সিএএ আন্দোলনকে রাজনৈতিক চক্রান্ত বললেন মোদি

নরেন্দ্র মোদি। রয়টার্স ফাইল ছবি।
নরেন্দ্র মোদি। রয়টার্স ফাইল ছবি।

দিল্লির ভোটের ঠিক চার দিন আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, জামিয়া মিলিয়া, সিলামপুর বা শাহিনবাগে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) বিরুদ্ধে যে আন্দোলন চলছে, তা মোটেই স্বতঃস্ফূর্ত নয়। এর পেছনে এক গভীর রাজনৈতিক চক্রান্ত রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা আম আদমি পার্টি ও কংগ্রেসের রাজনৈতিক চক্রান্ত। হাতে সংবিধান ও জাতীয় পতাকা নিয়ে এই চক্রান্ত তারা চালাচ্ছে। এই ভোট দিল্লির। চাইলেই রাজ্য সরকার এই নৈরাজ্য বন্ধ করতে পারে। কিন্তু তা না করায় ওই তল্লাটের মানুষজনকে ভুগতে হচ্ছে।

এই শাহিনবাগ ও জামিয়া মিলিয়াই শেষ পর্যায়ে দিল্লির ভোটের একমাত্র বিষয় হতে চলেছে কি না, তা নির্ভর করছে আগামী তিন দিনের নির্বাচনী প্রচারের ওপর। কিন্তু সেই সঙ্গে বেড়ে চলেছে একের পর এক গুলি চালনার ঘটনাও।

প্রথম গুলি চলে ৩০ জানুয়ারি জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ায়। তার এক দিন পরই ১ ফেব্রুয়ারি শাহিনবাগে, আর ২ ফেব্রুয়ারি ওই শাহিনবাগে দ্বিতীয়বার গুলি চলে। রাত ১১টা নাগাদ স্কুটারে চেপে দুই দুষ্কৃতকারী জমায়েতের কাছাকাছি এসে শূন্যে গুলি চালাতে চালাতে চলে যায়। গত চার দিনে সিএএ–এনআরসিবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানোর তিনটি ঘটনা ঘটল। রোববারের ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট এলাকার পুলিশ কর্তাকে বদলি করা হয়েছে।

দিল্লিতে বারবার বিক্ষোভকারীদের ওপর এই আক্রমণের রেশ পৌঁছায় সোমবার সংসদে। লোকসভার অধিবেশন শুরু হওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বিরোধী সদস্যদের একাংশ ওয়েলে নেমে আসে। সিএএ–এনআরসিবিরোধী পোস্টার ও প্ল্যাকার্ড হাতে তারা স্লোগান দিতে থাকে। অর্থ প্রতিমন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর প্রশ্নের উত্তর দিতে উঠলে বিরোধীরা ‘গোলি মারনা বন্ধ করো’ স্লোগান দিতে থাকেন। হই হট্টগোলের মধ্যে প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষ হলে শুরু হয় রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ জ্ঞাপন প্রস্তাবের উত্থাপন। সেই প্রস্তাব উত্থাপন করতে ওঠেন বিজেপি সদস্য পরবেশ সিং ভার্মা, বিদ্বেষপূর্ণ ভাষণ দেওয়ার অপরাধে অনুরাগ ঠাকুরের সঙ্গে নির্বাচন কমিশন তাঁর প্রচারের ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। পরবেশ সিং বলতে উঠে দাঁড়ানোর পরপরই বিরোধীরা প্রতিবাদ জানিয়ে সভাকক্ষ ছেড়ে চলে যান।

দিল্লিতে কোণঠাসা বিজেপি এই ভোটকে ক্রমেই ধর্মীয় আধারে মেরুকরণের দিকে টেনে নিয়ে যেতে চাইছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ। মেরুকরণের জন্যই প্রতিটি প্রচারে বিজেপি টেনে আনছে সিএএ প্রসঙ্গ। বলছে, প্রতিবেশী দেশের অত্যাচারিত হিন্দুদের নাগরিকত্ব দিতে যারা রাজি নয়, তারা কেন তা করছে, তা বোঝা প্রয়োজন। করছে স্রেফ ভোটের রাজনীতির জন্য। বিজেপি মনে করছে, উন্নয়নের নিরিখে ভোট লড়লে আম আদমি পার্টির কাছে তাদের পরাজয় ফের অবধারিত। তাই এই ভোটে এত হিন্দু–মুসলমান প্রসঙ্গ। এত বড় করে হিন্দুস্তান–পাকিস্তানের উত্থাপন। বিজেপির প্রত্যেক নেতার কণ্ঠে এই সুর।

সেই রেশ ধরেই বিজেপির নেতারা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে ‘সন্ত্রাসবাদী’ আখ্যা দিয়েছেন। কেজরিওয়াল পাল্টা জবাবে বলেছেন, দিল্লির মানুষই ঠিক করুন তাঁদের ‘সন্তান’ সন্ত্রাসবাদী কি না। ভোটের দিন যত এগোচ্ছে, শাহিনবাগ ও জামিয়া মিলিয়ায় বিক্ষোভ জিইয়ে রাখার অভিযোগে বিরোধীদের বিজেপি ততই কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছে। এই সঙ্গে তারা আক্রমণ করছে মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালকে।

সোমবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর নতুন করে বলেছেন, কেজরিওয়াল অবশ্যই সন্ত্রাসবাদী। এর অনেক প্রমাণও আছে। তিনি বলেন, কেজরিওয়াল ভালো মানুষের মতো মুখ করে জানতে চাইছেন তিনি সন্ত্রাসবাদী কি না। তিনি অবশ্যই সন্ত্রাসবাদী। তিনি নিজেই বলেছিলেন, তিনি নৈরাজ্যবাদী। নৈরাজ্যবাদ ও সন্ত্রাসবাদের মধ্যে তেমন কোনো ফারাক নেই।

বিজেপির ভাষায় বিরোধী রাজনীতি হলো ‘সংখ্যালঘু তোষণের’। প্রধানমন্ত্রীও সোমবার জনসভায় সেই কথাই বলে গেলেন। আম আদমি পার্টি কতটা তার মোকাবিলা করতে পারবে, সেটাই দেখার বিষয়।