কাশ্মীরীদের পাশে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। ছবি: রয়টার্স
ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। ছবি: রয়টার্স

বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের কাশ্মীর সফর চলাকালে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন, এক সপ্তাহের মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারকে সেখানকার যাবতীয় নিষেধাজ্ঞা পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন পেশ করতে হবে।

তিন বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ শুক্রবার স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, অনির্দিষ্টকালের জন্য ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা যায় না। ইন্টারনেট পরিষেবা নাগরিকদের মৌলিক অধিকার। কারণ, এটি ব্যক্তির মতপ্রকাশের স্বাধীনতারই অঙ্গ।

সুপ্রিম কোর্ট এই নির্দেশও দিয়েছেন, ১৪৪ ধারাসহ জম্মু-কাশ্মীরে কোন কোন নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে, সরকারকে তা প্রকাশ্যে জানাতে হবে।

ভারতের সর্বোচ্চ আদালত দ্ব্যর্থহীনভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, মতপার্থক্য দমন করার অস্ত্র হিসেবে নিষেধাজ্ঞা বলবৎ করা যায় না। অনির্দিষ্টকালের জন্য ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা ক্ষমতার অপব্যবহারেরই নামান্তর।

পাঁচ মাস আগে গত বছরের ৫ আগস্ট জম্মু-কাশ্মীর দ্বিখণ্ডিত করা হয়। পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের মর্যাদা কেড়ে নিয়ে গঠিত হয় দুটি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। সেই সঙ্গে সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করে কেড়ে নেওয়া হয় ওই রাজ্যের বিশেষ মর্যাদা।

সেদিন থেকেই জম্মু-কাশ্মীর অবরুদ্ধ। বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞায় মুড়ে দেওয়া হয় কাশ্মীরকে। বন্ধ হয়ে যায় যাবতীয় টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থাসহ ইন্টারনেট পরিষেবা।

নিষেধাজ্ঞা জারি রাখার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেন সেখানকার (রাজ্য) কংগ্রেস সাংসদ গুলাম নবি আজাদ, কাশ্মীর টাইমস পত্রিকার সম্পাদক অনুরাধা ভাসিনসহ অন্যরা।

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এন ভি রামানা, বিচারপতি আর সুভাষ রেড্ডি ও বিচারপতি বি আর গাভাইয়ের ডিভিশন বেঞ্চ এর আগে সরকারের কাছে কাশ্মীরের পরিস্থিতি জানতে চেয়েছিলেন। শুক্রবার বিচারপতি রামানা বলেন, ‘নাগরিক স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা রক্ষার মধ্যে একটা ভারসাম্য থাকা জরুরি। নাগরিক স্বাধীনতা রক্ষা করাও আমাদের কাজ।’

এক সপ্তাহের মধ্যে নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কিত প্রতিবেদন পেশের নির্দেশ দেওয়ায় বিরোধীরা উৎফুল্ল। কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ এই নির্দেশকে ‘ঐতিহাসিক’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেছেন, সুখের কথা সর্বোচ্চ আদালত সরকারের চাপ স্বীকার করেননি। কংগ্রেস নেতা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জানতে চান, এই পাঁচ মাসে রাজ্যে যে ১ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ক্ষতি হলো, কে সেই ক্ষতি পূরণ করবে?

কাশ্মীর পরিস্থিতি স্বাভাবিক বলে কেন্দ্রীয় সরকার বারবার দাবি করে আসছে। গত বৃহস্পতিবার ১৫ দেশের রাষ্ট্রদূতদের কেন্দ্রীয় সরকার কাশ্মীর নিয়ে যায়। রাষ্ট্রদূতেরা কাশ্মীর সফর করার সময়ই সুপ্রিম কোর্ট যে নির্দেশ দিলেন, তাতে স্পষ্ট—উপত্যকায় স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসতে এখনো অনেক সময় বাকি রয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ কেন্দ্রীয় সরকারকে নিঃসন্দেহে চাপের মুখে ফেলল।