নির্ভয়ার ধর্ষক-খুনিদের ফাঁসি আটকে গেল শেষ সময়ে

(বাঁ থেকে) মুকেশ সিং, বিনয় শর্মা, অক্ষয় কুমার সিং ও পবন গুপ্ত। ছবি: এনডিটিভির সৌজন্যে
(বাঁ থেকে) মুকেশ সিং, বিনয় শর্মা, অক্ষয় কুমার সিং ও পবন গুপ্ত। ছবি: এনডিটিভির সৌজন্যে

ভারতের দিল্লিতে নির্ভয়াকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত আসামিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার কথা ছিল ১ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সময় সকাল ৬টায়। কিন্তু মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগেরদিন আজ শুক্রবার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের দিনক্ষণ বাতিল করা হয়েছে। আজ শুক্রবার এক আসামির করা ক্ষমা প্রার্থনার আরজির কারণে দিল্লির আদালত এই আদেশ দেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, আদালতের পরবর্তী নির্দেশ ছাড়া কোনো আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা যাবে না। দিল্লির আদালত মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের এই আদেশ অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে দিয়েছে। এক আসামির আইনজীবী এপি সিং বলেন, ‘মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকরের দিনক্ষণ বাতিল করা হয়েছে এবং কোনো নতুন তারিখ এখনো দেওয়া হয়নি।’ এই মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার অভিযুক্ত হলেন-মুকেশ সিং, বিনয় শর্মা, অক্ষয় কুমার সিং ও পবন গুপ্ত।

শুক্রবার ভারতের সুপ্রিম কোর্টে একটি নতুন পিটিশন ফাইল দাখিল করা হয়। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট তা খারিজ করে দেন। এর পর পরই এই মামলায় দোষী সাব্যস্ত চার আসামির একজন রাষ্ট্রপতি বরাবর ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন জানান। রাষ্ট্রপতি যদি এই আবেদন তৎক্ষণাৎ খারিজ করেও দেন, তবুও আগামী ১৪ দিনের আগে মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করা যাবে না। ভারতের আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির কাছে করা ক্ষমার আবেদন খারিজ থেকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সময়ের মধ্যে অন্তত দু সপ্তাহ ব্যবধান থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

২০১২ বছরের ১৬ ডিসেম্বর দিল্লিতে চলন্ত বাসে ২৩ বছর বয়সী এক মেডিকেল ছাত্রী গণধর্ষণের শিকার হন। ওই বছরের ২৯ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত সাহসের পরিচয় দেওয়ায় ভারতের গণমাধ্যম তাঁকে ‘নির্ভয়া’ নামে অভিহিত করে। এই ‘নির্ভয়া’ ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সে সময় ভারতজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে। দোষীদের শাস্তির দাবিতে ব্যাপক আন্দোলন শুরু হয়। ঘটনার কয়েক দিন পর বাসের চালকসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০১৩ সালের ১১ মার্চ তিহার জেলে থাকা অবস্থায় প্রধান আসামি বাসচালক রাম সিং মারা যান। তিনি আত্মহত্যা করেন বলে ধারণা করা হয়। এ ঘটনার আরেক আসামি কিশোর হওয়ায় তাকে তিন বছরের জন্য অপরাধ সংশোধন কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। সংশোধন কেন্দ্রে তিন বছর কাটানোর পর ছাড়া পায় সে। দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শেষে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় বাকি চার আসামির মৃত্যুদণ্ড আগামীকাল কার্যকর হওয়ার কথা ছিল।

এর আগে আদালত ২২ জানুয়ারি মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আদেশ দিয়েছিল। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ সব আসামির ক্ষমা প্রার্থনার উত্তর আসার আগ পর্যন্ত মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে অপারগতা জানায়। ফলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের দিন পিছিয়ে যায় এবং ১ ফেব্রুয়ারি নতুন তারিখ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু শেষ মুহূর্তে আসামিরা আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার সেটিও পিছিয়ে গেল।