আইএমএফের নজরে ভারতের নাগরিকত্ব আইন

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রধান অর্থনীতিবিদ গীতা গোপীনাথ। রয়টার্স ফাইল ছবি
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রধান অর্থনীতিবিদ গীতা গোপীনাথ। রয়টার্স ফাইল ছবি

এ মুহূর্তে ভারতের রাজনীতি উত্তাল সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) ও জাতীয় নাগরিক নিবন্ধনের (এনআরসি) বিষয়টি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলেরও (আইএমএফ) নজর কাড়ল।আইএমএফের প্রধান অর্থনীতিবিদ গীতা গোপীনাথ বলেছেন, সিএএ ও এনআরসির ফলে সৃষ্ট সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা ভারতের প্রবৃদ্ধির হারের ওপর কোনো প্রভাব ফেলছে কি না এবং ফেললে কতটা, আইএমএফ এবার থেকে তার ওপর লক্ষ রাখবে। তিনি বলেছেন, এই পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে তাঁরা আগামী এপ্রিল মাসে ভারতের অর্থনৈতিক হাল সম্পর্কে পরবর্তী প্রতিবেদন পেশ করবেন।

গীতা গোপীনাথ সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক’–এর আসরে এনডিটিভিকে এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা জানিয়েছেন।

আইএমএফ গতকাল সোমবার ভারতের সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধি হারের প্রতিবেদন পেশ করেছে। আগের তৈরি প্রতিবেদনের তুলনায় নতুন নির্ধারিত প্রবৃদ্ধির হার অনেকটাই কম। নতুন হার অনুযায়ী প্রবৃদ্ধি হবে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ। এনডিটিভিকে তিনি বলেছেন, অর্থনৈতিক দিক থেকে ভারতের এই ঝিমুনির প্রভাব আন্তর্জাতিক দুনিয়াতেও পড়বে। পৃথিবীর আর্থিক উন্নয়নের হার কমিয়ে দেবে ০ দশমিক ১ শতাংশ।

রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সামাজিক অসন্তোষ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। গীতা মনে করছেন, ভারতের ক্ষেত্রেও এই যুক্তি প্রযোজ্য। সিএএ ও এনআরসি নিয়ে গোটা ভারত উত্তাল। রাজ্যে রাজ্যে বিক্ষোভ দিন দিন বাড়ছে। ভারত এমনিতেই অর্থনৈতিক মন্দার মধ্য দিয়ে চলছে; এই মন্দায় সিএএ ও এনআরসি বোঝার ওপর শাকের আঁটি হয়ে দাঁড়াচ্ছে কি না, আইএমএফ সেদিকে নজর রাখবে। গীতা জানিয়েছেন, এরই ভিত্তিতে তাঁরা আগামী এপ্রিলে পরবর্তী রিপোর্ট পেশ করবেন। আইএমএফ আগে মনে করেছিল, ভারতের আর্থিক প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ১ শতাংশ হারে। এখন তা তারা নামিয়ে দিয়েছে ৪ দশমিক ৮ শতাংশে।

ভারতের প্রচুর বিনিয়োগ দরকার বলেও মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদ গীতা গোপীনাথ। তিনি বলেছেন, এই বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা উচিত।

আইএমএফের এই অভিমত নিয়ে বিজেপি এখনো চুপ। তবে কংগ্রেস নেতা ও সাবেক অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরম কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। টুইট করে তিনি বলেছেন, ‘ভারতের নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রথম যাঁরা সমালোচনা করেছিলেন, এই গীতা গোপীনাথ ছিলেন তাঁদের একজন। ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা এবার তাঁকে তুলোধুনা করবেন। সে জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।’

বিজেপি কিন্তু সিএএ ও এনআরসি নিয়ে পিছু হটতে এখনো রাজি নয়। বরং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ স্পষ্ট বলেছেন, যতই বিরোধিতা হোক, সরকার এক পাও সরবে না। সিএএ সরকার প্রত্যাহার করবে না। লক্ষ্ণৌয়ে গত মঙ্গলবার এ কথা জানিয়ে তিনি বলেছেন, বিজেপি বিক্ষোভে ভয় পায় না। বিক্ষোভের মধ্য দিয়েই বিজেপির জন্ম।

সিএএর বিরুদ্ধাচরণ করছেন যাঁরা, সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অখিলেশ সিং যাদব বা মায়াবতীর উদ্দেশে অমিত শাহ বলেন, এই আইন নিয়ে বিতর্কে তিনি প্রস্তুত। প্রমাণ করবেন, এই আইন কারও নাগরিকত্ব কাড়ার জন্য আনা হয়নি। আনা হয়েছে নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য। কংগ্রেসকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, কংগ্রেসের মুখে পাকিস্তানের সুর। বছরের পর বছর ধরে পাকিস্তান থেকে আলিয়া, মিলিয়া, জামালিয়ারা ভারতে এসে বোমা ফাটিয়ে গেছে অথচ মনমোহন সিং মৌন থেকেছেন।

বিজেপি যা–ই বলুক, সিএএর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে বিজেপির শরিক পাঞ্জাবের আকালি দল দিল্লি বিধানসভার ভোট থেকে সরে দাঁড়াল। আকালি দল প্রথম থেকেই বলে আসছে, সিএএতে প্রতিবেশী তিন দেশের ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত মুসলমানদেরও অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। বিজেপি তা মানেনি। দলের পক্ষে তাই জানানো হয়েছে, দিল্লির ভোটে তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে না। কদিন ধরে অকালি দল আসন নিয়ে বিজেপির সঙ্গে দর-কষাকষি করছিল। দলের নেতা মনজিন্দর সিং সিরসা জানিয়েছেন, দেশটা সবার। ধর্মের কারণে দেশ বিভাজন করা যায় না। তিনি জানান, তাঁরা এনআরসিরও বিরুদ্ধে।