সারা জীবনের সঞ্চয়ের ১ কোটি রুপি শিক্ষায় দান

ভালো শিক্ষা যে কাউকে বদলে দিতে পারে। আবার ভালো শিক্ষক সবকিছু বদলে দিতে পারেন। পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও সংস্কৃত অনুরাগী চিত্রলেখা মালিক সে রকমই একজন শিক্ষক। বেতন ও পেনশনের টাকা বাঁচিয়ে নিজের সঞ্চয় থেকে ১৭ বছরে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এক কোটি রুপি দান করেছেন ৭২ বছরের সংস্কৃত বিষয়ের এই শিক্ষক।

সিটি অব জয় কলকাতার স্বনামধন্য শিক্ষানুরাগী ও শিক্ষার্থীদের কাছে পরম শ্রদ্ধাভাজন চিত্রলেখা মালিক। সংস্কৃত ভাষায় প্রজ্ঞা ও ত্যাগী মনোভাবের জন্য তিনি এই শ্রদ্ধা ও খ্যাতি অর্জন করেছেন।

দ্য বেটার ইন্ডিয়াকে চিত্রলেখা মালিক বলেন, ‘আমি চার যুগ শিক্ষকতা পেশায় ছিলাম। শিক্ষকতার রূঢ় বাস্তবতা দেখেছি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো উন্নয়নের লক্ষ্যে সব সময় অর্থের জন্য ব্যাকুল। এটা খুবই দুঃখজনক যে, মেধাবী শিশুরা অর্থের অভাবে সঠিক শিক্ষা নিতে পারে না। তাই আমি আমার সঞ্চয়ের বেশির ভাগ শিক্ষাবৃত্তি ও গবেষণাকাজে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

৪৩ বছরের শিক্ষাজীবনে চিত্রলেখা মালিক কলকাতার মাথাভাঙা কলেজ, দেশবন্ধু গার্লস কলেজ, ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউশন, কোচবিহারসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালন করেছেন।

কলকাতার উপকণ্ঠে বিরলাপুর এলাকায় চিত্রলেখা মালিকের জন্ম ও বেড়ে ওঠ। তাঁরা দুই বোন। বাবা ছিলেন স্কুলশিক্ষক। তিনি সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে শিক্ষা দিতেন।

বাবার আদর্শে অনুপ্রাণিত হন চিত্রলেখা মালিক। সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন তিনি। বিয়ে করেননি। জীবন উৎসর্গ করেছেন শিক্ষাদানে।

প্রতি মাসে ৫০ হাজার রুপি পেনশন পেতেন চিত্রলেখা মালিক। থাকতেন ৩৫০ বর্গফুটের একটি বাড়িতে। সব সময় বাসে যাতায়াত করতেন। দৈনন্দিন জীবনযাপনে ব্যয় সংকোচ করে সেই অর্থ শিক্ষার কাজে লাগাতেন।

ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউশনের অবকাঠামোগত উন্নয়নে ৫০ হাজার রুপি দেন চিত্রলেখা মালিক। তিনি বলেন, ক্যাম্পাসের ভেতরে তাদের চিকিৎসাবিষয়ক কোনো ইউনিট ছিল না। ন্যাশনাল অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল সেখানে পরিদর্শনকাজে যায়। পরে চিত্রলেখা এই রুপি দান করেন।

২০১৩ সালে অবসরগ্রহণের পরে হাওড়াতে ইন্ডিয়ান রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর ইন্টিগ্রেটেড মেডিসিনে মা-বাবার নামে ৩১ লাখ রুপি দান করেন চিত্রলেখা মালিক। তাঁর বাবার নাম রাধা বল্লভ মালিক ও মায়ের নাম শৈলসুধা মালিক।

শিক্ষক পণ্ডিত বিধুভূষণ ভট্টাচার্যের স্মরণে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৮ সালে ৫৬ লাখ রুপি দান করেন এই ত্যাগী শিক্ষক।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেন, ‘চিত্রলেখা মালিক সব সময় আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। তিনি এ বছর পূজার ছুটির পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন। কীভাবে তাঁর আর্থিক সাহায্য তহবিল পরিচালিত হচ্ছে, সে বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন।’

চিত্রলেখা মালিকের দানের অর্থ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের গবেষণা বৃত্তি দেওয়া হয়।