গুটিকয় ধনীর হাতে বেশি সম্পদ

বিশ্বের ৪৬০ কোটি দরিদ্র মানুষের যে পরিমাণ সম্পদ রয়েছে, তার থেকে বেশি সম্পদ রয়েছে ২ হাজার ১৫৩ জন ধনকুবেরের কাছে। ছবি: রয়টার্স
বিশ্বের ৪৬০ কোটি দরিদ্র মানুষের যে পরিমাণ সম্পদ রয়েছে, তার থেকে বেশি সম্পদ রয়েছে ২ হাজার ১৫৩ জন ধনকুবেরের কাছে। ছবি: রয়টার্স

বিশ্বে ধনকুবেরের সংখ্যা গত এক দশকে দ্বিগুণ হয়েছে। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশের কাছে যে পরিমাণ সম্পদ রয়েছে, তার থেকে বেশি সম্পদ আছে এই ধনকুবেরদের কাছে। আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা অক্সফাম গতকাল সোমবার এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে।

 প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী এবং করপোরেট প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে সুইজারল্যান্ডের দাভোসে আজ মঙ্গলবার শুরু হবে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম-২০২০। এই সম্মেলন চলবে শুক্রবার পর্যন্ত। সম্মেলন সামনে রেখে অক্সফাম প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে। দাভোস সম্মেলনে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হবে। ব্যবসাসংক্রান্ত সাময়িকী ফোর্বস ও সুইস ব্যাংকের ক্রেডিট সুইস থেকে তথ্য–উপাত্ত নিয়ে এই প্রতিবেদন করেছে অক্সফাম। তবে এই তথ্য–উপাত্ত বেশ কয়েকজন অর্থনীতিবিদ বিশ্লেষণ করেছেন। এবারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের ৪৬০ কোটি দরিদ্র মানুষের যে পরিমাণ সম্পদ রয়েছে, তার থেকে বেশি সম্পদ রয়েছে ২ হাজার ১৫৩ জন ধনকুবেরের কাছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সারা বিশ্বে নারীরা প্রতিদিন কোনো ধরনের মজুরি ছাড়া প্রায় ১ হাজার ২৫০ কোটি ঘণ্টা কাজ করে। এই শ্রমঘণ্টার বার্ষিক মূল্য কমপক্ষে ১০ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার।

বৈশ্বিক অসমতা নিয়ে এই প্রতিবেদন প্রতিবছর ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে তুলে ধরে অক্সফাম। এবারের প্রতিবেদনে কিছু অবিশ্বাস্য তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, বিশ্বের ২২ জন ধনীর সম্পদ পুরো আফ্রিকার নারীদের সম্পদের থেকে বেশি। বিশ্বের মোট ধনকুবের মধ্যে ১ শতাংশ ধনকুবের যদি ১০ বছর ধরে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ কর বেশি দিতেন, তবে শিশু ও প্রবীণ সুরক্ষা, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষাক্ষেত্রে ১১ কোটি ৭০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করা যেত।

অক্সফাম ইন্ডিয়ার প্রধান অমিতাভ বিহার বলেন, ‘আমাদের ভঙ্গুর অর্থনীতির সঙ্গে ধনকুবেরদের পকেট জড়িত। এই ধনকুবেরদের বড় ব্যবসার কারণে সাধারণ নারী ও পুরুষেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’ তিনি বলেন, অসমতার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে ধনী ও গরিবের মধ্যে যে ব্যবধান রয়েছে, তা কমবে না।

অমিতাভ বিহার বলেন, বিশ্বের ৪২ শতাংশ নারী চাকরি বা অর্থের বিনিয়ে কাজ করতে পারেন না। কারণ, তাঁদের সময় যায় পরিবারের সদস্যদের সেবাযত্নের কাজে। তবে এটাও অস্বীকার করার উপায় নেই যে নারীদের এই কাজ অর্থনীতি, ব্যবসা ও সমাজের চাকা সচল রেখেছে। নারীদের এই কাজ বিশ্বের মাত্র ৬ শতাংশ পুরুষ করেন। তিনি আরও বলেন, নারীরা পড়ালেখার সুযোগও কম পান। একটি মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনের জন্য যে উপার্জন প্রয়োজন, তা করার সুযোগ তাঁদের খুব কম। এ ছাড়া সমাজব্যবস্থায় তাঁদের মতামত দেওয়ার সুযোগও খুব কম।

ক্ষতি করছে পুঁজিবাদ

বিশ্বের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বিশ্বাস করে, পুঁজিবাদের বর্তমান অবস্থা উপকারের থেকে ক্ষতি বেশি করছে। এডেলম্যান ট্রাস্ট ব্যারোমিটারের বার্ষিক জরিপে এ কথা বলা হয়েছে। বিশ্বব্যাপী ব্যবসা, সরকার, বেসরকারি সংস্থা ও গণমাধ্যমের প্রতি মানুষের বিশ্বাস কতটুকু, তা নিয়ে জরিপ চালিয়ে থাকে এডেলম্যান ট্রাস্ট ব্যারোমিটার। তবে এই প্রথম পুঁজিবাদের মতো বিষয় নিয়ে জরিপ চালাল তারা।

মানুষ কীভাবে পুঁজিবাদকে দেখে, সেটা জানতে বিশ্বের ২৮টি দেশের ৩৪ হাজার জনের মধ্যে জরিপ চালিয়েছে এডেলম্যান ট্রাস্ট ব্যারোমিটার। পশ্চিমের উদার গণতান্ত্রিক দেশ যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স থেকে শুরু করে চীন, রাশিয়ার মতো দেশের জনগণও এই জরিপে অংশ নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৫৬ শতাংশ বলছেন, বর্তমান পুঁজিবাদ উপকারের থেকে ক্ষতি বেশি করছে।

 যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠান এডেলম্যান ট্রাস্ট ব্যারোমিটারের প্রতিবেদনের রচয়িতারা বলছেন, এর আগে সমীক্ষায় যাঁরা অংশ নিয়েছিলেন, তাঁরা বৈষম্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। এর ফলে এমন জরিপ করা হয়েছে।