দোষী পুলিশ সদস্যদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিজেপিও এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছে। বিজেপির জাতীয় সম্পাদক রাহুল সিনহা বলেছেন, পুলিশ যদি এমন কাজ করে, তবে প্রশাসনকে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে।

অন্যদিকে পুলিশ দাবি করেছে, তাদের ৫টি ভ্যানে আগুন লাগানো হয়েছে। পুলিশের ৯ জন সদস্য আহত হয়েছেন।

ঘটনার পর তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, পুলিশ যদি এই কাজ করে থাকে, তবে তা খতিয়ে দেখতে হবে। পুলিশকে কারা প্ররোচনা দিয়েছে, তাও খতিয়ে দেখতে হবে। তদন্তের আগে কোনো মন্তব্য করা যায় না।

সিপিএমের নেতা মহম্মদ সেলিম বলেছেন, ‘ভিডিওতে দেখা গেছে, পুলিশ গাড়ি ভাঙছে। এরপর মুখ্যমন্ত্রী কীভাবে প্রতিবাদীদের জ্ঞান দেবেন?’

কংগ্রেস ও সিপিএম দাবি করেছে, তারা শান্তিপূর্ণ ধর্মঘট করছিল। তারা গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত নয়। এবার পরিষ্কার হয়ে গেল, কারা ধর্মঘটিদের ওপর দোষ চাপাতে গাড়ি ভাঙচুর করেছে, আগুন লাগিয়েছে।