আজীবন ক্ষমতায় থাকতে চান প্রেসিডেন্ট পুতিন?

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: রয়টার্স
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: রয়টার্স

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সংবিধান সংস্কারের ঘোষণা দেওয়ার পর প্রশ্ন উঠেছে, তিনি কি আজীবন ক্ষমতায় থাকতে চাইছেন। হয়তো। তবে এ জন্য তিনি খুঁটিনাটি পর্যবেক্ষণ করছেন।

পুতিন গত বুধবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন। তাঁর এই ভাষণ পুরো জাতিকে এবং দেশটির রাজনীতিকে একটা ঝাঁকুনি দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর বর্তমান ক্ষমতার আমল শেষ হওয়ার পরও তিনি যাতে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখতে পারেন, সেই জন্য পথ খুঁজছেন তিনি।

পুতিনের এই ঘোষণার পর তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদের মন্ত্রিসভার সবাই পদত্যাগ করেছেন। এখন নতুন প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন মিখাইল ভি মিশুস্তিন। তিনি ছিলেন দেশটির কেন্দ্রীয় কর বিভাগের প্রধান। খুব পরিচিত মুখ নন মিশুস্তিন। তবে বেশ দক্ষ তিনি।

প্রায় ২০ বছর ধরে রাশিয়ার ক্ষমতায় রয়েছেন পুতিন। এই সময়ের মধ্যে তিনি কখনো প্রেসিডেন্ট ছিলেন, কখনোবা প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্য দিয়ে তিনি দেশটিতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছেন। যদিও রুশ সংবিধান অনুসারে, প্রেসিডেন্ট হিসেবে কেউ একটানা দুবারের বেশি থাকতে পারেন না। কিন্তু রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কুক্ষিগত করার পদক্ষেপ তিনি ইতিমধ্যে নিয়েছেন। এ জন্য একটি পথ খুঁজে বের করা জরুরি তাঁর জন্য। পুতিন যে সংবিধান পরিবর্তনের পদক্ষেপ নিয়েছেন, তার মধ্য দিয়ে পার্লামেন্টে ও প্রধানমন্ত্রী পদ শক্তিশালী হয়ে উঠবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সংবিধানে কী কী পরিবর্তন হবে, তার একটি ইঙ্গিতও দিয়েছেন পুতিন। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভা নির্ধারণ করবেন আইনপ্রণেতারা। বর্তমানে এই ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের। দেশটির পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ ফেডারেল কাউন্সিলের সঙ্গে আলোচনা করে প্রেসিডেন্ট বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থার প্রধানদের নিয়োগ দেবেন। এটি নতুন সংশোধনী। এ ছাড়া প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিষদ হিসেবে কাজ করবে স্টেট কাউন্সিল।

এদিকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করেছেন পুতিন। অতীতে বিদেশে বসবাস করেছেন এমন কেউ প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে পারবেন না। সরকারি কর্মকর্তা অন্য কোনো দেশের নাগরিক হতে পারবেন না। এ ছাড়া আরও বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছেন তিনি। ধারণা করা হচ্ছে, এর মধ্য দিয়ে পুতিনের ক্ষমতা আঁকড়ে রাখা আরও সহজ হতে যাচ্ছে। কারণ, এসব পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে সংবিধান লঙ্ঘন না করেই ক্ষমতা কাজে লাগাতে পারবেন তিনি।

সংবিধান অনুসারে টানা তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার সুযোগ পুতিনের নেই। তবে এটা পুরোপুরি পরিষ্কার নয়, তিনি আবার কোন পদে ফিরবেন। বিশ্লেষকেরা বলছেন, আবারও প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন তিনি। পার্লামেন্টের ক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে মূলত এ জন্যই। তবে অনেক বিশ্লেষক এর সঙ্গে ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। তাঁরা বলছেন, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের আরেক দেশ কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্ট নুরসুলতান নজরবায়েভের পথে হাঁটছেন তিনি। সবচেয়ে বেশি সময় ধরে কাজাখস্তানে ক্ষমতায় ছিলেন তিনি। ২০১৮ সালে তিনি দেশটির সিকিউরিটি কাউন্সিলের ক্ষমতা বৃদ্ধি করেন এবং আজীবনের জন্য এই কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হন। গত বুধবার সংবিধান সংশোধনের যেসব ইঙ্গিত পাওয়া গেছে তাতে মনে হচ্ছে, পুতিনও সেই পথে হাঁটছেন।