হ্যারি-মেগান কানাডায়, সমাধান খুঁজছেন রানি

প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কেল। ছবি: এএফপি
প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কেল। ছবি: এএফপি

রাজপরিবারে তাঁদের ভবিষ্যৎ ভূমিকা কী হবে, এ আলোচনার মধ্যেই কানাডায় ফিরে গেলেন ব্রিটিশ রাজবধূ মেগান মার্কেল। ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্য প্রিন্স হ্যারি ও তাঁর স্ত্রী মেগান মার্কেল গত বুধবার এক বিবৃতিতে রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যের পদ থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এ নিয়ে বিস্ময় সৃষ্টি হয়। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে রাজপরিবারের কারও সঙ্গে তাঁরা কোনো ধরনের আলোচনা করেননি বলে জানা গেছে।

আজ শুক্রবার বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, এই পরিস্থিতির মধ্যে মেগান মার্কেল কানাডায় ফিরে গেছেন। তাঁদের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ হ্যারির বাবা ও ভাইকে একটি কার্যকর সমাধান খুঁজে বের করার নির্দেশ দেওয়ার পর মেগানের কানাডায় ফিরে যাওয়ার ঘটনা ঘটল। বড়দিন উদযাপনের জন্য ছেলে আর্চিকে নিয়ে ডিউক অব সাসেক্স হ্যারি (৩৫) ও স্ত্রী ডাচেস অব সাসেক্স মেগান (৩৮) কানাডায় ছিলেন। মাত্র গত মঙ্গলবার তাঁরা কানাডা থেকে যুক্তরাজ্যে ফিরে আসেন।

হ্যারি ও মেগানের ঘোষণায় রাজপরিবার ‘ব্যথিত’ বলে জানা গেছে।
রাজপরিবার সূত্রে বিবিসি জেনেছে, হ্যারি ও মেগান ব্যক্তিগত এই বিবৃতি দেওয়ার আগে রাজপরিবারের কোনো সদস্যের সঙ্গে আলোচনা করেননি।

সিংহাসনের উত্তরাধিকারের তালিকায় আছেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের দুই নাতি প্রিন্স উইলিয়াম ও প্রিন্স হ্যারি। সে অনুযায়ী প্রিন্স উইলিয়াম ও তাঁর স্ত্রী কেট, প্রিন্স হ্যারি ও তাঁর স্ত্রী মেগান রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্য হিসেবে বিবেচিত হন। তাঁদের নির্দিষ্ট কিছু রাজকীয় দায়িত্ব পালন করার বাধ্যবাধকতা থাকে। হ্যারি-মেগান এই জ্যেষ্ঠ সদস্যের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা জানিয়েছেন। এর অর্থ দাঁড়ায়, তাঁদের ওপর থাকা রাজকীয় দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চাইছেন তাঁরা।

বুধবার প্রিন্স হ্যারি ও মেগান বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা পরস্পরের সঙ্গে অনেক আলোচনার পর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটি বহু মাসের আলোচনার প্রতিচ্ছবি। আমরা রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্য হিসেবে পদত্যাগ করলেও রানিকে সমর্থন করা অব্যাহত রাখতে চাই। আমরা আর্থিকভাবে স্বাধীন হওয়ার জন্য কাজ করার পরিকল্পনা নিয়েছি।’ বিবৃতিতে তাঁরা জানান, তাঁরা যুক্তরাজ্য ও উত্তর আমেরিকার মধ্যে সময় ভাগাভাগি করে থাকতে চান।

ছেলে আর্চি জন্মের পরপর প্রিন্স হ্যারি ও মেগান। ছবি: এএফপি
ছেলে আর্চি জন্মের পরপর প্রিন্স হ্যারি ও মেগান। ছবি: এএফপি

এই দম্পতির এমন ঘোষণার ৪০ মিনিটের মাথায় বাকিংহাম প্যালেস আরেকটি বিবৃতি দিয়ে জানায়, ‘হ্যারি-মেগানের ভাবনাটি প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। তাঁরা ভিন্নভাবে থাকার ইচ্ছা পোষণ করছেন, সেটি আমরা বুঝতে পারছি। তবে এ ধরনের জটিল বিষয় নিয়ে আরেকটু সময় নিয়ে কাজ করতে হবে।’

গণমাধ্যমের বাড়াবাড়ি নিয়ে কিছুটা বিরক্ত ছিলেন হ্যারি-মেগান। ২০১৮ সালের মে মাসে হ্যারি-মেগানের বিয়ে হয়। এর এক বছরের মাথায় ছেলে আর্চির জন্ম। এই দম্পতিকে নিয়ে গণমাধ্যমে অনেক সময়ই নেতিবাচক খবর প্রকাশ করা হয়েছে। ভিন্ন দেশের ও শ্বেতাঙ্গ না হওয়ায় নানা ধরনের নেতিবাচক কথা শুনতে হয়েছে মেগান মার্কেলকে। গণমাধ্যমের আলো থেকে নিজেদের ও সন্তান আর্চিকে আড়ালে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন তাঁরা। ধারণা করা হচ্ছে, এরই অংশ হিসেবে এবারের বড়দিন তাঁরা যুক্তরাজ্যে রাজপরিবারের সঙ্গে না কাটিয়ে কানাডায় কাটান। ছয় সপ্তাহ পর গত মঙ্গলবার হ্যারি ও মেগান যুক্তরাজ্যে ফিরে আসেন। সাবেক অভিনেত্রী মার্কিন নাগরিক মেগান কানাডার টরন্টোয় বসবাস করতেন। সেখানেই তিনি জনপ্রিয় মার্কিন ধারাবাহিক নাটক ‘স্যুটস’এ অভিনয় করেছিলেন।

তবে রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যের পদ থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া সত্ত্বেও হ্যারি সিংহাসনের উত্তরাধিকারের সারিতে ষষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে থাকবেন বলে জানা গেছে।

হ্যারি ও মেগান ঘোষণা দেন, পদ ছেড়ে দেওয়ায় তাঁরা রাজপরিবারের আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব পালনের জন্য সরকারের কাছ থেকে বরাদ্দকৃত অর্থ ‘সার্বভৌম অনুদান’ (সোভেরেইন গ্র্যান্ট) আর গ্রহণ করবেন না। রাজপরিবারের সদস্যদের আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব পাালনের জন্য ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সোভেরেইন গ্র্যান্ট হিসেবে ৮ কোটি ২০ লাখ পাউন্ড (৯০৯ কোটি ৫৭ লাখ টাকার বেশি) বারদ্দ দেওয়া হয়।