উড়োজাহাজ ভূপাতিত করার ঘটনায় কতজন গ্রেপ্তার জানায়নি ইরান

ইউক্রেনের উড়োজাহাজটি গত বুধবার রাজধানী তেহরানে ভূপাতিত করে ইরান। ছবি: রয়টার্স
ইউক্রেনের উড়োজাহাজটি গত বুধবার রাজধানী তেহরানে ভূপাতিত করে ইরান। ছবি: রয়টার্স

ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ইউক্রেনের যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ ভূপাতিত করার ঘটনায় ইরানের ওপর চাপ বাড়ছে ভেতরে-বাইরে। এই অবস্থায় গতকাল মঙ্গলবার দেশটি জানিয়েছে, এই ঘটনায় তারা কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে কতজনকে ও কখন গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তার কিছুই জানায়নি দেশটি।

এদিকে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে কোনো উত্তেজনা না থাকলে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনা না বাড়লে উড়োজাহাজটি ভূপাতিত হতো না। আরোহীরাও সবাই এখন বেঁচে থাকতেন। গত সোমবার কানাডার গ্লোবাল নিউজ টিভিকে এক সাক্ষাৎকারে ট্রুডো বলেন, পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত ইরান কেন প্রয়োজন, সে ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখন অত্যন্ত পরিষ্কার। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ওই অঞ্চলে যে উত্তেজনা তৈরি করেছে, তার ব্যবস্থাপনাও জরুরি।

ইউক্রেনের উড়োজাহাজটি গত বুধবার রাজধানী তেহরানে ভূপাতিত করে ইরান। উড়োজাহাজের ১৭৬ জন আরোহীর সবাই নিহত হন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে অধিকাংশই ইরান ও কানাডার নাগরিক। ইরাকের দুটি সামরিক ঘাঁটিতে চালানো ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই উড়োজাহাজটি ভূপাতিত করা হয়। ৩ জানুয়ারি ইরানের প্রভাবশালী রেভল্যুশনারি গার্ডসের কুদস শাখার প্রধান মেজর জেনারেল কাশেম সোলাইমানিকে হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে ইরাকে মার্কিন সেনা স্থাপনা লক্ষ্য করে ওই হামলা চালিয়েছিল ইরান।

সোলাইমানি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ইরানজুড়ে প্রতিশোধের জোরালো দাবি ওঠে। কিন্তু উড়োজাহাজ ভূপাতিত করার পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে গত শনিবার ইরান স্বীকার করে, তাদের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতেই উড়োজাহাজটি ভূপাতিত হয়েছে। এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন ইরানের জনগণ। সরকারের বিরুদ্ধে প্রথমে মিথ্যাচারের অভিযোগ এনে শনিবার থেকেই তেহরানসহ বিভিন্ন বড় শহরে বিক্ষোভ শুরু হয়। এসব বিক্ষোভ থেকে ইরানের সর্বোচ্চ আধ্যাত্মিক নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির পদত্যাগ দাবি করা হয়।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, তেহরানে গতকালও বিক্ষোভ হয়েছে। এ-সংক্রান্ত কিছু ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। দেশটির বিচার বিভাগ জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ৩০ জন বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে।

এই পরিস্থিতির মধ্যেই ইরানের বিচার বিভাগের মুখপাত্র গোলাম হোসেন ইসমাইলি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ব্যাপক তদন্ত হয়েছে। কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে কতজনকে ও কখন গ্রেপ্তার করা হয়েছে, কার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ, সেসবের বিস্তারিত তিনি জানাননি।

এর আগে প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি গতকাল টেলিভিশনে এক ভাষণে বলেন, উড়োজাহাজ ভূপাতিত করার ঘটনায় দায়ী সবাইকে সাজা ভোগ করতে হবে। তিনি বলেন, বিচার বিভাগের উচিত একটি বিশেষ আদালত গঠন করা, যাতে থাকবেন উচ্চপর্যায়ের বিচারক ও বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ। পুরো বিশ্ব এই প্রক্রিয়া দেখবে।

এদিকে ইরানের সঙ্গে ছয় জাতির পারমাণবিক চুক্তি রক্ষায় উদ্যোগী হয়েছে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি। দেশ তিনটি গতকাল এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, তারা চায় পারমাণবিক চুক্তিটি টিকে থাকুক। যুক্তরাষ্ট্র যেমন ‘সর্বোচ্চ চাপ’ প্রয়োগের কৌশল নিয়েছে, তারা সে পথে হাঁটতে চায় না।

২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি স্বাক্ষর করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, চীন, ফ্রান্স ও জার্মানি। ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজের দেশকে এই চুক্তি থেকে প্রত্যাহার করে নেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে পাঁচ ধাপে চুক্তিতে নির্ধারিত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের শর্ত লঙ্ঘন করে ইরান। সর্বশেষ লঙ্ঘনটি করা হয় জেনারেল সোলাইমানির হত্যাকাণ্ডের পর। এই পরিপ্রেক্ষিতে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত ইরান নিশ্চিত করতে এবং পারমাণবিক চুক্তি রক্ষায় যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি ওই কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টির উদ্যোগ নিল।