করোনাভাইরাস মোকাবিলায় 'দুর্বলতা ও ঘাটতি' ছিল: চীন

চীনের উহানে পথচারীরা মাস্ক পরে চলাচল করছে। ছবি: এএফপি
চীনের উহানে পথচারীরা মাস্ক পরে চলাচল করছে। ছবি: এএফপি

নতুন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় ‘দুর্বলতা ও ঘাটতি’ থাকার কথা স্বীকার করেছেন চীনের শীর্ষ নেতারা। চীনের পলিটব্যুরো স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর নেতারা এই স্বীকারোক্তি দেন। কমিটি চীনের জরুরি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি উন্নত করার আহ্বান জানিয়েছে। কমিটি অবৈধ বন্য প্রাণীর বাজারের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযানেরও নির্দেশ দিয়েছে। বৈঠকটির সভাপতিত্ব করেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং।

ধারণা করা হচ্ছে, নতুন করোনাভাইরাস প্রথমে বন্য প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়েছে। এখন তা মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ইতিমধ্যে এই ভাইরাসে আক্রান্ত মৃতের সংখ্যা ৪২৫ জনে দাঁড়িয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে ২০ হাজার।

চীনের শাসক দল কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়নার শীর্ষ নেতাদের নিয়ে পলিটব্যুরোর স্থায়ী কমিটি গঠিত। ঐতিহাসিকভাবে ৫ থেকে ১১ জন সদস্যকে নিয়ে এই কমিটি গঠিত হয়। বর্তমানে এর সদস্যসংখ্যা ৭। দেশটির বড় বড় ইস্যুতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের এই কমিটির। দলের গঠনতন্ত্র অনুসারে কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক পলিটব্যুরো স্থায়ী কমিটির সদস্য হবেন। দলটির সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন সি চিন পিং।

চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়ায় প্রকাশিত পলিটব্যুরোর স্থায়ী কমিটির বৈঠকের প্রতিবেদনকে তুলে ধরে আজ মঙ্গলবার বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়েছে, বৈঠকটির সভাপতিত্ব করেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। বৈঠকে বলা হয়, চীনের শাসন পদ্ধতির জন্য এটা ‘বড় পরীক্ষা’। এ থেকে শিক্ষা নিতে হবে। এই মহামারি মোকাবিলা করতে গিয়ে দুর্বলতা ও ঘাটতিগুলো বেরিয়ে এসেছে, আমাদের জাতীয় জরুরি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির অবশ্যই উন্নতি করতে হবে এবং জরুরি ও বিপজ্জনক কর্মকাণ্ডের ব্যবস্থাপনায় আমাদের সক্ষমতার উন্নতি করতে হবে। বাজার তদারকি ব্যবস্থাও শক্তিশালী করতে হবে, অবৈধ বন্য প্রাণীর বাজার ও ব্যবসা দৃঢ়ভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে এবং কঠোর অভিযান চালাতে হবে। উহানকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আরও মেডিকেল স্টাফ সেখানে পাঠানোর কথাও বলেছে কমিটি।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে চীন সরকারের প্রাথমিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। প্রাদুর্ভাবের শুরুতে ভাইরাসটির ভয়াবহতা চাপা দেওয়ার ঘটনায় কর্মকর্তাদের দোষারোপ করা হচ্ছে। কোনো কোনো ঘটনায় খবর ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ করা হয়েছে।

যে শহর থেকে ভাইরাসটি ছড়ায়, সেই হুবেই প্রদেশের উহান শহরের একজন চিকিৎসক এ মাসের শুরুতে প্রাদুর্ভাব সম্পর্কে তাঁর সহকর্মীদের সতর্ক করার চেষ্টা করে বিপাকে পড়েছিলেন। ‘ভুয়া মন্তব্যের’ অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। পুলিশ তাঁকে ‘অবৈধ কর্মকাণ্ড’ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল। অথচ জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে সরকারকেই ভাইরাসটি নিয়ে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। হুবেই প্রদেশে যাতায়াতে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়।

গতকাল সোমবার চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন জানিয়েছে, নতুন করে আরও ৬৪ জন মারা গেছে। তারা সবাই হুবেই প্রদেশের। করোনাভাইরাস এখন বিশ্বের ১৫০টির বেশি দেশে দেখা গেছে। এর মধ্যে চীনের বাইরে ফিলিপাইনে প্রথম এই ভাইরাসে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

আজ হংকং জানিয়েছে, সেখানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম একজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। মারা যাওয়া ব্যক্তি ৩৯ বছর বয়সী আরটিএইচকে ব্রডকাস্টার। গত ২১ জানুয়ারি তিনি উহানে গিয়েছিলেন এবং পরে অসুস্থ হয়ে পড়েন। করোনাভাইরাস আক্রান্ত হলে অসুস্থতা শুরু হয় জ্বর দিয়ে, পরে শুকনা কাশি হয় এবং তা থেকে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।

গতকাল এক চীনা ভাইরাস বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, বাদুড় করোনাভাইরাসের উৎস হতে পারে।