রাশিয়ার রহস্যময় 'মৃতের শহর'

রাশিয়ার দুর্গম দারগাভ গ্রামের কাছে ককেশাস পর্বতে মৃতের শহর। এখানে রয়েছে ৯৯টি সমাধিঘর। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
রাশিয়ার দুর্গম দারগাভ গ্রামের কাছে ককেশাস পর্বতে মৃতের শহর। এখানে রয়েছে ৯৯টি সমাধিঘর। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

রাশিয়ার দুর্গম দারগাভস গ্রামের কাছে বেশ কিছু মধ্যযুগীয় সমাধি রয়েছে। এলাকাটিকে ‘মৃতের শহর’ বলা হয়ে থাকে। প্রাচীন এই সমাধিস্থলে রয়েছে ঢালু ছাদের ৯৯টি সমাধিঘর। প্রতিটিতে রয়েছে একটি করে জানালা। আর প্রতিটি ঘরে শতাধিক মরদেহ। কিছু মরদেহ ভালোভাবে সংরক্ষিত।

এসব মরদেহের মাংস এখনো হাড়ের সঙ্গে লেগে রয়েছে। এসব সমাধিঘরে ১০ হাজারের বেশি মরদেহ রয়েছে। অনেক মৃত ব্যক্তিকে কাপড়চোপড়, মালিকানাধীন জিনিসপত্রসহ সমাধিতে রাখা হয়েছে।

জর্জিয়া সীমান্তের পরই অবস্থিত রহস্যময় এই সমাধিস্থল কবে নির্মিত, বিষয়টি এখনো ধারণামাত্র। তবে ইতিহাসবিদেরা ক্রমে এর ইতিহাস উন্মোচন করছেন।

সমাধিঘরে মরদেহের হাড়গোড়। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
সমাধিঘরে মরদেহের হাড়গোড়। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

ষোড়শ শতাব্দীতে রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের দুর্গম কৃষিজমি সমাধিক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে। তবে এই মৃতের শহরের উৎপত্তির বিষয়টি এখনো অস্পষ্ট। একটি তত্ত্বে বলা হয়েছে, ত্রয়োদশ শতাব্দীতে মোঙ্গল ও তাতারদের (তুর্কি জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত একটি উপজাতি) আক্রমণে যখন অঞ্চলটি বিপন্ন হয়ে পড়ে, তখন ককেশাস পর্বতমালার ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ উপত্যকায় বসবাসকারী স্থানীয় লোকজন সমতল থেকে উঁচুতে মৃতদেহ সংরক্ষণের জন্য একই রকম স্থাপনা তৈরি করেন।

সমাধিঘরের পিরামিড আকৃতির ছাদ। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
সমাধিঘরের পিরামিড আকৃতির ছাদ। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

আরেকটি তত্ত্ব থেকে জানা যায়, দক্ষিণ রাশিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস করা অভিবাসী সারমেশিয়ানদের দ্বারা ইন্দো-ইরানি ঐতিহ্যে এই মৃত্যুর শহর নির্মিত হয়েছিল।

এই অঞ্চলের আরেকটি ইতিহাসের সঙ্গে মৃতের শহরের গল্পের যোগসূত্র থাকতে পারে। তা হলো, সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতাব্দীতে এই অঞ্চলে প্লেগ মহামারি আকারে দেখা দেয়। তখন সংক্রমণ থেকে বাঁচতে প্লেগ-আক্রান্ত লোকজনকে ওই ঘরে নিয়ে রাখা হতো।

দর্শনার্থীরা এই জায়গার সৌন্দর্যে বিস্মিত হন। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
দর্শনার্থীরা এই জায়গার সৌন্দর্যে বিস্মিত হন। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

ভালোভাবে সংরক্ষিত মধ্যযুগীয় এই স্থাপনা দেখতে বহু দর্শনার্থী ১ দশমিক ৫ হেক্টরের এই কবরস্থানে আসেন। ইতিহাসবিদ লুইডমিলা গ্যাবোভা মনে করেন, আরও অন্য কারণেও দর্শনার্থীরা এখানে আসেন। তিনি বলেন, ‘দর্শনার্থীরা এই জায়গার সৌন্দর্যে বিস্মিত হন। একই সঙ্গে তাঁরা মৃত্যুর চিরন্তন ভয়ের সঙ্গে প্রশান্তির আমেজও অনুভব করেন।’