নাগরিকত্ব আইনে স্থগিতাদেশ দেননি ভারতের সুপ্রিম কোর্ট

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। ছবি: সংগৃহীত
ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। ছবি: সংগৃহীত

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) বাস্তবায়নে স্থগিতাদেশ দিলেন না ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। স্থগিতাদেশ দেওয়া হলো না ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টার (এনপিআর) তৈরির ক্ষেত্রেও। সিএএ আইনের বিরোধিতা করে যত শুনানি সুপ্রিম কোর্ট ও বিভিন্ন রাজ্যের হাইকোর্টে জমা পড়েছে, সেগুলো সম্পর্কে কেন্দ্রের অভিমত জানাতে চার সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে। আজ বুধবার সুপ্রিম কোর্ট জানান, কেন্দ্রের মতামত না জেনে তাঁদের পক্ষে স্থগিতাদেশ দেওয়া সম্ভব নয়।

প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদে, বিচারপতি এস আবদুল নাজির ও সঞ্জীব খান্নার এজলাস এ কথাও বলেছেন, নাগরিকত্বসংক্রান্ত মামলার বৈধতার বিষয়টি বিবেচনার দায়িত্ব সাংবিধানিক বেঞ্চের হাতে ছেড়ে দেওয়া হবে। চার সপ্তাহের মধ্যে পাঁচ বিচারপতির সেই সাংবিধানিক বেঞ্চ গঠিত হবে। মামলাগুলোর শুনানি হবে পাঁচ সপ্তাহ পর। বিচারপতিরা এ কথাও জানিয়েছেন, নাগরিকত্ব নিয়ে আসাম ও ত্রিপুরার আরজি আলাদা। অতএব ওই দুই রাজ্যের আবেদন আলাদাভাবে শুনানি হবে।

সিএএর বিরুদ্ধে এবং এই আইনের সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এখনো পর্যন্ত মোট ১৪৪টি আবেদন জমা পড়েছে। এর আগে জমা পড়া ৬০টি আবেদন নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছিল। আজ কেন্দ্রকে আরও চার সপ্তাহ সময় দেওয়া হয় মোট ১৪৪টি আবেদন সম্পর্কে জবাবদিহি করতে। এই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেন, এই বিষয়ে আর কোনো আবেদন কোনো আদালতে দাখিল করা যাবে না।

কংগ্রেস,সিপিআই, সিপিএম, মুসলিম লিগ, ডিএমকে, এআইএমআইএম, তৃণমূল কংগ্রেস, আরজেডিসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন সিএএর সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মামলা দায়ের করেছে। প্রত্যেকের দাবি এক—ওই আইন সংবিধানবিরোধী।

গত বছরের ১১ ডিসেম্বর লোকসভায় নাগরিকত্ব সংশোধন বিল পাস হয়। রাজ্যসভায় পাস হয় তার পরের দিন। দেরি না করে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ ওই বিলে সই করলে তা আইনে পরিণত হয়। আইন অনুযায়ী প্রতিবেশী বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত সংখ্যালঘু হিন্দু, শিখ, জৈন, পার্সি, শিখ ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন যাঁরা ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ভারতে চলে এসেছেন, তাঁরা এই আইনে নাগরিকত্ব পাওয়ার যোগ্য। যাঁরা এর সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন, তাঁদের দাবি, এই আইন সংবিধানবিরোধী। কারণ, ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী ধর্মীয় নিরিখে নাগরিকত্ব দেওয়া যায় না।

আজ সুপ্রিম কোর্টে কপিল সিবাল ও অভিষেক মনু সিংভি বলেন, উত্তর প্রদেশে ১৯টি জেলায় ৪০ হাজার মানুষকে চিহ্নিত করা হয়েছে নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য। আইনটির বৈধতার প্রশ্নের মীমাংসার আগেই এমন ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া অনুচিত। তাঁরা ওই উদ্যোগের ওপরেও স্থগিতাদেশ চান। সেই আবেদনের বিরোধিতা করেন অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেনুগোপাল। সুপ্রিম কোর্ট এই ক্ষেত্রেও স্থগিতাদেশ দেননি।