দিল্লির জামিয়া মিলিয়ার পর এবার শাহিনবাগেও গুলি

দিল্লির শাহিনবাগে ফাঁকা গুলি ছুড়েছেন এই যুবক। পরে পুলিশ তাঁকে আটক করে। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত
দিল্লির শাহিনবাগে ফাঁকা গুলি ছুড়েছেন এই যুবক। পরে পুলিশ তাঁকে আটক করে। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত

ভারতের দিল্লির জামিয়া মিলিয়ায় গুলি চালানোর দুদিন পরেই গুলি চলল শাহিনবাগে। শনিবার বিকেলে শাহিনবাগে সিএএ ও এনআরসি বিরোধী সমাবেশে এক যুবক আচমকাই গুলি চালান। পুলিশ জানায়, গুলিতে কেউ হতাহত হননি। ওই যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যাওয়া এক ভিডিওয় দেখা যাচ্ছে, পুলিশ ওই যুবককে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। তখন তাঁকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘আমাদের দেশে শুধু হিন্দুদের কথাই চলবে। অন্য কারো নয়।’ গুলি চালানোর আগে ওই যুবককে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দিতেও শোনা যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়, ওই যুবক পুলিশদের পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন। হঠাৎই দুই রাউন্ড গুলি চালান। এর পর রিভলবার জ্যাম হয়ে গেলে তিনি তা ফেলে পালানোর চেষ্টা করেন। পুলিশ জানায়, ওই ব্যক্তি শূন্যে গুলি চালান। তাঁরা তাঁকে ধরে ফেলেছেন।

রাজধানী দিল্লির শাহিনবাগের মানুষজন গত দেড়মাস ধরে সিএএ ও এনআরসির বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন। প্রবল শীত ও বৃষ্টি উপেক্ষা করে হাজার হাজার মানুষ সেখানে অবস্থান করছেন। শাহিনবাগের কাছেই জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানকার ছাত্রছাত্রীরাও নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন। কিছুদিন আগে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে পড়ুয়াদের উপর পুলিশ লাঠি চালিয়েছিল। ৩০ জানুয়ারি মহাত্মা গান্ধীর মৃত্যুদিন উপলক্ষে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা মিছিল করে রাজঘাটে গান্ধীজির সমাধিতে যেতে চাইলে পুলিশ তাঁদের বাধা দেয়। সেই সময় গোপাল নামে এক যুবক পড়ুয়াদের জমায়েতে গুলি চালালে এক ছাত্র আহত হন। ওই ঘটনার দুদিনের মাথায় গুলি চলল শাহিনবাগে। দুটি ঘটনাই ঘটে পুলিশের নাকের ডগায়। দুজনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

দিল্লি বিধানসভার ভোটের আগে বিরুদ্ধবাদীদের উপর এই ধরনের আক্রমণের কারণ হিসেবে শাসক দলকেই দায়ী করছে বিরোধীরা। শাসক দলের নেতারা নির্বাচনী জনসভায় হিংসায় প্ররোচনামূলক ভাষণ দিচ্ছেন। কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর দেশদ্রোহীদের গুলি করে মারতে উস্কানি দিয়েছেন। দিল্লির আর এক বিজেপি সাংসদ পরবেশ সিং ভার্মা শাহিনবাগের জমায়েতকারীদের বিরুদ্ধে চরম ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়ে বলেছেন, নইলে ওরা তোমাদের ঘরে ঘরে ঢুকে মা–বোনেদের ধর্ষণ করবে। নির্বাচন কমিশন দুই নেতার বক্তব্যই আপত্তিজনক ও উস্কানিমূলক মনে করেছে। এই দুজনেরও আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এক নির্বাচনী জনসভায় বলেছিলেন, ইভিএমের বোতাম এত জোরে টিপতে হবে যাতে শাহিনবাগে তার কারেন্ট লাগে। বিরোধীদের অভিযোগ, ভোটের আগে দিল্লিতে ধর্মীয় মেরুকরণ ঘটাতেই এই ধরনের উস্কানি দেওয়া হচ্ছে।

শাহিনবাগের মানুষজনের দাবি, তাঁদের কাছে এসে প্রধানমন্ত্রী তাঁদের সঙ্গে নাগরিকত্ব আইন নিয়ে ‘চায় পে চর্চা’ করুন। কিন্তু সরকার তা শোনার কোনো আগ্রহ দেখায়নি। টানা দেড়মাস অবস্থান চললেও কেউ কথা বলতে আসেননি। বরং নানা ধরনে মন্তব্যের মধ্য দিয়ে উস্কানি দেওয়া হয়েছে। শনিবার সেই অবস্থান থেকে সরে আসার প্রথম ইঙ্গিত সরকার দেয়। আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ ট্যুইট করে বলেন, মোদি সরকার শাহিনবাগের প্রতিবাদীদের সঙ্গে কথা বলে সিএএ নিয়ে যাবতীয় সংশয় দূর করতে চায়। তবে তা হবে কাঠামোগতভাবে।

এই টুইটের কয়েক ঘন্টা পরেই গুলি চলল শাহিনবাগে। রাত পর্যন্ত ওই যুবকের পরিচয় পাওয়া যায়নি।