খামেনিকে 'সতর্ক' থাকতে হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের

ইরানের সর্বোচ্চ আধ্যাত্মিক নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
ইরানের সর্বোচ্চ আধ্যাত্মিক নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

‘শব্দ প্রয়োগে’ ইরানের সর্বোচ্চ আধ্যাত্মিক নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে সতর্ক থাকতে বললেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গতকাল শুক্রবার তেহরানে জুমার নামাজের খুতবায় আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিষোদগার করার প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প টুইটে এ কথা বলেন।

বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে জানানো হয়, টুইটে ট্রাম্প বলেন, ‘ইরানের তথাকথিত সর্বোচ্চ নেতা, যিনি ততটা উৎকৃষ্টও নন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিরুদ্ধে নোংরা কথা বলেছেন। তাঁদের অর্থনীতি ভেঙে পড়ছে, তাঁদের জনগণ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। তাঁর (খোমেনি) শব্দ (প্রয়োগ) নিয়ে তাঁর খুবই সতর্ক থাকা উচিত।’

প্রায় আট বছর পর গতকাল প্রথমবারের মতো খামেনি হাজারো মানুষের সামনে খুতবা দেন। সবশেষ ২০১২ সালে ইসলামি বিপ্লবের ৩৩তম বার্ষিকী উপলক্ষে তেহরানের মসাল্লা মসজিদে এ রকম খুতবায় অংশ নিয়েছিলেন খামেনি। খুতবায় তিনি ইউক্রেনের উড়োজাহাজটি ভূপাতিত করার বিষয়টিকে ‘মর্মন্তুদ বেদনাদায়ক ঘটনা’ উল্লেখ করে বলেন, মানবীয় ভুলে উড়োজাহাজ ভূপাতিত করার ঘটনা মার্কিন হামলায় (৩ জানুয়ারি) নিহত কাশেম সোলাইমানির আত্মত্যাগকে ম্লান করতে পারবে না।

খামেনি বলেন, ‘ইরানের শত্রুরা (যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা) মার্কিন ড্রোন হামলায় ইরানের জেনারেল কাশেম সোলাইমানি হত্যার বিষয়টিকে আড়াল করতে এই উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ঘটনাকে ব্যবহার করছে। উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ঘটনায় আমরা যতটা দুঃখ পেয়েছি, আমাদের শত্রুরা ততটাই খুশি হয়েছে। তারা আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে প্রশ্নের মুখে ফেলতে কিছু পেয়েছে, এতে তারা খুশি।’ তিনি বলেন, ‘হিংস্র মার্কিন সরকারের মুখপাত্র বারবার বলেই যাচ্ছেন ইরানের জনগণের পাশে আছেন। আপনি মিথ্যা বলছেন।’

৮ জানুয়ারি ভোরে তেহরানের ইমাম খোমেনি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের কিছু সময় পর ইউক্রেন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসের বোয়িং-৭৩৭ উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়। এতে ১৭৬ জন আরোহীর সবাই নিহত হন। আরোহীদের বেশির ভাগ ইরান ও কানাডার নাগরিক। তেহরান শুরুতে উড়োজাহাজটি ভূপাতিত করার কথা অস্বীকার করে। পরে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে গত শনিবার ইরানের সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে ভুল করে ইউক্রেনের উড়োজাহাজটিতে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার কথা স্বীকার করে।

খুতবায় খামেনি ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির বিরুদ্ধেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, প্রায় এক বছর পর, এটা এখন প্রমাণ হয়ে গেছে যে সত্যিকার অর্থে তারা (তিনটি দেশ) আমেরিকার গোলাম।

ইউরোপীয় গাড়ির ওপর শুল্ক আরোপে মার্কিন হুমকির মুখে গত মঙ্গলবার ওই তিনটি দেশ ইরানের সঙ্গে ২০১৫ সালে করা পরমাণু চুক্তির ব্যাপারে ইরানের ওপর চাপ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নেয়। আন্তর্জাতিক পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি এখনো অমান্য করে চললে ইরানের বিরুদ্ধে তারা ব্যবস্থা নেবে বলে জানায়। তিনটি দেশ আরও জানায়, যুক্তরাষ্ট্র যে প্রক্রিয়ায় ইরানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছে, তারা তা করবে না। তারা চায় ইরান আলোচনায় বসুক।

২০১৮ সালে পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরে এসে ইরানের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। চুক্তি সই করা দেশগুলোকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে ইরান বারবার ব্যবস্থা নিতে বললেও তারা নেয়নি।