চারটি দূতাবাসে হামলার পরিকল্পনা ছিল ইরানের: ট্রাম্প

ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

ইরান চারটি মার্কিন দূতাবাসে হামলার পরিকল্পনা করেছিল বলে দাবি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল ট্রাম্প। ইরানের এই পরিকল্পনাকে কেন্দ্র করে কাশেম সোলাইমানি হত্যার ঘটনা ঘটেছে বলেও তিনি দাবি করেন। এদিকে ইরানের নির্মাণসামগ্রী, উৎপাদিত পণ্য ও খনিজ শিল্পের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

৩ জানুয়ারি ইরাকের বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে মার্কিন ড্রোন হামলায় ইরানের জাতীয় বীর কাশেম সোলাইমানি নিহত হন। এর মাত্র দুদিন আগে বাগদাদে মার্কিন দূতাবাসের ওপর বিক্ষোভকারীরদের হামলার ঘটনা ঘটে। ওই বিক্ষোভটি হয়েছিল মার্কিন হামলায় ইরান–সমর্থিত খাতিব হেজবুল্লাহর কয়েক সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে। সোলাইমানি ছিলেন ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের কুদস ফোর্সের প্রধান। তাঁর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। সোলাইমানিকে হত্যার পক্ষে ট্রাম্প বারবারই বলে যাচ্ছেন, সোলাইমানি যুক্তরাষ্ট্রের ওপর হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন বলে গোয়েন্দা তথ্য ছিল তাঁর কাছে। তবে তিনি এ ব্যাপারে কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি।

স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবারও একই কথার পুনরাবৃত্তি করেছেন ট্রাম্প। তবে হামলার লক্ষ্যস্থল হিসেবে গতকাল সুনির্দিষ্ট করে দূতাবাসের কথা উল্লেখ করেছেন তিনি।

ফক্স নিউজের বরাত দিয়ে আজ শনিবার বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়েছে, ইরানি জেনারেল সোলাইমানি হত্যার সময় চারটি মার্কিন দূতাবাসে হামলার পরিকল্পনা ছিল ইরানের। এই হুমকি যুক্তরাষ্ট্রকে শুক্রবারের (৩ জানুয়ারি) ড্রোন হামলার দিকে ঠেলে নিয়েছে কি না, প্রশ্ন করা হলে জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি সেটা প্রকাশ করতে পারি। আমার বিশ্বাস (হামলার পরিকল্পনায় ছিল) চারটি দূতাবাস।’

গতকাল হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প এই প্রথম মার্কিন দূতাবাসে ইরান হামলার পরিকল্পনা করেছিল বলে দাবি করেন। ওই রাতে ওহাইও-তে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশেও তিনি একই দাবি করেন।

গতকাল হোয়াইট হাউসে পরিবেশবিষয়ক একটি অনুষ্ঠান হচ্ছিল। ওই অনুষ্ঠানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তিনি হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন, কারণ ইরান মার্কিন ‘দূতাবাস উড়িয়ে দিতে চেয়েছিল’। তিনি বলেন, সোলাইমানি হত্যার কয়েক দিন আগে বাগদাদে মার্কিন দূতাবাসে বিক্ষোভকারীদের হামলার ঘটনা ইরানই ঘটিয়েছিল।

ট্রাম্প বলেন, ‘আপনারা জানেন, কে সেই ঘটনা ঘটিয়েছিলেন। ওই মানুষটি এখন আর কোথাও নেই। ঠিক আছে? এবং এমন আরও কয়েকটি দূতাবাস তাঁর পরিকল্পনায় (হামলার জন্য) ছিল।’

পরে ওহাইও অঙ্গরাজ্যে এক সমাবেশে ট্রাম্প বলেন, ‘সোলাইমানি নতুন হামলার জন্য সক্রিয়ভাবে পরিকল্পনা করছিলেন এবং তিনি গুরুতরভাবে আমাদের দূতাবাসগুলোর দিকে নজর রেখেছিলেন। শুধু বাগদাদের দূতাবাসই নয়।’

আইনপ্রণেতাদের না জানিয়ে ট্রাম্প সোলাইমানি হত্যার অভিযান পরিচালনা করেছেন, ডেমোক্র্যাটদের এমন অভিযোগের ব্যাপারে বিদ্রূপ করে তিনি বলেন, ডেমোক্র্যাটরা তাহলে মার্কিন সামরিক পরিকল্পনার তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশ করে দিত।

চারটি দূতাবাসে ইরানের হামলার পরিকল্পনার ব্যাপারে ট্রাম্পের দাবিকে সমর্থন করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও একই কথা বলেন। ইরানের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দূতাবাসগুলোতে হামলার পরিকল্পনাসহ হুমকির ব্যাপারে তাঁদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য ছিল।

তবে ওই হামলার ব্যাপারে ডেমোক্র্যাটরা জানান, তাঁরা গোয়েন্দা তথ্যে দূতাবাসে হামলার পরিকল্পনার কোনো প্রমাণ পাননি।

শুক্রবার ইরানের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়ে মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্টিভ মুনচিন বলেছেন, দুনিয়াজুড়ে ইরানের সন্ত্রাসী তৎপরতা রোধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ইরানের নির্মাণসামগ্রী, উৎপাদিত পণ্য ও খনিজ শিল্প এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেন, এবার নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্যবস্তু ইরানের ‘অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা যন্ত্রপাতি’।