যুদ্ধ এড়াতে আলোচনায় আগ্রহী ইরান

ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। ছবি: রয়টার্স
ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। ছবি: রয়টার্স

ওয়াশিংটনের সঙ্গে তেহরানের চলমান উত্তেজনা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে আলোচনা সম্ভব বলে মত দিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। গতকাল বৃহস্পতিবার টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।

 হাসান রুহানি বলেছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে আলোচনা কঠিন হলেও তা সম্ভব। ‘যুদ্ধ কিংবা সামরিক সংঘাত প্রতিরোধে’ তেহরান প্রতিনিয়ত কাজ করছে বলেও জানান তিনি।

রুহানি এ সময় আরও বলেছেন, বিশ্বের শক্তিধর ছয় রাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের করা চুক্তির আগে যে পরিমাণ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছিল তেহরান, এখন তার চেয়েও বেশি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করা হচ্ছে।

২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, রাশিয়া, জার্মানি ও ফ্রান্সের কাছে ইউরেনিয়াম প্রকল্প সীমিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল ইরান। চুক্তি অনুযায়ী ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম চালিয়ে গেলেও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি না করার প্রতিশ্রুতি দেয় তেহরান। ওবামার আমলে স্বাক্ষরিত এই চুক্তিকে ‘ক্ষয়িষ্ণু ও পচনশীল’ আখ্যা দিয়ে ২০১৮ সালের মে মাসে তা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর নভেম্বর থেকে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল শুরু করে ওয়াশিংটন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই চুক্তির প্রতিশ্রুতি থেকে পর্যায়ক্রমে সরে যায় তেহরান। সবশেষ ইরানের শীর্ষ জেনারেল কাশেম সোলাইমানিকে হত্যার পর ওই চুক্তি পুরোপুরি না মানার ঘোষণা দেয় ইরান। কিন্তু এখন ইরান বলছে, আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেই ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তির বিধিনিষেধ মানবে দেশটি।

কিন্তু ইরান মস্ত বড় ভুলটা করে বসে ইউক্রেনের উড়োজাহাজ ভূপাতিত করার মাধ্যমে। ভুলবশত শত্রুপক্ষ যুক্তরাষ্ট্রের উড়োজাহাজ ভেবে সেটি বিধ্বস্তের ঘটনায় ১৭৬ জন নিহত হন, যাঁদের অধিকাংশই ছিলেন ইরানি। এ ঘটনায় ইরানে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।

শিগগিরই শাসকদের পতন: রেজা পাহলভি

এমন এক সময়ে ইরানের ক্ষমতাচ্যুত রাজতন্ত্রের উত্তরাধিকারী রেজা পাহলভি বলেছেন, কয়েক মাসের মধ্যে ইরানের বর্তমান শাসনব্যবস্থার পতন হবে। গত বুধবার এই ভবিষ্যদ্বাণী করে তিনি পশ্চিমা বিশ্বকে ইরান সরকারের সঙ্গে আলোচনা না করার আহ্বান জানান।

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে সংবাদ সম্মেলনে ইরানের সাবেক ক্রাউন প্রিন্স রেজা পাহলভি বলেন, গত নভেম্বরের বিক্ষোভ এবং ইউক্রেনের উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের জেরে এ মাসে নতুন করে শুরু হওয়া বিক্ষোভ তাঁকে ১৯৭৯ সালের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, যার মধ্য দিয়ে তাঁর বাবাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছিল।’

পাহলভি আরও বলেছেন, ‘আমার স্বদেশবাসীকে বুঝতে হবে, ইরানের শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন হবে না। এদের উৎখাত করতে হবে।’

এদিকে তেহরানে ইউক্রেনের উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ঘটনায় ইরানের কাছ থেকে ‘পূর্ণ সহযোগিতা’ পাওয়ার জন্য দেশটির ওপর চাপ প্রয়োগে কানাডা, ইউক্রেন, সুইডেন, আফগানিস্তান ও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের গতকাল বৃহস্পতিবার বৈঠক হওয়ার কথা ছিল।