'প্রতিবাদের নামে সম্পদ নষ্ট করলে গুলি'

পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের নামে সরকারি সম্পদ নষ্ট করলে গুলি ছোড়া হবে বলে হুমকি দিয়েছেন রাজ্যের বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার রানাঘাটে বিজেপি আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এ হুমকি দেন।

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএএ) পক্ষে অভিনন্দন যাত্রা শেষে রানাঘাট কলেজের কাছে বিজেপি সমাবেশের আয়োজন করে। ওই সমাবেশে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ‘নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদের নামে সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করা হলে আসাম, উত্তর প্রদেশ ও কর্ণাটকের মতো এই রাজ্যে গুলি চালানো হবে।’ তিনি বলেন, ‘এই আইনের প্রতিবাদে রাজ্যে একটাও গুলি চলেনি। লাঠি চলেনি, এফআইআর হয়নি। কাউকে গ্রেপ্তারও করেনি পুলিশ। কেন করেনি? এটা কি কারও বাপের সম্পত্তি?’

ক্ষোভের সঙ্গে দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘মানুষের ট্যাক্সের টাকায় রেল-বাস, রেললাইন, রাস্তা তৈরি করা হয়ে থাকে। সব নষ্ট করে দিচ্ছে। আসাম, উত্তর প্রদেশ এবং কর্ণাটকে আমাদের সরকার এই সব নষ্টকারীদের গুলি করে মেরেছে। মামলা দিয়েছে। ওরা এখানে আসবে আর এখানকার সম্পত্তি নষ্ট করবে? জমিদারি পেয়েছে নাকি? তাই আমরা এই রাজ্যে ক্ষমতায় এলে আর বরদাশত করব না সম্পত্তি নষ্টকারীদের। গুলি করে মারব।’

দিলীপ ঘোষ বলেন, সিএএ ও এনআরসি (জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন আইন) বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে এই রাজ্যের ৫০০-৬০০ কোটি রুপির সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, ‘২০২১ সালের রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে ২০০টি আসনে জিতবে বিজেপি। এই রাজ্যে সরকার গড়বে বিজেপি। দুই কোটি অনুপ্রবেশকারী রয়েছে। এর মধ্যে এক কোটি রয়েছে এই রাজ্যে। তাদের ভোটের জন্য এখন দিদিমণি (পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) রাস্তায় হেঁটে বেড়াচ্ছেন।’

বিজেপির এই নেতা বলেন, ‘এখন তো ২০ হাজারের মতো মানুষ ভারতের জেলে রয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, সবাই নাগরিক। তাহলে আমি ওনাকে প্রশ্ন করছি, বিদেশি আইনে যাঁরা জেলে আটকে রয়েছেন, তাঁরা নাগরিক নন? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। শুধু ভাষণ দিয়ে যাচ্ছেন। আর হেঁটে যাচ্ছেন।’

দিলীপ ঘোষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘এক্সপায়ারি’ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কটাক্ষ করে বলেন, ‘২০২১ সালে ভোটগুরু প্রশান্ত কিশোর কেন স্বয়ং ভগবানও বাঁচাতে পারবেন না মমতাকে। ২০২১ সালে ২০০ আসন জিতে ক্ষমতায় আসবে বিজেপি।’

সিএএ ও এনআরসি বাতিলের দাবিতে এখনো ভারতজুড়ে চলছে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ মিছিল, সভা-সমাবেশ। পশ্চিমবঙ্গে সিএএ বাতিলের দাবিতে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস, জাতীয় কংগ্রেস, বাম দলসহ বিজেপিবিরোধী দলগুলো আন্দোলন করছে। আর আইনটির পক্ষে সমাবেশ করছে বিজেপি। তাদের দাবি, এই আইন করা হয়েছে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় কারণে যাঁরা এ দেশে এসেছেন, তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য। কারও নাগরিকত্ব হরণ করার জন্য নয়।

গতকাল কলকাতার পোর্ট ট্রাস্টের ১৫০ বছর পূর্তি উৎসবে যোগ দিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও একই কথা বলেছেন, এই আইন কারও নাগরিকত্ব হরণের জন্য করা হয়নি। নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য করা হয়েছে।

সংবিধান রক্ষায় খোলা চিঠি
ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বাতিলের দাবিতে খোলা চিঠি দিয়েছেন প্রখ্যাত অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুরসহ বিশিষ্টজনেরা। তাঁরা চিঠিতে ভারতের সংবিধান রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন। চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি জে চেলমেশ্বর, সাবেক মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এস ওয়াই কুরেশি, চলচ্চিত্র নির্দেশক আদুর গোপালকৃষ্ণনসহ আটজন।

‘সংবিধানের ৭০ বছর: এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত’ শীর্ষক খোলা চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘সংবিধান কি নেহাত সাধারণ কালিতে লেখা প্রশাসনিক পুস্তিকা, যা যেভাবে খুশি ব্যবহার করতে পারে সরকার? নাকি সংবিধান আসলে অসংখ্য শহীদদের রক্তে লেখা একটি পবিত্র বই, যাঁরা ধর্ম, জাতি, ভাষা বা অঞ্চলের ভেদাভেদ আদপেই মানতেন না।’