ব্রেক্সিট বিল পাস: ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ নিশ্চিত

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে বিচ্ছেদকে (ব্রেক্সিট) ঘিরে তিন বছরের বেশি সময় ধরে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে যে তুমুল উত্তেজনা চলছিল, অবশেষে কোনো ধরনের হইচই কিংবা শক্ত বিরোধিতা ছাড়াই সেই বিচ্ছেদ নিশ্চিত হয়ে গেল।

বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে ৯৯ ভোটের বিশাল ব্যবধানে পাস হয়েছে ব্রেক্সিট বিল। এখন কেবল বিলটির পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ হাউস অব লর্ডসের আনুষ্ঠানিকতা অতিক্রম করার পালা, যা আগামী সপ্তাহের মধ্যেই সম্পন্ন করার কথা রয়েছে। ব্রেক্সিট বিল অনুযায়ী, আগামী ৩১ জানুয়ারি স্থানীয় সময় রাত ১১টায় ইইউর সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ কার্যকর হবে।

মূলত গত ১২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সাধারণ নির্বাচনে ব্রেক্সিটপন্থী কনজারভেটিভ পার্টি বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফেরামাত্রই ব্রেক্সিট কার্যকরের বাধা দূর হয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন নির্বাচনের আগেই কনজারভেটিভ পার্টির প্রার্থীদের কাছ থেকে ব্রেক্সিট বিলের সমর্থনে মুচলেকা নিয়ে নেন।

হাউস অব কমন্সের চূড়ান্ত ভোটাভুটিতে বিলের পক্ষে ভোট পড়ে ৩৩০টি। বিলটির সমর্থনে ভোটদাতাদের সবাই কনজারভেটিভ পার্টির আইনপ্রণেতা। আর বিপক্ষে ছিল ২৩১ ভোট।

এই বিলে ইইউর সঙ্গে দেনা-পাওনা, যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত ইইউর নাগরিক ও ইইউভুক্ত অন্যান্য দেশে অবস্থানরত ব্রিটিশ নাগরিকদের অধিকার এবং আয়ারল্যান্ড সীমান্ত উন্মুক্ত রাখতে নর্দান আয়ারল্যান্ডের জন্য শুল্ক ব্যবস্থাপনার বিষয়টি নির্ধারণ করা হয়েছে। বিলটির সবচেয়ে লক্ষণীয় দিক হলো, ইইউর সঙ্গে ভবিষ্যৎ বাণিজ্য সম্পর্ক নির্ধারণ করতে মাত্র ১১ মাস সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে ওই ১১ মাস ইইউর সঙ্গে বর্তমান বাণিজ্য সম্পর্ক বিদ্যমান থাকবে। এই সময়ে ইইউর বাজেটেও নির্ধারিত অর্থ প্রদান করে যাবে যুক্তরাজ্য। তবে ৩১ জানুয়ারির পর ইইউর সিদ্ধান্ত গ্রহণ–প্রক্রিয়ায় যুক্তরাজ্যের আর কোনো অংশগ্রহণ থাকবে না।

ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নির্ধারণে মাত্র ১১ মাস সময় বেঁধে দেওয়ায় এখনো চুক্তিবিহীন বিচ্ছেদের ঝুঁকি দেখছেন বিরোধীরা। বিরোধী দলগুলো বলছে, নির্ধারিত সময়ে ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নির্ধারণে ব্যর্থ হলে চলতি বছরের ডিসেম্বরেই বিদ্যমান সব সম্পর্কের সুতা ছিঁড়ে যাবে।

গত বুধবার যুক্তরাজ্য সফরে এসে ইউরোপিয়ান কমিশনের নতুন প্রেসিডেন্ট আর্সুলা ভন ডার লিয়নও সতর্ক করেছেন যে, মাত্র ১১ মাসে ভবিষ্যৎ সম্পর্ক চূড়ান্ত করা অসম্ভব হতে পারে। তবে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, নতুন সম্পর্ক নির্ধারণে ১১ মাস যথেষ্ট সময়।