দীপিকার গুণ গেয়ে এ কী বিপদ

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র আসিফ গফুর। ছবি: টুইটার
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র আসিফ গফুর। ছবি: টুইটার

দীপিকা পাড়ুকোন হালে যে সাহস দেখিয়েছেন, এতে সাহসী বলে তাঁর গুণ গাওয়াটা কি দোষের কিছু? কিন্তু পাকিস্তানি সেনা মুখপাত্র আসিফ গফুর দীপিকার প্রশংসায় টুইট করে পড়ে গেছেন বিপাকে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায়, টুইটই মুছে ফেলেন তিনি।

বিজেপির সমর্থনপুষ্ট ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের (এবিভিপি) সশস্ত্র আক্রমণের শিকার হন দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) শিক্ষার্থীরা। দীপিকা পাশে দাঁড়ান তাঁদের। তা সমর্থনে টুইট করে বেকায়দায় পড়েন মেজর জেনারেল আসিফ গফুর। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিদ্রূপের মুখে সেই টুইট মুছে দেন তিনি। তবে ততক্ষণে টুইট ছড়িয়ে পড়ে অনলাইনে।

এবিভিপির সশস্ত্র আক্রমণের পর জেএনইউর শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানো দীপিকার সমর্থনে টুইটারে হ্যাশট্যাগ দিতে গিয়ে দীপিকা পাড়ুকোনের নামের বানান ভুল করলে হাসি হুল্লোড় পড়ে যায়। পরে টুইট সরিয়ে নেন।

আসিফ গফুরের টুইট। টুইটার
আসিফ গফুরের টুইট। টুইটার

গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জেএনইউর আন্দোলনরত আক্রান্ত বামপন্থী ছাত্রসংগঠনের সভানেত্রী ঐশী ঘোষের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন দীপিকা।

ছাত্রদের সঙ্গে দেখা করতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জেএনইউতে যান দীপিকা। মুক্তিপ্রতীক্ষিত ছবি ‘ছপাক’-এর প্রচারে দিল্লি গিয়েছিলেন তিনি। এর পরই গেরুয়া বাহিনীর চক্ষুশূল হয়ে ওঠেন দীপিকা।

দীপিকার জেএনইউ সফরের প্রশংসা করে বুধবার আসিফ গাফুর লেখেন, ‘ছাত্র-যুবদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য দীপিকা আপনাকে সালাম। কঠিন সময় সাহসিকতার প্রমাণ দিয়ে নিজেকে শ্রদ্ধার আসনে বসিয়েছেন আপনি। সবার ওপরে থাকুক মানবিকতা।’

জেএনইউর ঐশী ঘোষের কাছে গিয়ে সমর্থনের বার্তা দিয়ে দীপিকা বলেছেন, ‘অত্যাচারিতদের পাশে আছি।’ ফেসবুকে সেই ছবি পোস্ট করে ঐশী লেখেন, ‘প্রতিটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে মুখ খুলুন।’

কিন্তু টুইটে হ্যাশট্যাগ দিতে গিয়ে দীপিকার ‘পাড়ুকোন’ অংশের বানান ভুল করে বসেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র। শুরু হয় সমালোচনা। নানাভাবে গফুরের টুইটটি নিয়ে রসিকতায় মেতে ওঠেন ভারতীয় ও পাকিস্তানিরা। অবশেষে টুইটটি তিনি মুছে ফেলেন।

উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা দীপিকার সিনেমা বয়কটের ডাক দিয়েছেন। দিল্লি বিজেপির মুখপাত্র তেজিন্দর পাল সিং বলেছেন, দীপিকার অপরাধ তিনি ‘দেশদ্রোহী’ ও ‘টুকরে টুকরে গ্যাংয়ের’ পাশে সমর্থনের ডালি নিয়ে দাঁড়িয়েছেন। এই ‘অপরাধে’ তাঁর সব সিনেমা বর্জন করা হোক। এই আহ্বানে টুইটারে গলা মিলিয়েছেন অনেকেই। আবার বিপক্ষেও শুরু হয়েছে সমর্থনের বন্যা। অ্যাসিড-আক্রান্তদের নিয়ে গুলজার-রাখীর মেয়ে মেঘনার সাম্প্রতিক সিনেমা ‘ছপাক’ এই সপ্তাহে মুক্তি পাবে। দীপিকার পক্ষে থাকা লোকজন বলছেন, এই সিনেমা হিট হবেই। আর সেটাই হবে ‘ফ্যাসিবাদের’ বিরুদ্ধে ‘গণতন্ত্রী’ ও ‘অসাম্প্রদায়িক’ মানুষের মোক্ষম জবাব।

গত মঙ্গলবার জেএনইউর বামপন্থী ছাত্রসংগঠনের আক্রান্ত সভানেত্রী ঐশী ঘোষের পাশে দাঁড়ান দীপিকা। ছবি: টুইটার
গত মঙ্গলবার জেএনইউর বামপন্থী ছাত্রসংগঠনের আক্রান্ত সভানেত্রী ঐশী ঘোষের পাশে দাঁড়ান দীপিকা। ছবি: টুইটার

বিজেপির হুংকারে দীপিকা অবশ্য মোটেই ভীত নন। তিনি বলেছেন, ‘এটা দেখে গর্ব হচ্ছে, মানুষ নিজেদের মতামত জানাতে এগিয়ে আসছে। তারা আর ভয় পাচ্ছে না। যার মত যা-ই হোক না কেন, সবাই যে দেশ নিয়ে ভাবছেন, সেটাই বড় কথা। পরিবর্তনের জন্য মতামত স্পষ্ট করে বলা দরকার। ’

জেএনইউর ঐশী ঘোষের কাছে গিয়ে সমর্থনের বার্তা দিয়ে দীপিকা বলেছেন, ‘অত্যাচারিতদের পাশে আছি।’ ফেসবুকে সেই ছবি পোস্ট করে ঐশী লেখেন, ‘প্রতিটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে মুখ খুলুন।’