ইরানে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ, ফারসিতে ট্রাম্পের টুইট

তেহরানে আমিরকবির ইউনিভার্সিটির সামনে সরকারবিরোধী শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। ছবি: এএফপি
তেহরানে আমিরকবির ইউনিভার্সিটির সামনে সরকারবিরোধী শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। ছবি: এএফপি

ইউক্রেনের উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় ইরানে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে উড়োজাহাজটি ভূপাতিত হওয়ার ঘটনা নিয়ে শুরুতে সরকারের ‘মিথ্যা’ বলার নিন্দা জানান বিক্ষোভকারীরা। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানী তেহরানে হাজারো বিক্ষোভকারী সরকারকে ‘মিথ্যুক’ আখ্যায়িত করে বিক্ষোভ করেন।

আজ রোববার বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়েছে, কমপক্ষে দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে সড়ক অবরোধ করে এ বিক্ষোভ হয়। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে পুলিশ। এদিকে সরকারবিরোধী বিক্ষোভের প্রতি সমর্থন দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইংরেজি ও ফারসি ভাষায় টুইট করেছেন।

গতকাল সকালে ইরান স্বীকার করে, ইউক্রেনের উড়োজাহাজটিতে অনিচ্ছাকৃত ভুল করে তারা ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে। গত বুধবার তেহরানের ইমাম খোমেনি বিমানবন্দর থেকে উড়োজাহাজটি উড্ডয়নের পরপর ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বিধ্বস্ত হয়ে ১৭৬ আরোহীর সবাই মারা যান। যাত্রীদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন ইরানি ও ইরানি বংশোদ্ভূত কানাডীয়। এ ছাড়া উড়োজাহাজটিতে ইউক্রেন, যুক্তরাজ্য, আফগানিস্তান ও জার্মানির নাগরিক ছিলেন। একাধিক গোয়েন্দা সূত্রের ভিত্তিতে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো গত বৃহস্পতিবার উড়োজাহাজটি ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বিধ্বস্ত হওয়ার দাবি করলে পশ্চিমা নেতারা এতে সমর্থন দেন। তবে তাঁরা এই সন্দেহও প্রকাশ করেন যে, হামলাটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নাও হতে পারে। ইরান বারবারই উড়োজাহাজ ভূপাতিত করার অভিযোগ অস্বীকার করে। শেষ পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ ও পশ্চিমা চাপে ঘটনার দুদিন পর ইরান স্বীকার করে মার্কিন যুদ্ধবিমান ভেবে ভুল করে ইউক্রেনের যাত্রীবাহী উড়োজাহাজে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়। এ ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিকে বিচারের আওতায় আনারও ঘোষণা দিয়েছে ইরান।

ইরানি জেনারেল কাশেম সোলাইমানিকে হত্যার পর ইরানের ৫২টি স্থাপনা মার্কিন হামলার লক্ষ্যবস্তুতে রয়েছে বলেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি এ মন্তব্য করে বেশ বিপাকে পড়েছিলেন। তাঁর ওই মন্তব্য নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমালোচনার ঝড় উঠে। এই ইস্যুতে তারা ইরানের জনগণ সরকারের পক্ষে অবস্থান নেয়। কিন্তু উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় সেই সব ছাপিয়ে নিজ দেশেও সমালোচনার মুখে পড়েছে ইরানি সরকার। বিশেষ করে নিহত যাত্রীদের বেশির ভাগই ইরানি হওয়ায় সাধারণ জনগণ এ ঘটনায় বেশ ক্ষুব্ধ। কাল বিক্ষোভে সেটারই বহিঃপ্রকাশ দেখা গেছে। এ ঘটনায় ‘লাভবান’ ট্রাম্প বিক্ষোভের প্রতি সমর্থন জানিয়ে টুইট করেছেন।

তেহরানে শরিফ ইউনিভার্সিটি এবং আমিরকবির ইউনিভার্সিটির বাইরে শিক্ষার্থীরা শুরুতে উড়োজাহাজের নিহত আরোহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সমবেত হন। সন্ধ্যায় তা বিক্ষোভে রূপ নেয়। ইরানের আধা সরকারি বার্তা সংস্থা ‘ফারস’ অস্থিতিশীল পরিস্থিতির বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করে জানায়, ইরানি নেতাদের বিরুদ্ধে হাজারো মানুষ স্লোগান দিতে থাকে এবং তারা নিহত জেনারেল সোলাইমানির ছবি ছিঁড়ে ফেলে।

শিক্ষার্থীরা দাবি জানাতে থাকেন, উড়োজাহাজটিকে ভূপাতিত করার সঙ্গে যারা জড়িত এবং এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে চেয়েছিল যারা, তাদের বিচার হতে হবে। তারা দেশটির সুপ্রিম নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে উল্লেখ করে ‘কমান্ডার ইন-চিফ পদত্যাগ করো’, ‘মিথ্যুকেরা মরো’ স্লোগান দিতে থাকেন। ‘ফারস’ জানায়, বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে পুলিশ। কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সরকারি কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা ক্ষোভপ্রকাশ করেন। একজন টুইটারে লেখেন, ‘আমার দেশের কর্তৃপক্ষকে আমি কখনোই ক্ষমা করব না, যারা ঘটনার সঙ্গে ছিল এবং মিথ্যা বলেছে।’

বিক্ষোভের প্রতিক্রিয়ায় ইংরেজি ও ফারসিতে ট্রাম্পের টুইট, ‘সাহসী এবং দুর্ভোগের শিকার ইরানি জনগণের প্রতি: প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার শুরু থেকেই আমি আপনাদের পাশে আছি এবং আমার সরকার আপনাদের পাশে সব সময় থাকবে। আমরা আপনাদের বিক্ষোভ খুব কাছ থেকে লক্ষ্য করছি। আপনাদের সাহস উদ্দীপনা জোগায়।’

বিক্ষোভের ভিডিও পোস্ট করে টুইট করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। তিনি বলেন, ‘ ইরানি জনগণের বক্তব্য স্পষ্ট। তারা এই সরকারের মিথ্যা, দুর্নীতি, নির্বুদ্ধিতা এবং খামেনির অপশাসনের অধীনে রেভল্যুশনারি গার্ডের নিষ্ঠুরতায় বীতশ্রদ্ধ। আমরা ইরানি জনগণের পাশে আছি, যারা ভালো একটি ভবিষ্যৎ পাওয়ার যোগ্য।’